
দীর্ঘ ১৬ বছর দেশ শাসন করেছে আওয়ামীলীগ সরকার। এই সময়ে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের হর্তা কর্তাছিলেন তাঁরা। কখনো ভাবতেও পারেননি তাদের এই রাজত্ব এমন ভাবে হারাতে হবে। ভেবেছিলেন নারায়ণগঞ্জকে যেভাবে তারা শাসন করে যাচ্ছেন এমন ধারায় তাদের নাতি পুতিরা শাসন করে যাবেন। কিন্তু গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর নারায়ণগঞ্জের গড ফাদার ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান, জাতীয় পার্টির থেকে মনোনয়ন পাওয়া নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সাংসদ আওয়ামীলীগ নেতা কায়সার হাসনাত ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবুর আশায় গুড়ে বালি পড়েছে।
সেই সাথে তাদের বিশাল সন্ত্রাসীর সাম্রাজ্য মুখ থুবড়ে পড়েছে। সাম্রাজ্য থেকে রাতের আঁধারে অনেকেই পালিয়ে গেছেন। তারা পালিয়ে গেলেও তাদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষুদ্ধ মানুষ হামলা ও ভাংচূড় করেছে। তাদের অধিনস্ত সন্ত্রাসীদের বাড়িঘরেও হামলা চালিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছরের ক্ষোভ মিটিয়েছেন অনেকে। নারায়ণগঞ্জে প্রতিটি সেক্টরে সবচেয়ে বেশি অপকর্ম করেছেন সদর,বন্দর ফতুল্লায় শামীম ওসমান,সেলিম ওসমান,তাদের ভাতিজা নাসিম ওসমানের পুত্র আজমেরী ওসমান, রুপগঞ্জে গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার ছেলে পাপ্পা গাজীর বিরুদ্ধেও মানুষের উপর জোর জুলুমের অভিযোগ বিস্তর। অভিরেযাগ বাদ যায়নি জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ রিয়াকত হোসেন খোকা। এমন কোনো সেক্টর নেই যেই সেক্টরগুলোতে তারা অপকর্ম করেনি। দিন শেষে এখন নারায়ণগঞ্জের রথি মহারথীদের থলের কালো বিড়াল বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছেন।
শিল্প সহিত্য সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ। দেশের রাজনীতি থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক সেক্টরেও এই জেলার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। এই নারায়ণগঞ্জের যে অর্জণ এই অর্জণ মুষ্ঠিমেয় ক্ষমতালোভী নেতাদের কারণে অনেকটা ধুলিৎসাৎ হয়ে গেছে। এর মধ্যে শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যরা অনেকটা দায়ী। অপরাধের স্বর্গরাজ্য নামে যে কলঙ্কের কালিমা নারায়ণগঞ্জের ললাটে অঙ্কিত হয়েছে এর জন্যে শামীম ওসমান এ দায় থেকে নিজেকে এড়াতে পারবেন না। তার হাত ধরেই সদর,বন্দর,ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে কয়েক ডজন সন্ত্রাসীর জন্ম হয়েছে। জন্ম হয়েছে টেন্ডারবাজ। শামীম ওসমান নিজে তাদের শেল্টার দিয়ে নানা ধরনের অপরাধ সংঘঠিত করেছেন বলেও অভিযোগ বিস্তর।
এদের মধ্যে শাহ নিজামের নাম উল্লেখ্যযোগ্য। যিনি নম পার্কে বসে বসে ভুমি দস্যুতা থেকে শুরু করে নানা রকম অপরাধ সংগঠিত করতেন। সন্ত্রাসীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিতেন ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম সাইফ উল্লাহ বাদল ও সিদ্ধিরগঞ¦জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ইয়াসিন। শামীম ওসমানের আরেক ক্যাডার নিয়াজুল। যিনি হকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর দিকে অস্ত্র তাক করেছিলেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি শামীম ওসমানের শেল্টারে এলজিইডির ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন।
