বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গীবতের ছবক দিয়ে গীবত  

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০২১  

# পত্রিকার নাম বলবোনা, আমেরিকায় যাওয়া নিয়ে খামাখা উল্টাপাল্টা কথাবার্তা লিখলো 
 

মাসদাইরে একটি মসজিদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বরাত দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর প্রতি ইঙ্গিত করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান বলেছেন,  আল্লাহর ঘর মসজিদ ওপেনিং করতে গিয়ে মানুষের গীবত গায়। গেলাম আল্লাহর ঘর প্রতিষ্ঠা করার জন্য, আল্লাহ সবচেয়ে বেশী অপছন্দ করেন গীবত গাওয়া।

 

কোরআনে বলা আছে যে, যে গীবত গাইলে সে যেন আমার মাংস খায়, আল্লাহর রাসুল বলতেছে। সেইখানে আল্লাহর ঘর ওপেনিং করতে গিয়ে বলে আমি করলাম। আমি যে আজকে এখানে এগুলো করতেছি এগুলো কি আমার বাবার টাকা ? না। আপনাদের জিনিসই আপনাদের কাছে ফেরৎ দেয়া হচ্ছে। শুধু আমরা মধ্যখানে সমন্বয় করতেছি। ব্রিজের মতো একটা। কেউ কারো বাবার টাকা না যে, আমি এটা করে দিচ্ছি, রাস্তা করে দিচ্ছি। আমি করে দিচ্ছি কি? বাপ-দাদার লুট করা টাকা? এটাতো ’৭৫ এর পরের লুটের কারো টাকা না যে, কারো টাকা দিয়ে কেউ করে দিচ্ছে। আমরা জনগণের ট্যাক্সের পয়সা দিয়ে যেটা করে সেটা করতেছি। আর একটা মানুষ বলতে পারে যে আমি করতেছি, সেটা কে ? প্রধানমন্ত্রী বলতে পারে যে আমি করতেছি। কেন ! সারা বিশ্বের কাছে চেয়ে, হাত পেতে, আরজ করে মানুষের কাছে বিভিন্ন জায়গায় নিজে সরাসরি টেলিফোন করে আজকে টিকার ব্যবস্থা করতেছেন, অর্থের ব্যবস্থা করতেছেন।

 

গতকাল বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় গরীব-অসহায় মানুষদের ত্রাণসামগ্রী বিতরণী অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান এসব কথা বলেন। ফতুল্লার মানুষ যখন জলজটে ভোগান্তি পোহাচ্ছে তখন আমেরিকায় বিলাসবহুল প্রমোদতরীতে করে স্ট্যাচু অব লিবার্টি যাওয়া প্রসঙ্গে এমপি শামীম ওসমান বলেন, আমি দেশের বাইরে গেছিলাম আমার শ্বশুর খুব অসুস্থ, দোয়া কইরেন, কালকে শুনলাম আবারও অবস্থা খারাপ হইছে। দোয়া করবেন। আমার স্ত্রীকে নিয়ে গেছিলাম, এই কয়েকটা দিন ছিলাম না, না থাকার কারণে দুই একটা মিডিয়া আছে নারায়ণগঞ্জে আমি নাম বলবো না, উল্টাপাল্টা কথাবার্তা লিখলো, কিন্তু সমস্যার সমাধান কেউ করলো না। আমি ছাড়াওতো মানুষ আছে সমাধান করার জন্য। সিদ্ধিরগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে পড়ে।

 

তাদের সমাধান করা উচিৎ ছিল। প্রশাসন আছে, সবাই আছে। আমি সাংবাদিকদের সাথে আলাপ করলাম, তারা বারবার সাহায্য করছে। আমরা গত রোববার মিটিংয়ে বসছিলাম, আজকে হলো মঙ্গলবার। এই কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সবায় মিলে যেমন লালপুর, এইসব জায়গায় নিজেদের পকেটের টাকা খরচা করছে, সেনাবাহিনী কাজ করছে পনিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করছে, আমাদের জেলা প্রশাসক অত্যন্ত ভাল মানুষ, ওনি কাজ করতেছেন, ইউএনও কাজ করতেছে, এসিল্যান্ড কাজ করতেছে, সবাই কাজ করতেছে। পাগলের মতো চেষ্টা করে পানিবন্দি হয়ে গেছে। আজকে কিন্তু আল্লাহর রহমতে ম্যাক্সিমাম জায়গায় পানি থেকে মুক্ত হয়ে গেছে।

 

আমি আশা করতেছি, গতকালও সেনাবাহিনীর সাথে আমার কথা হয়েছে, আল্লাহ রহমানুর রহিম, এখান দিয়ে একটি ক্যানেল করতেছে, আরেকটা ক্যানেল করতেছে পাগলা দিয়ে, এই দুইটা যদি ক্যানেল করা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জে ক্যানেল করে মোটর চালু করে দিয়েছে, ইনশাঅল্লাহ যদি এটা হয়ে যায়, আমার মনে হয় আগামী দুই একদিনের মধ্যে আর কোন জায়গায় পানি থাকবে না। কিন্তু উদ্যোগতো কেউ নিল না, কথা বলে অনেকেই, উদ্যোগ কেউ নেয় না।
 
 
করেনা ও করোনার টিকা প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, আমাদের টিকার সমস্যাই হতো না ভারতে যদি এমন ব্যাপক ধরণের করোনা না হতো। হয়ে যাওয়ার পর আটকে গেছে, এটা নিয়ে কত সমালোচনা। কিন্তু ওনি যে পরে আনতাছেন, আশা করতেছি এই মাসের মধ্যে আগস্ট মাসের মধ্যে আরো দুই কোটি টিকা চলে আসবে ইনশাআল্লাহ। এবং এই বছরের মধ্যে দশ কোটি টিকা চলে আসবে। তিনি আরো বলেন, টিকা এসে গেলে আপনারা সবাই টিকা নিয়ে নিবেন। টিকা নিলেই যে আপনি সুস্থ্য হয়ে যাবেন, তা না কিন্তু।

 

তবে এইটুকু হয়ে, দেখতেছি অনেকেরই হচ্ছে, করোনা ভাইরাস হয়েছে তারপর টিকা নিয়েছে তারপরও কিন্তু আবার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু একটা জিনিসি হচ্ছে ঐভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না শরীরটা। অর্থাৎ যেখানে একশত পার্সেন্ট এফেক্ট হওয়ার কথা সেখানে দশ পার্সেন্ট হচ্ছে। এইটাই হচ্ছে কথা। তিনি বলেন, আমি সবার কাছে অনুরোধ জানাই, বিশেষ করে সাংবাদিক ভাইয়েরা, আপনারা জনসচেতনা মূলক কাজ করতেছেন, কষ্ট করতেছেন আপনারাও কভিডের মধ্যে অনেক পরিশ্রম করে কোথায় কি জনদুর্ভোগ এটা আপনারা উল্লেখ করেছেন। আপনাদের কারণেই এই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাটা করতে পেরেছি।

 

আমার মনে হয় নারায়ণগঞ্জের যারা সাংবাদিক আছেন টেলিভিশনের সাংবাদিক, জাতীয় পত্রিকার সাংবাদিক, লোকাল পত্রিকার সাংবাদিক আছেন, আপনারা বিভিন্নভাবে লিখেছেন কোথায় কি হচ্ছে, কোন জায়গা কে দখল করে রেখেছে। এই কারণে আমাদের সুবিধা হয়েছে ঐ জায়গাগুলোকে অবমুক্ত করার জন্য। আমি এই জন্য আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করছি আল্লাহ যেন তাদেরকে রহমত দেন। তিনি এ সময় আরো বলেন, আমি আবারো আপনাদের কাছে মাফ চাইলাম। আমি এমপি হয়ে আপনাদের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া চাচ্ছি।

 

এর আগে শামীম ওসমান বলেন, গতকালও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতির পিতার কন্যা প্রায় তিনহাজার দুইশত কোটি টাকা, যারা খেটে খাওয়া মানুষ তাদের জন্য বরাদ্দ করেছেন যাতে দেওয়া যায়। এখন আল্লাহ দুনিয়াতে আজাব দিয়েছেন, এই আজাবের সাথেতো আমাদের কিছু করার নাই। একটাই পথ আছে আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া। আমরা মনে হয় যে ঠিকমতো মাফ চাইতে পারছি না। এবং আল্লাহ রসুল যে সমস্ত কথা বলে গেছেন যে, যখন অসুখ বিসুখ আসে, যে সমস্ত নিয়মকানুন মেনে চলার জন্য, আমরা বোধ হয় সেটাও ঠিকমতো মানতাছি না।

