শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

খোরশেদের পর লাইভে শিউলি

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২১  

করোনায় ফ্রন্টলাইনার হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে নাসিক কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খোরশেদ ‘বীর বাহাদুর’ খেতাব পেয়েছিলেন। করোনার দ্বিতীয় ওয়েব মোকাবেলায় সারাবিশ্ব যখন আবারো হিমশিম খাচ্ছে তখন খোরশেদকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে আরো এক সমস্যা। দু’দিন আগে শনিবার নিজের স্ত্রী লুনাকে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে খোরশেদ দাবি করেছেন বছরখানেক আগে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিতে আসা এক নারী তাকে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন, ওই নারী তার পুরো পরিবারের জীবন অতিষ্ট করে ফেলছেন।

 

খোরশেদের ১৯ এবং ১১ মিনিটের ফেসবুক লাইভের ভিডিও দুটি যখন ওই টক অব দ্যা কান্ট্রি। ঠিক ওই মুহুর্ত্বে সুদূর দুবাই থেকে ২৫ এপ্রিল রাতে আলোচিত সেই নারী সায়েদা শিউলি ফেসবুক লাইভে এসে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। আর তাতেই নগরবাসীর মুখে মুখে এখন  খোরশেদ এবং তার বিয়ে বিত্তান্ত। সূত্র জানিয়েছে, সায়েদা শিউলি নামে ওই নারী আই-মা গ্রুপ অব কম্পানিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর, বাংলাদেশ সিএনজি অনার্স এসোসিয়েশন নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জের সভাপতি।তিনি ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিবিসিআই এবং বিজিএমইএ’র সদস্য।


সায়েদা শিউলি নামে ওই নারী ফেসবুক লাইভে বলেন, নাসিক ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমার বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা অপপ্রচারগুলো করেছে তার জন্যই কিছু বলার জন্যই আমি লাইভে এসেছি। নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে ওই নারী বলেন, ২০০৩ সালে আমি প্রথমে ব্যবসা শুরু করি, ২০০৫ সালে ট্রেড লাইসেন্স করি। আমার ব্যবসায় ইনভেস্টমেন্টের টাকা আমার বাবা, ভাই- বোন, আত্মীয়-স্বজনরাই দিয়েছে।পরবর্তীতে ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পরিশ্রম ও দক্ষতার দরুণ আজকের অবস্থানে পৌঁছেছি। একটি গ্রুপ অব কোম্পানি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। আমার কোম্পানি এনার্জি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করা হয়।


কাউন্সিলর খোরশেদের লাইভ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তিনি তার লাইভে বলেছেন আমি তাকে বিয়ে করার জন্য উনার বাসায় কাজী নিয়ে গেছি! আমি একজন মহিলা, যার রাজনৈতিক কোন ব্যাকগ্রাউন্ড নাই। উনার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড আছে এবং উনি পাওয়ারফুল একজন কাউন্সিলর। তিনি করোনা হিরো হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। উনার মতো একজন লোককে আমার মতো একজন মহিলা কাজী নিয়ে বিয়ে করার এতো বড় ধৃষ্টতা আমি কিভাবে রাখি সেটি তাঁর কাছে,নারায়ণগঞ্জবাসী ও সাংবাদিকদের কাছেই প্রশ্ন রাখি। এসব কি মুর্খতার শামিল নয়, যার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই, সাধারণ একজন ব্যবসায়ী তাঁর বাড়িতে কাজী নিয়ে হাজির হয়েছে। 


সায়েদা শিউলি দাবি করে বলেন, সে (কাউন্সিলর খোরশেদ) বিয়ে করেছে এটা ১ হাজার পারসেন্ট সত্যি। কাকে বিয়ে করছে আমি সেটা নারায়ণগঞ্জবাসী ও সাংবাদিকদের ডকুমেন্ট সহকারে প্রোভাইড (সরবরাহ) করবো।  তিনি বলেন, উনার আমার ব্যাপারে এতো প্রবলেম ছিল তাহলে আমি যখন দেশে ছিলাম তখন তিনি কেন এগুলো উত্থাপন করলোনা। 


দেশের বাইরে অবস্থান প্রসঙ্গে ওই নারী ফেসবুক লাইভে কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, ইন্টারন্যাশনাল স্কেট সোর্সেস বিডির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দুবাইতে কাজ থাকায় এখানে আসতে হয়েছে। গত ২০ তারিখে আমার মাতুল্য বোন যিনি আমাকে লালন পালন করেছে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এই দুঃখ ও কষ্ট বুকে জমা রেখে আমি এদেশে (দুবাই) কাজের জন্য এসেছি। আমার তিনটি শিশু বাচ্চা যাদের বাবা নেই, যারা এতিম। 