১৯৮৬ সালে এরশাদের সময় নাসিম ওসমান সাংসদ হলে নিয়াজুলের উত্থান হয়। ১৯৮৮ সালে সংঘটিত জোড়া খুনের (কামাল ও কালাম) মামলার আসামি ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে শামীম ওসমান সাংসদ নির্বাচিত হলে নিয়াজুল অস্ত্রের লাইসেন্স পান। নিজেকে যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে চলতেন তিনি। নিয়াজুলের আরেক ভাই সুইটও ছিলেন শামীম ওসমানের আরেক ক্যাডার। নজরুল ইসলাম ওরফে সুইট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন। ওই সরকারের আমলে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত যুবদলের নেতা মমিন উল্লা ওরফে ডেভিড নিয়াজুল ইসলামের আত্মীয়।এছাড়াও শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে,২০১১ সালের ১১ মে শামীম ওসমানের লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে শহরের খানপুরের তরুণ ব্যবসায়ী আশিক ইসলামকে তার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপরই নিখোঁজ হন আশিক ইসলাম। ১৩ মে শীতলক্ষ্যা থেকে উদ্ধার হয় আশিক ইসলামের লাশ। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় ছাত্রলীগ নেতা ফতুল্লার গাবতলী গ্রামের মিঠুকে। হত্যাকারীরা ওসমান পরিবারের অনুসারী বলে ব্যাপক প্রচার আছে। এলাকাবাসীর ধারণা, ফতুল্লার ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ওসমান পরিবারের অনুসারীদের সঙ্গে বিরোধের কারণেই নিহত হন মিঠু। ২০১২ সালের ১৭ জুলাই রাতের বেলায় নারায়ণগঞ্জের তরুণ নাট্যকার দিদারুল আলম চঞ্চল নিখোঁজ হন।
দুই দিন পর ১৯ জুলাই বন্দর উপজেলার শান্তিনগর পয়েন্টে শীতলক্ষ্যা নদীতে পাওয়া যায় চঞ্চলের লাশ। ওসমান পরিববারের আজ্ঞাবহ এক ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে বিরোধের জের ধরে চঞ্চল খুন হন বলে ধারণা করেন এলাকাবাসী। ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশেনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রফিউর রাব্বির ছেলে তানভীর মোহাম্মদ ত্বকী। ৮ মার্চ তার লাশ শীতলক্ষ্যা থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায়ও অভিযোগ ওঠে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে। এক পর্যায়ে ত্বকীর রক্তমাখা প্যান্ট-শার্ট উদ্ধার করা হয় আজমেরী ওসমানের টর্চার সেল থেকে। র্যাবের তদন্তেও ত্বকী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আজমেরী ওসমানের জড়িত থাকার তথ্য বেরিয়ে আসে।
ত্বকী নিখোঁজের পর ওই ঘটনার সঙ্গে ওসমান পরিবারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ করে আসছিলেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ নিহত ত¦কির বাবা রফিউর রাব্বি। তবে ক্ষমতার পালা বদলের পর পরই জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল নতুন করে তথ্য দেন জনতার কাছে সেখানে তিনি দাবী করেন, ত্¦কী হত্যার মাষ্টার মাইন্ড ছিলেন শামীম ওসমানে ক্যাডার শাহ নিজাম। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে রয়েছে অর্ধসহস্রাধিক গার্মেন্টসহ সহস্রাধিক শিল্প-কারখানা।
এসব কারখানায় চলে চাঁদাবাজি। গার্মেন্টে চলে ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা। এসব কিছুর সঙ্গেও জড়িয়ে আছে ওসমান পরিবারের সদস্যদের নাম। শুধু তাই নয়, সেভেন মার্ডারের সাথে ওসমান পরিবারের সম্পৃক্ততা নিয়ে জেলাব্যাপী মানুষের মনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। শামীম ওসমান প্রতু অয়ন ওসমানেরও রয়েছে একাধিক সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা জেলার বিভিন্ন সেক্টর দখল করে রেখেছিলেন