 

আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনি থাকলে, আপনার বাচ্চারা আজকে হয়তো খারাপ অবস্থায় আছে, আগামীকাল ভাল থাকবে। হায়াত-মওয়্যুতের মালিক আল্লাহ। কিন্তু সুস্থ থাকা না থাকাটা অনেকটা আপনাদের উপর নির্ভর করে। আমারটা আমার উপর নির্ভর করে। যদি একটু মাস্ক পড়ে, দুরত্ব বজায় রেখে, হাত ধোয়া হয়, রোগটা যেভাবে আসছে, বিজ্ঞানীরা যেভাবে বলতাছে সেভাবে যদি আমরা চলি, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাংবাদিসহ আমরা সবাই যদি চলি, তাহলে যদি আল্লাহ দয়া করে আমাদের বাঁচায় রাখে। আর যদি মৃত্যু থাকে তাহলেতো মৃত্যু হবেই। আমি এজন্য ক্ষমা চাচ্ছি আপনাদের কাছে যে, আপনারা মনে করতেছেন যে, আমরা আপনাদের জন্য অনেক কিছু করে ফেলতেছি, আসলে তা নয়। আমরা শুধু আপনাদের একটা কথা বলতে চাই যে, আপনারা যে আমাদের কত বড় উপকার করতেছেন। এটা আপনাদের কল্পনার বাইরে।

 

একটা কথা উদাহরণ দেখাই, ধরেণ একজন তৃষ্ণার্ত মানুষ, তার অনেক পানি পিপাসা লাগছে, আপনি বইসা আছেন, আপনি দেখতেছেন যে একটা লোক পিপাসায় কাতরাচ্ছে, আপনি তাকে এক গ্লাস পানি দিলেন। পানি দেওয়ার পরে ঐ লোকটা পানি খাইলো, খাওয়া পরে যদি মুসলমান হয় তাহলে আলহামদুলিল্লাহ বললো। আপনি যদি আশা করেন যে, আপনাকে ধন্যবাদ বলবে, তাহলে কিন্তু আপনার কোন ছওয়াব নাই। ঐ লোকটাকে যদি বলা হয়, ভাই তোমাকে পানি দিল, তুমি তাকে ধন্যবাদ বললে না। ধন্যবাদটা কিন্তু যে পানি খাইছে সে বলবে না, যে পানি খাইয়েছে সে বলবে। কেন ? যে পানিটা খাইল, খাওয়ার পরে তার জানটার মধ্যে আরাম পাইল। এতে খুশি হইল, আল্লাহ খুশি হইলেন। আল্লাহকে খুশি করার জন্যই দুনিয়া। আমরা এখানে পরীক্ষা দিতে আসছি কয়েকদিনের জন্য।

 

এ সময় তিনি সরকারে পক্ষ থেকে, নিজের পক্ষ থেকে এবং জাতির পিতার কন্যার পক্ষ থেকে যাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যে এভাবে এখানে বসে একটি বস্তা ধরিয়ে দেয়া, যতটুকু সরকারে পক্ষে সামর্থ্য হয়েছে, তিনি বলেন, শুধু নারায়ণঞ্জ শুধু নারায়ণগঞ্জ না সারা বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন একটু অভাবে পড়ে গেছে। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর খুব সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু আপনারা না, স্কুল শিক্ষক পড়ছে, উকিল সাহেবরা পড়ছে, দোকানদাররা পড়ছে সমাজের এমন কোন শ্রেণি পেশার মানুষ নাই।

 