ওই নারী অভিযোগ করেন, কাউন্সিলর খোরশেদ  ও তাঁর স্ত্রী দিনের পর দিন আমাকে বিরক্ত করে চলেছে। বিভিন্নভাবে আমাদের হ্যারেজমেন্ট করছে। কখনো র‌্যাবের কাছে যায়, কখনো পুলিশের কাছে যায়, সমাজের গণমান্য নেতাদের কাছে যায় কিন্তু কোথাও তার কোন কথাই আমার যুক্তি এবং ডকুমেন্টের কাছে জিততে পারেনা। সে হেরে যায়। হেরে যাওয়ার পর নতুন নতুন একটা করে প্রোগ্রাম সৃষ্টি করে। কোন পত্রিকায় তাঁর সম্পর্কে কি লেখা হয়েছে সেটি আমি নিজেও জানিনা। আমি বুঝি এটা তার একটা নতুন চাল। নতুনভাবে আমাকে ফাঁসানোর জন্য আমার পিছনে লেগেছে।


ওই নারী বলেন, সে (খোরশেদ) যে বিয়ে করছে আমি হাজার বার ডকুমেন্টস দিয়ে প্রমাণ করে দিবো। সে বিয়ে করছে এবং কাকে করছে আমি বাংলাদেশে এসে প্রমাণ করে দেবো। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে আমি কয়েকটা দিন সময় চাই দেশে ফিরে আসা পর্যন্ত। দেশে আমার অসহায় বাচ্চাগুলোকে রেখে এসেছি তাদেরকে আপনারা একটু লুক আফটার(যতœ করে দেখে) রাখবেন। এদিকে মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ যুগের চিন্তাকে জানান, আমার এবং আমার পরিবারের সদস্যদের নিরপত্তা চেয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় জিডি করা হয়েছে অনেক আগেই। এছাড়া পুলিশ, র‌্যাবের কাছেও এব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দেয়া আছে।

   
এরআগে অশ্রুসিক্ত নয়নে স্ত্রীকে নিয়ে ২৪ এপ্রিল রাত ৮টায় নিজ ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন খোরশেদ। এক নারী খোরশেদকে বিয়ে করার জন্য নানাভাবে উত্ত্যক্ত করছে। সমস্যায় এপর্যন্ত গড়িয়েছে সাথে কাজী নিয়ে খোরশেদের বাড়িতেও চলে আসে। ওই নারীর বিড়ম্বনায় জীবন অতিষ্ট খোরশেদ পরিবারের। 


লাইভে খোরশেদ বলেন, সকলের ভালোবাসায় আমরা গোটা পরিবার সিক্ত হয়েছি, সম্মান পেয়েছি। আমি ব্ল্যাক মেইলিং এর শিকার হয়েছি সেটি জানাবার জন্যই আমি ফেসবুক লাইভে এসেছি।  খোরশেদ বলেন, একজন মহিলার ব্যাপক ব্ল্যাক মেইলিং এর জন্য পুরো পরিবার যন্ত্রণায় ভুগছি। ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে, গতবছর আমি আর আমার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হবার পর অক্সিজেনের সংকটটি বুঝতে পারি। তখন থেকে ফ্রি অক্সিজেন দেয়া শুরু করি।

গণমাধ্যমে এক মহিলা সংবাদটি পেয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করে জুনের শেষে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার হস্তান্তর করে। জুলাইয়ের শুরু থেকে ফেসবুকে এড. হয়ে আমার সাথে ফেসবুক মেসেঞ্জারে কথা বলা শুরু করেন। কিছুদিন পর আমি তার মোটিভ বুঝতে পারি, এরপর থেকে তাকে এড়িয়ে চলবার চেষ্টা করি। তখন থেকে প্রশাসনিকভাবে এবং দেশের উচ্চ পর্যায়ের বড় বড় ব্যক্তিদের পরিচয় দিয়ে হুমকি ধমকির মাধ্যমে কথা বলাবার জন্য বাধ্য করে। ওই নারীর তিন সন্তানের মধ্যে বড় দুই সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। তার এক ছেলেকে তার মার ব্যাপারে জানাই। তখন তার ছেলেও আমাকে বলে এগুলো দুষ্টুমির ছলে বলে। এরপরেও যখন কোন কাজ না হওয়ায় ওই নারীর এক ভগ্নিপতিকে নভেম্বর ডিসেম্বর থেকে অভিযোগগুলো জানাই। এতে ওই নারী আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।এবিষয়ে আমি আমার স্ত্রীকেও জানাই। যে ওই নারী আমাকে বাধ্য করছে তার সাথে নিয়মিত কথা বলতে, সম্পর্ক রাখতে।