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ সেলিম ওসমান, তিনি তাঁর বড় ভাই নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর এই আসনে জাতীয় পার্টির হাল ধরোিছলেন। তবে তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না হলেও আপাদ মস্তক একজন ব্যবসায়ী। রাজনীতি করতে এসে তিনিও বেশ কিছু বিতর্কিত কর্মকান্ড করে গেছেন। ২০১৬ সালের ১৩ মে বন্দরের পিয়ার সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধন শিক্ষক শ্যামল দত্তকে কান ধরে উঠবস করান। এ নিয়ে দেশ ব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়েছিলো। প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ের ভিতরেই উপস্থিত জনতার সামনে কান ধরে উঠবস করতে বাধ্য করেছিলেন তিনি। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে পদত্যাগও করতে বাধ্য করেছিলেন সেলিম ওসমান।
তবে আদলতের নির্দেশে ভূক্তক্তভোগি শিক্ষক তার চাকরিতে পুনরায় বহাল হয়েছিলেন। পুরো নারায়ণগঞ্জকে ওসমান পরিবার তাদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে যখন যা কিছু করেছেন সবই বৈধ বলে মনে করতেন। অপরদিকে সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষকে হত্যাসহ নানা ধরনের অপরাধ করলেও এ ব্যাপারে সরকারী গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জেনো চোখে কালো কাপড় বেঁধে রেখেছিলেন। সরকার প্রধানও থেকেছেন নীরব। দীর্ঘ ১৬ বছরে আজমেরী ওসমান তার বাহিনীর দ্বারা যে অপরাধ করে গেছেন তা নিয়ে টু শব্দটি করার সাহস পাননি অনেকে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর আজমেরী গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে গেছে।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সাংসদ ছিলেন গোলাম দস্তগীর গাজী। এই গাজিরও রুপগঞ্জে রয়েছে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ। এই গ্রুপের কাজই ছিলো নীরীহ লোকজনদের বাড়ি,জমি দখল করা। নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে জিম্মি করে তিনি ও তার বাহিনীর সদস্যরা রুপগঞ্জকে মগের মুল্লুকে পরিণত করেছিলেন। শুধু গোলাম দস্তগীর গাজীই নয়। তাদের ছেলে পাপ্পা গাজীরও রয়েছে বিশাল বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারনে বিভিন্ন সময় সংবাদের শিরোনামও হয়েছেন।
গোলাম দস্তগীর গাজীর রুপগঞ্জের চন পাড়ায় ছিলো বিশাল সিন্ডিকেট। স্থানীয়রা জানান, গোলাম দস্তদগীর গাজী ও পাপ্পা গাজীর শেল্টারেই চনপাড়ায় মাদক ব্যবসা করতেন চনপাড়ায় সিটি শাহীন, জয়নাল আবেদীন ও রাজু আহম্মেদ ওরফে রাজার নামে ৩টি বাহিনী সক্রিয় ছিল। প্যানেল চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বজলুর রহমানের শেল্টারে নানা ধরনের অপকর্ম তারা করে যেতেন। এক পর্যায়ে বজলু শাহীনকে স্বেচ্ছাসেবকলীগের পদ দেয়ার লোভও দেখিয়েছিলেন।
এইলোভের বশবর্তী হয়ে বজলুর নানা অপকর্ম শাহীনসহ বেশ কয়েকটি গ্রুপ করেি দেতন। যার নেপথ্য নায়ক ছিলেন গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার ছেলে পাপ্পাগাজী। হত্যাকান্ডের শিকার ফারদিন গাজীর লোক হিসেবে পরিচিতি ছিলো। ফারদিনের পরে শাহীন,জয়নাল,রাজু বেপরোয়া হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে শাহীন র্যাবের ক্রস ফায়ারেও নিহত হন। এছাড়াও গোলাম দস্তগীর গাজীর বিরুদ্ধে তা জেনে অনেকের লোম শিহরে উঠবে। তথ্যমতে,গাজীর জবর দখল করা সম্পত্তির পরিমান কেউ বলেন ৬ হাজার আবার কেউ বলেন ৮ হাজার বিঘা। গাজী বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। সাংসদ থাকাকালীন যা করেছেন এরচেয়ে কয়েকগুন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড তিনি ও তার বাহিনী দ্বারা রুপগঞ্জে সংগঠিত হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর গোলাম দস্তগীর গাজী তার নির্বাচনী এলাকায় শত শত বিঘা জমির মালিক হন। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বেশ কয়েকটি গ্রামে এখন গাজীর মালিকানাধীন জমি ছাড়া আর কারও জমি নেই। গাজীর নাম মানেই রুপগঞ্জ ও এর আশপাশের এলাকায় মানুষের ‘কান্নার অপর নাম’। গাজীর এপিএস এমদাদ অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমদাদের নিয়ন্ত্রণে গাজী বাহিনীর সদস্যরা হলেন,রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার হাসমত দয়ার ছেলে শমসের আলী খান ওরফে ডাকু শমসের । কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শমসেরের বিরুদ্ধে হত্যা,চাঁদাবাজি ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে। মাছিমপুর এলাকার আফসার উদ্দিনের ছেলে তাওলাদ মেম্বার।
এলাকায় নানা অপরাধকর্মকাণ্ড করে ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছিলেন। জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে শেখ ফরিদ মাসুমও নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময় সরকারি ও সাধারণ মানুষের সম্পদ লুটপাটের বিস্তর অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। এই সন্ত্রাসী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকেরও দায়িত্ব পালন করছেন। পূর্ব কালাদী গ্রামের সুরুজ মিয়া মুন্সীর ছেলে মো.আলী হোসেন ওরফে আলী বান্দা,রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নে আরেক আতঙ্কের নাম তোফায়েল আহমেদ আলমাছ। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা,চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে মামলা রয়েছে।
মাছিমপুরের মাদক ব্যবসায়ী,অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী,লুটপাট,চাঁদাবাজি, হত্যার হুমকি, ইয়াবা ব্যবসায়ী মো. মামুন মিয়া। রূপগঞ্জের চনপাড়ার আমেরিকান সিটির উত্তর পাশের ত্রাস খ্যাত আব্দুল মতিন। মন্ত্রীর এপিএস এমদাদের একান্ত সহযোগী হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। মাছিমপুরের মাদক ব্যবসায়ী, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী, লুটপাট, চাঁদাবাজি, হত্যার হুমকিদাতা ও ইয়াবা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রনি মিয়া। কালাদী গ্রামের আনিসুর রহমান খোকন তাঁর শিষ্য বলে জানা গেছে।
খোকনের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় বেশ কিছু মামলা রয়েছে। কেন্দুয়া গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে মতিউর রহমানও এমদাদের হয়ে গাজীর অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন। মাছিমপুরের আরেক ত্রাসের নাম আব্দুল হামিদ। চলতি বছর জুন মাসের ৪ তারিখে তাঁর কাছ থেকে পুলিশ অবৈধ অস্ত্র ও গুলি, চায়নিজ কুড়াল ও লোহার পাইপ জব্দ করে। মাছিমপুরের সামসুল হকের ছেলে রাকিব ওরফে গুই,নসুর উল্লাহর ছেলে নোমান,কালাদী গ্রামের হাজী মোজাম্মেলের ছেলে লোহা শাহীনসহ বড় একটি সংঘবদ্ধ চক্র পুরো রূপগঞ্জ ও আশপাশের আন্ডারওয়াল্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন। সংখ্যা লঘু অনেক পরিবারের জমিও দখলের অভিযোগ রয়েছে গাজী ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ নজরুল বাবু বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর তিনি জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। সূত্রমতে,এই রাজনীতিক ২০০৮ সালের তার নির্বাচনী হলফ নামায় নিজেকে ঠিকাদার ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করছিলেন। কিন্তু ২০১৪ ও ২০১৮ জাতয়ি নির্বাচনের হলম নামায় নিজেকে আমদানীকারক ও সরবরাহকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মাত্র ৫ বছরে ঠিকাদার থেকে সরবরাহকারী হওয়ার পিছনে অনেকেই দূর্নিতীর অভিযোগ তুলেছেন। ক্ষসতার জোরে নজরুল ইসলাম বাবু অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। গড়ে তুলেছিলেন সন্ত্রাসীর অভয়াশ্রম।