কিছু করার নাই, কারণ যে রোগটা আল্লাহ দিয়েছেন, আমার বিশ্বাস যদি আমরা সবাই আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করি, আল্লাহ কাছে মাফ চাই, আল্লাহ অবশ্যই মাফ করবেন। আমার বিশ্বাস যারা খেটে খাওয়া মানুষ পরিশ্রম করে খায়, যারা ঐ ধরণের মানুষ, যারা ইফতারের সময় ভাল ইফতার পায় না, সেহরীর সময় ভাল সেহরী পায় না, কিন্তু সেহরী করার পরে বলে আলহামদুল্লিাহ, ইফতারের সময় অল্প একটু মুড়ি খেয়ে রোজা ভাঙে, বলে আলহামদুলিল্লাহ। কিংবা হিন্দু, বৌদ্দ, খৃষ্টান যে ধর্মের লোকই হোক, যারা সৃষ্টিকর্তার উপর খুশি থাকে আল্লাহ তাকে কবুল করে নেন। আল্লাহ আমাকে সবই দিছে, আমার অবস্থা আপনাদের তুলনায় ভাল, আমার চেয়ে আপনাদের দোয়া আল্লাহ কবুল করবেন।

 

তাই একটু দোয়া আপনাদের কাছে ভিক্ষা চাই। আমার জন্য চাই না, ভিক্ষা চাই যিনি মানুষের জন্য করতেছেন জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার জন্য। ছোট একটা দেশ, সতের কোটি মানুষ, আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল না। তারপরও গত দেড়টা বছর হয়ে গেল ওনি কন্টিনিয়াসলি চেষ্টা করতেছেন যেন মানুষ ভাল থাকে। এ সময় আফসোস করে বলেন, মানুষের মুখে মাস্ক নেই কিছু না, যদি আপনার কিছু হয়ে যায়, আপনি যদি মরে যান আপনার বাচ্চা-কাচ্চা দেখবে কে? এটা একটু চিন্তা করেন বিবেচনায় নেন। এবং আপনি যাদের চিনেন, তাদেরকেও বলেন, নিয়মটা মাইনা চলেন। এইটুকু অনুরোধ, আর এই মহিলা যিনি তার বাবা-মা, ভাই সবকিছু হারাইয়া, দুনিয়াতে তার কেউ নেই, একটা বোন ছাড়া আর নিজের সন্তানরা ছাড়া।

 

তিনি বলেন, এই করোনাটা না হইলে আমরা একটা জায়গায় চইলা গেছিলাম। যা ই হোক, আল্লাহ সারা পৃথিবীতেই এই রোগ দিছেন সারা পৃথিবীর অবস্থাই খারাপ, শুধু বাংলাদেশের অবস্থা খারাপ না। এখন সবাই কাজ করতেছে, আমরা কাজ করতেছি, দলের নেতারা কাজ করতেছে, ইউএনও নারী মানুষ দিনরাত পরিশ্রম করতেছে। এই সময় তিনি বিভিন্ন বিভাগের নাম উল্লেখ করে বলেন, সবাই পরিশ্রম করতেছেন। রাস্তায় দাঁড়াইয়া বলতেছেন ভাই মানেন, মানেন, কার জন্যে বলতেছে? তারা নিজের স্বার্থের জন্য বলতাছে না, আপনার স্বার্থের জন্য বলতাছে। মানুষ অনেক সময় রাগ করে, আরে ভাই এমন করে কেন? কেন লাঠি নিয়ে দৌড়ায়? এই জন্য করতাছে যেন মানুষগুলো সুস্থ থাকে।

 

এ সময় তিনি আবারো ক্ষমা চেয়ে বলেন, আমার কাছে খুব খারাপ লাগে, যখন মানুষকে আমি দেখি, সেইদিন খুশি হবো যেই দিন সাহায্য করার জন্য একটা মানুষও পাবো না। সবাই বলবে আমার সাহায্যের দরকার নাই, আমি নিজেই নিজেক সাহায্য করার ক্ষমতা রাখি। আল্লাহর কাছে সেই দোয়া করি, যেন সাহায্যের জন্য লোক খুঁজে না পাই। আল্লাহ যদি শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রাখেন তাহলে ইনশাআল্লাহ এইদিন আসবে একদিন। সবাই মিলে কাজ করলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। আমি দেশের বাইরে গিয়েছিলাম, আমার শ্বশুর খুব অসুস্থ দোয়া করবেন।
 

এই বিভাগের আরো খবর