খোরশেদ ১৯ মিনিটের ভিডিওতে বলেন, আমার স্ত্রীকে জানানোর পরও আমি হয়তো বিষয়টির গুরুত্ব ঠিকভাবে বুঝিয়ে বলতে পারিনি। ২১ জানুয়ারি ওই নারী কাজী নিয়ে আমার বাড়িতে এসে ওঠে। উদ্দেশ্য আমাকে নিয়ে গিয়ে আমাকে বিয়ে করবে। তখন আমার স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন তাকে কাজীসহ গাড়িতে আটকায়। এবং বলে দেয় এগুলো কোনভাবেই সম্ভবনা। খোরশেদ বলেন, এরপর থেকে ওই নারী আমার জীবনটিকে বিষিয়ে তুলেছে। আমার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের সকল জায়গায় ওই নারী যাচ্ছে,আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছেও গিয়েছে। কিন্তু কেউ ওই নারীকে উপেক্ষা করেছে।  ওই নারী কখনো বলছে,তার বান্ধবীকে বিয়ে করেছি,কখনো বলছে তার ছোট বোনকে বিয়ে করেছি, কখনো বলছে তাকে বিয়ে করেছি। আমার সাথে তার ম্যাসেঞ্জারের কথোপকথোনের বিষয়টিকে সামনে এনে বিভ্রান্ত করে। সবাই যখন ওই নারীকে বিয়ের কাবিন দেখাতে বলে তখন ওই নারী ২৪ ঘন্টা ৪৮ ঘন্টা সময় নিয়ে এসে আর যোগাযোগ করেনা। খোরশেদ বলেন, সম্মানকে ভয় পাওয়ার কারণে ওই নারী ব্ল্যাক মেইলিং করে এতোদূর এসেছে। আমি ধৈর্য্য ধরেছি। দেশের মানুষ আমাকে অনেক ভালোবাসা, সম্মান দিয়েছে। তাই সমস্যাগুলো বলার চেষ্টা করছি।

 
খোরশেদ লাইভে বলেন,  আমি লজ্জিত, ওই নারীর পাতা ফাঁদে পা দেয়ার জন্য। আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ২১ জানুয়ারির পর থেকে  আমার স্ত্রী ও আমাকে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমাদের জীবন বিপর্যন্ত করে ফেলেছে। আমাকে হত্যা করার কথা বলেছে, আমাকে তাঁর স্বামী পরিচয় দিয়ে পাসপোর্ট করবে এমন হুমকি দিয়েছে। এগুলোর প্রমাণ আমার কাছে আছে। আমার পরিবারের লোকজনকে বিরক্ত করছে। আমার স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করবে, আমার ছেলে নকীবকে হত্যা করবে বলে হুমকি দিয়েছে। একের পর এক হুমকি দেয়ার কারণে আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়ে রেখেছিলাম ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে। নারীঘটিতবিষয় বলে আমি মুখ খুলিনি।


খোরশেদ বলেন, ওই নারীর অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। খবর বেড়িয়েছে, আমি দুই স্ত্রীর গ্যাড়াকলে আছি। আমি আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। আজ সবাইকে অবহিত করলাম। ফেসবুকে চ্যাটিং করলেই কি তাকে বিয়ে করতে হবে। আসলে ওই নারীর উদ্দেশ্যটা কি? এতোভাবে তাকে বুঝিয়ে বলার পর, এভোয়েড করার পর কেন তাকে বিয়ে করতে হবে।  আপাতত দুটি বিষয় পেয়েছি, সেটি হচ্ছে আমার ভাই সাব্বির আলম খন্দকারে মার্ডার কেসে তার এক ছোট ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো।  সে আমাদের এজহারভুক্ত আসামী ছিলনা, কিন্তু পুলিশ তদন্তে গিয়ে তাকে গ্রেফতার করেছে। ওই সময় আমার কাছে তদবীরের জন্য আসলে আমি নাকি তাকে খারাপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিয়েছিলাম। আরেকটি বিষয় , ওই নারী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের থেকে ডনচেম্বারে একটি জায়গা বরাদ্দ পেয়েছিলো কিন্তু রাজউকের সাথে মামলায় সিটি করপোরেশন মামলায় হেরে যাওয়ায় ওই জায়গার মালিককে জায়গা ফেরত দিয়েছে রাজউক। ওই জায়গাটি আমার ওয়ার্ডে হওয়ায় ওই নারীর ধারণা জায়গাটি ছুটে যাওয়ার পেছনে আমার হাত রয়েছে। কিন্তু আসলে এসব ব্যাপারে আমি জানিনা। 


খোরশেদ বলেন, ওই নারী চাকু ঠেকিয়ে ছিনতাইয়ের মতো করে আমার সাথে সম্পর্ক করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এখানে উদ্দেশ্য কি? এর উদ্দেশ্যর কারণটা জানতে চাই। ফেসবুকে কথা বলার কারণে এখন ওই নারীকে বিয়ে করতে হবে?  মানুষ কত সহ্য করতে পারে। ৬ মাস ধরে ওই নারীর অত্যাচারে আমার বাড়ি একটা মরা বাড়িতে পরিণত হয়েছে। কিছুদিন আমার বাচ্চাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে পেরেছিলাম। আমার মনে হয়, ওই নারীর সাথে তেল চোরদেরও একটা সখ্যতা রয়েছে।  
 

এই বিভাগের আরো খবর