শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

মানবিক বিয়ে রূপ নিলো ধর্ষণে

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১ মে ২০২১  

 মামুনুল হক। ইসলামী বক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। ছিলো অনেক ভক্তকূল। এছাড়া মামুনুল আলোচনায় আসেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে। চলতি মাসের ৩ মার্চ তিনি এক নারীসহ সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্টে অররুদ্ধ করেন স্থানীয়রা। সাথে ছিলেন জান্নাত আরা ঝর্ণা নামে এক নারী। অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় মামুনুল হক জানায়, সাথে থাকা নারী জান্নাত তাঁর বিবাহিত দ্বিতীয় স্ত্রী।

 

 ওই নারীও জানায়, স্বামীর সাথে ঘুরতে বেড়িয়ে তারা অবকাশ কাটাতে এই রিসোর্টে এসেছেন। ওই নারীর সাথে সম্পর্ক ও বিয়ে নিয়ে এই ঘটনা তখন সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। ওখান থেকে রেহাই পাওয়ার পর ঘটনা প্রবাহে যখন আলোচনা সমালোচনার ঝড় তারপর মামুনুল হক তার ফেসবুক পেইজে ওই নারীর সাথে বিয়ে প্রসঙ্গে লিখেন, এটি তার ‘মানবিক বিয়ে’। মামুনুল হকের ‘একটি মানবিক বিয়ের গল্প’ নামক স্ট্যাটাসটিও ভাইরাল হয়।

 

 ইতিমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে কেন্দ্র করে গত ২৬-২৮ মার্চ  সারাদেশে চালানো হেফাজতের তা-বের ঘটনায় শক্ত অবস্থানে যায় সরকার। হেফাজতের তা-বের ঘটনায় দায়ের করা বেশ কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার করা হয় মামুনুুল হককে। এদিকে নিখোঁজ হয়ে যান মামুনুলের মানবিক বিয়ের দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা। কোথাও ওই নারীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলনা। ঝর্ণা কোথায় আছেন, কেমন আছেন এমন কোন খবর তাঁর পরিবার, ছেলে কেউ বলতে পারছিলনা।  

 


 মেয়ের জান্নাত আরা ঝর্ণার খোঁজে থানায় ২৬ এপ্রিল রাজধানীর কলাবাগান সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তাঁর বাবা মো. ওলিয়ার রহমান।  অভিযোগে ওলিয়ার রহমান বলেন, মামুনুল হকের অপকৌশলে ঝর্ণার প্রথম সংসার  ভেঙে যায়। সেই সংসারে দুটি সন্তান রয়েছে। একপর্যায়ে জীবনের তাগিদে কাজের সন্ধানে ঝর্ণা ঢাকায় আসে। উত্তর ধানমন্ডির একটি বাসায় ঝর্ণা বসবাস করছিলেন বলে তাঁকে জানানো হয়।

 

 জিডিতে তিনি বলেন, গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ঘটনার পর তিনি জানতে পারেন, তাঁর মেয়েকে ইসলামি শরিয়তের বিধান  মোতাবেক বিয়ের প্রভোলন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেন মামুনুল হক। ওই ঘটনার পর তিনি তাঁর  মেয়ের ঢাকার ঠিকানায় হাজির হয়ে তাঁকে পাননি। ওলিয়ার রহমান মনে করেন, মামুনুল হকের লোকজন তাঁর  মেয়েকে অপকৌশল প্রয়োগ ও ভয়ভীতির মাধ্যমে অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখেছেন। 


এরআগে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে তার বড় ছেলে আবদুর রহমান ১০ এপ্রিল রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।। একই সঙ্গে আবদুর রহমান জিডিতে নিজের নিরাপত্তা চান।  মায়ের খোঁজ চেয়ে করা জিডিতে ঝর্ণার বড় ছেলে উল্লেখ করেন, ‘বেশকিছু দিন ধরে মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে সপ্তাহখানেক আগে বাগেরহাট  থেকে ধানমন্ডিতে তার মায়ের বাসায় আসেন। ওই বাসার মালিক আব্দুর রহমানকে জানান, তার মা (জান্নার আরা ঝর্ণা) ৩ এপ্রিল বাসা থেকে বের হওয়ার পর আর ফেরেননি। পরে আব্দুর রহমান মায়ের বাসায় প্রবেশ করে  সেখান থেকে ঝর্ণার লেখা তিনটি ডায়েরি পান।


জিডিতে আব্দুর রহমান আরো উল্লেখ করেন, মায়ের খোঁজ না পেয়ে ডায়েরিগুলো নিয়ে তিনি শনিবার (১০ এপ্রিল) বাড়ির পথে রওনা হন। পল্টন এলাকায় পৌঁছালে তার মনে হয়, অজ্ঞাত লোকেরা তাকে অনুসরণ করছেন। এ অবস্থায় তার নিজের ও তার মায়ের নিরাপত্তা এবং ডায়েরিগুলোর সংরক্ষণের বিষয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়লে তিনি থানায় ডায়েরির আবেদন করেন।


ছেলে ও বাবার দায়ের করা জিডির পর ৩০ এপ্রিল মামুনুল হকের মানবিক বিয়ের দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণা আত্মপ্রকাশ করেন। এবং সোনারগাঁ থানায় এসে জানান, মামুনুল হক তাকে বিয়ে করেননি, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ের আশ্বাসে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন মামুনুল হক। তিনি জিডিতে বলেন, সর্বশেষ ৩ এপ্রিল মামুনুল হক তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। 


মামলা দায়েরের পর ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী জান্নাত আর ঝর্ণা জানান, বড় ধরণের প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। তার সরলতার সুযোগ নিয়ে তিনি (মামুনুল হক) আমার সঙ্গে অন্যায় করেছে। অনেক দিন ধরে প্রতারণা চালিয়ে গেছেন। সর্বশেষ আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে  জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। আমি রাষ্ট্রের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই।’


গত ৩ এপ্রিল রয়েল রিসোর্টে নারীসহ অবরুদ্ধ হওয়ার পর মামুনুল হকের দাবি করা মানবিক বিয়ে শেষ পর্যন্ত রূপ নিলো ধর্ষণে। 
 

এই বিভাগের আরো খবর