এই বাহিনীর সন্ত্রাসীর দ্বারাই বাবু এলাকায় মানুষের জায়গা জমি দখল থেকে শুরু করে অসংখ্য অপরাধ সংঘটিত করেছিলেন। একাধিকবার বাবুর ব্যাংক হিসার তলব করেছিলেন দূদক। তবে কয়েকবার দূদকের জাল ভেদ করে বেড়িয়ে গিয়েছিলেন বাবু। শুধু বাবুই নয় তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জণের অভিযোগ রয়েছে। দেশে বিপুল পরিমান সম্পদের পাশাপশি মালয়েশিয়াতে বাড়িসহ প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। রয়েছে লন্ডনে বাড়িও । বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তথ্য অনুযায়ী, নজরুল ইসলাম বাবু ও তার পরিবারের সদস্যরা চারটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মেসার্স সূচনা ডায়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং, মেসার্স স্টার ট্রেডিং কোম্পানি, মেসার্স বাবু এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স সূচনা ডায়িং প্রিন্টিং ওয়েবিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। অপরদিকে, ঢাকার গুলশান-১ এ ১৫ নম্বর সড়ক, প্লট নম্বর-১-এ র্যাংগস ওয়াটার ফ্রন্টে আছে নজরুল ইসলাম বাবুর ৪ হাজার ২০০ বর্গফুটের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। ফ্ল্যাট নং-২সি। ৮৮ শান্তিনগরে ইস্টার্ন পিয়ারে আছে একটি ফ্ল্যাট।
রমনা থানার সিদ্ধেশ্বরীর ৬৭, হাফিজ এস্টেটে আছে ২ হাজার ১৭০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল উপশহরে বাবুর আছে ১০ কাঠার প্লট। ৬১ বিজয়নগরে ইস্টার্ন আরজু নামে একটি ভবনের মালিক বাবু। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স-২ এ বাবুর আছে ৪টি দোকান (৮/১২, ৮/৪, ৮/৩৪ ও ৮/৩৯)। এ ছাড়া এই শপিং কমপ্লেক্সের আন্ডারগ্রাউন্ডে অবস্থিত ৪টি গোডাউনের মালিকও তিনি। গুলশান সিটি করপোরেশন মার্কেটে সাতটি দোকান আছে বাবুর। শান্তিনগরেও বাবুর আছে একটি ভবন। বাড়ি নম্বর ৯০/৯১। শেরেবাংলা নগরের ১৬৩ পূর্ব রাজাবাজারে বাবুর আছে আরও একটি ফ্ল্যাট। বাবুর ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত এক ব্যক্তির নামে কেনা হয়েছে ফ্ল্যাটটি। সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির ২৫ শতাংশ মালিকানা বাবু ও তার স্ত্রীর নামে। মাত্র কয়েক বছরে এতো এতো সম্পদের মালিক বৈধ আয়ে করতে পারে কিনা এ নিয়েও রয়েছে নানা মতবেধ।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সাংসদ কায়সার হাসনাতের বিরুদ্ধেও মানুষের জায়গা জমি দখল থেকে শুরু করে নানা অপরাধ কর্মকান্ড করে গেছেন তার বাহিনীর দ্বারা। যদিও বিগত সরকারের দুই টার্ম তিনি সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারেনি। তার আসনে জাতীয় পার্টি থেকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে লিয়াকত হোসেন খোকাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে একটি আসনে লিয়াকত হোসেন খোকাকে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়।
তার সাথে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে এবার জয় লাভ করেছিলেন। তবে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের লিয়াকত হোসেন খোকা সাংসদ থাক কালীন কায়সার হাসনাত দুইজনে মিলে মিশেই যা কিছু করার করেছেন। কারন তাদের উভয়ের পীর একজনই ছিলেন, আর হলেন গড ফাদার শামীম ওসমান। শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ হলেও তিনি সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন বিষয়ে মাথা ঘামাতেন। এমনকি শামীম ওসমান যা বলতেন লিয়াকত হোসেন খোকা ও কায়সার হাসনাত তা-ই করতেন।