শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪   শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

অতি কথনে বিষ ছড়াচ্ছে সোনারগাঁ আ.লীগে

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩  


সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগ অভ্যন্তরিন দ্ধন্ধ দীর্ঘদিনের। দীর্ঘদিন ধরে এখানে আওয়ামীলীগের এমপি না থাকায় অভ্যন্তরিন দ্ধন্ধ দিনে দিনে তীব্র আকার ধারণ করেছে। অপরদিকে এক এক নেতার বক্তব্যকে পুজি করে আরেক নেতা সেই নেতাকে ডুবাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ফলে দিনে দিনে নেতাদের অতি মাত্রার কথো কথনে বিষ চড়াচ্ছে উপজেলা আওয়ামীলীগে।

 

 

এতে করে দিনে দিনে দুরত্ব বাড়ছে আওয়ামীলীগ নেতা ও কর্মীদের মাঝে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন এখনই নেতাকর্মীরা তাদের মুখে লাগাম দিতে না পরলে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন কেউ পেলেও তার ভরাডুবি নিশ্চিত। জানা গেছে, ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নিবার্চন থেকে শুরু হয় সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের দ্ধন্ধ।

 

 

সে সময়ে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের একক নেতৃত্ব দিতেন প্রয়াত নেতা আবুল হাসনাত। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয়পার্টির এমপি আনম বাহাউল জাতীয়পার্টি ছেড়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করার পর থেকে উপজেলা আওয়ামীলীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

 

 

ফলে ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকার মনোনয়ন পেয়ে ও বিএনপির রেজাউল করিমের কাছে হেরে যান বাহাউল হক। সেই নির্বাচনে আবুল হাসনাত মনোনয়ন না পেয়ে সরাসরি নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। সেই থেকে উপজেলা আওয়ামীলীগে দেখা অভ্যন্তরিন দ্ধন্ধ।

 

 

এরপর আবুল হাসনাত অসুস্থ হয়ে পড়লে তার ছেলে সাবেক এমপি আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত আওয়ামীলীগের হাড় ধরেন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আগে তারা দুই প্রতিদ্ধন্ধ হলেও নির্বাচন যত ক্ষনিয়ে আসতে শুরু করে তখন কায়সার হাসনাতে চাচা মোশারফ কায়সার হাসনাতে বিপক্ষে গিয়ে মনোনয়ন দৌড় শুরু করেন।

 

 

তখন থেকেই আওয়ামীলীগ ভাগ হয় তিনটি ভাগে। যদি ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুই জনকেই পিছনে ফেলে নৌকার মনোনয়ন পান আবদুল্লাহ আল কায়সার। সে নির্বাচনে কায়সার প্রায় ৮২ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিমকে পরাজিত করে জয়লাভ করে। জয়ী হওয়ার বছর দুই পরেই খন্ড বিখন্ড হতে থাকে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগ।

 

 

এরপর থেকে শুরু করে বর্তমানে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগ ৮টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর একটি ভাগের নেতৃত্ব দেন সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত, আরেক ভাগের নেতৃত্ব দেন তার চাচাতো ভাই প্রয়াত এমপি মোবারক হোসেনের ছেলে এরফার হোসেন দীপ।

 

 

আরেক গ্রুপের নেতৃত্ব দেন এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুইয়া ও তার ছেলে মারুফুল ইসলাম ঝলক, এদিকে মাহফুজুর কালাম, ডাক্তার আবু জাফর চৌধুরী, এএইচএম মাসুদ দুলাল, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, দীপক কুমার বমিক সবাই একক ভাবে একটি ভাগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।

 

 

অপরদিকে কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশরফ হোসেন নতুন করে নৌকার প্রার্থী হয়ে আরেকটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এদিকে দিন যত যাচ্ছে এসব নেতা ও তার কর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরিন কোন্দল ততই তীব্র হচ্ছে। বিশেষ করে এক নেতার কথো কথন নিয়ে শুরু হয়েছে প্রকাশ্যে অন্য নেতার বাক যুদ্ধ।

 

 

গত কয়েকদিন আগে একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলে সাক্ষাতকার নিয়ে আওয়ামীলীগ নেতা বিরুর সাথে বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার শুরু হয় বাক যুদ্ধ। এ যুদ্ধ চলে বেশ কয়েকদিন। সেই বাক যৃদ্ধের রেশ কাটতে না কাটতেই গত বৃস্পতিবারের বিকেলে এক কর্মী সভায় আওয়ামীলীগের নেতাদের সমালোচনা করে বক্তব্য রাখের মাহফুজুর রহমান কালাম।

 

 

সেই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে গতকাল শুক্রবার দুপুরে লাইভে আসেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ রনি। লাইভে এসে তিনি মাহফুজুর রহমান কালামের বক্তব্যকে ইস্যু করে কালামকে উদ্দেশ্য করে আক্রমনাত্তক ভাষায় কথা বলেন যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

 

 

সোহাগের সেই বক্তব্য উপজেলা আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরিন দ্ধন্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা জানান, মোগরাপাড়ার রাজনীতি কিছুদিনের জন্য ঠান্ডা থাকলে সোহাগের বক্তব্যের পর তা আবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে।

 


রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, গত ১০ বছর ধরে সোনারগাঁয়ে কোন আওয়ামীলীগের এমপি নেই। জাতীয়পার্টির এমপি বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে টেনে আওয়ামীলীগ নেতাদের কোনঠাসা করে ফেলেছে। অপরদিকে আওয়ামীলীগের একাধিক বিভক্ত তাদের আরো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

 

 

অপরদিকে আওয়ামীলীগ নেতাদের বেফাস কথাবার্তা তাদের মধ্যে আরো দুরত্ব তৈরী করছে। এদিকে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে যখন সোনারগাঁয়ে নৌকার মনোনয়ন দেয়ার আশা দেখছে কর্মীরা সেই সময় নেতা কর্মীদের বেফাস কথা বার্তা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা ছাড়া আর কিছু নয়।

 

 

বিশ্লেষকরা মনে করেন নেতা ও তাদের কর্মীদের মুখে লাগাম দিতে হবে নয়তো আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে সোনারগাঁয়ে নৌকার মনোনয়ন আসলেও অতি উৎসাহী কর্মীদের জন্য নৌকার পরাজয় সোনারগাঁয়ে নিশ্চিত।   এন.হুসেইন রনী /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর