বুধবার   ০৪ অক্টোবর ২০২৩   আশ্বিন ১৮ ১৪৩০

আগামীকালের শোডাউনে কাকে টার্গেট করবেন শামীম ওসমান

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

 

# কাদিরের উকিল শ্বশুর গিয়াস, তাই একই সঙ্গে টার্গেট হতে পারেন গিয়াস-আইভী

 

 

কাল নারায়ণগঞ্জ শহরে একটি বড় শোডাউন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জে তিনি প্রায়ই শোডাউন করেন। বিগত পনেরো বছরে তিনি এই ধরেনর অন্তত ৭/৮ টি শোডাউন করেছেন। বিগত দিনে প্রত্যেকটি শোডাউনে তাকে দীর্ঘ বক্তৃতা দিতে দেখা গেছে। গড়ে দুই বছর পর পর তিনি এসব শোডাউন করছেন। বিগত দিনের শোডাউনগুলোতে দেখা গেছে সারা জেলা থেকেই তিনি লোকজন এনে জরো করেন। এক ধরনের রাজনৈতিক শক্তিমত্তা প্রদর্শনের চেষ্টা করেন।

 

তিনি যাদেরকে প্রতিপক্ষ মনে করেন তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বক্তৃতা করেন। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে তার বক্তৃতার অধিকাংশ সময় জুরেই তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। আইভীকে নানা ভাবে হুমকি দিয়েছেন এবং বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে তিনি যে শোডাউনটি করেছিলেন তখন তিনি বেশ জোর দিয়েই বলেছিলেন আইভীকে আর তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে দেবেন না। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইভীকেই মনোনয়ন দিয়েছেন এবং যথারীতি আইভী বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু এবার তিনি কি বলবেন?

 

কাকে টার্গেট করবেন তিনি? নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে জল্পনা কল্পনা থাকলেও সবাই মনে করেন এবার টার্গেট হবেন গিয়াস উদ্দিন। তবে গিয়াস উদ্দিন যেহেতু মেয়র আইভীর বোন জামাতা আবদুল কাদিরের উকিল শশুর, তাই মেয়র আইভীকে জরিয়েও বক্তব্য আসতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। দেশে জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকী। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব মুহম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে টার্গেট করে বক্তব্য রাখছেন।

 

গিয়াস উদ্দিন জেলা বিএনপির দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি বিএনপির কোনো নেতাকে টার্গেট করেননি। বরং তাদের সাথে শামীম ওসমানের এক ধরনের বোঝাপরা ছিলো। যেমন গিয়াস উদ্দিনের আগে জেলা বিএনপির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনজর নেতা। এরা হলেন এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, কাজী মনিরুজ্জামান এবং অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। এই তিন জনই জেলা বিএনপির সভাপতি, আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক অথবা সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এদের কারো বিরুদ্ধেই শামীম ওসমানকে কোনো কথা বলতে দেখা যায়নি।

 

বরং তিনি সব সময়ই মেয়র আইভীকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু এবার যে জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিনই হবেন তার মূল টার্গেট এতে কারোই কোনো সন্দেহ নেই। আর আত্মীয়তার সুবাধে আইভীকেও টানা হতে পারে। তবে গত কয়েক মাস ধরেই তিনি গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন শামীম ওসমান। গিয়াস উদ্দিন এবং তার দল বিএনপির অন্য নেতারা শামীম ওসমানের বক্তব্যের জবাবও দিচ্ছেন। শামীম ওসমান সম্প্রতি গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে বেশ শক্ত বক্তব্য রাখছেন।

 

গিয়াস উদ্দিন অতীতে অন্য দল করায় তিনি তাকে রাজনৈতিক প্রস্টিটিউট হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। যদিও বিগত বিশ বছর ধরে গিয়াস উদ্দিন বিএনপির রাজনীতিতেই রয়েছেন। বিএনপিতে আসার পর আর তিনি কোনো দল বদল করেননি। আবার শামীম ওসমানের এই বক্তব্যের জবাবে গিয়াস উদ্দিন বলেন শামীম ওসমানরাওতো একেক ভাই একেক দল করেন। তাহলে তারাও কি প্রস্টিটিউট? মূলত এভাবেই তারা একে অপরকে ঘায়েল করে বক্তব্য দিয়ে চলেছেন।

 

পাশাপাশি গিয়াস উদ্দিন দাবি করছেন শামীম ওসমান ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাকে এবং তার দলের নেতাকর্মীদেরকে চরম ভাবে হয়রানী করছেন। তার লোকেরা বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা করছে। আর এসব করার জন্য শামীম ওসমানই উগ্র বক্তব্য দিয়ে তার উচ্ছৃংখল কর্মীদেরকে উস্কানী দিচ্ছেন। মূলত এভাবেই এখন পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে।

 

তবে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকী। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আবারও নির্বাচন করবেন শামীম ওসমান। আর বিএনপি যদি এবারের এই নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে এই নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাবেন গিয়াস উদ্দিন। যদিও বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে আগেই ঘোষনা দিয়ে রেখেছেন এবং তারা তত্ত্বাবদায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তাই তিন মাস পরে দেশে যে নির্বাচন হচ্ছে এই নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

 

তবে বিএনপি হয়তো রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে একটি বড় আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। আর সেই আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই এসব কিছু মিলিয়ে দেশের রাজনীতিতে এখন একটি গুমট পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে খুব শিগগিরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যেতে পারে সেই শঙ্কাও রয়েছে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহলের মাঝে। তাই এমতাবস্থায় শামীম ওসমানের কালকের শোডাউনের দিকে রয়েছে সারা নারায়ণগঞ্জের জনগনের নজর।

 

এদিকে শামীম ওসমানের শোডাউন নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, শামীম ওসমান কি বলবেন সেটা তারা আগে থেকেই জানেন। তিনি তাদেরকে হুমকি দেবেন। কিন্তু তারা সরকারের সকল প্রকারের দমনপিড়নকে উপেক্ষা করেই মাঠে রয়েছেন। শামীম ওসমান যাই বলেন না কেনো, তাতে তারা মোটেও বিচলিত হবে না বলে জানান। তারা মনে করেন শামীম ওসমান এবং তার সরকারের অন্যরা যাই বলুক না কোনো এই সরকারের পতন এবার কেউ ঠেকাতে পারবে না।

 

দেশে কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। তাই শামীম ওসমান সহ আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে তারা রাজনৈতিক ভাবেই মোকাবেলা করবেন। তারা মাঠের আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে মন্তব্য করেন। তবে শামীম ওসমান এবার কাকে টার্গেট করে কি বলেন সেদিকে তারাও নজর রাখছেন বলে জানান। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ কষ্টে আছে।

 

দ্রব্যমূল্যতো রয়েছেই তার সাথে সারা নারায়ণগঞ্জের পাড়া মহল্লায় বেপেরোয়া সন্ত্রাসে মেতে উঠেছে সরকারী দলের লোকেরা। তাই শামীম ওসমানের সমাবেশে খুব একটা জনসমাগম হবে বলে তারা মনে করেন না। কারণ মানুষ বর্তমান সরকারের উপর মোটেও সন্তুষ্ট নয়। মানুষ খেয়ে পরে ভালো নেই। তাই শামীম ওসমানের শোডাউন নিয়ে তারা মোটেও বিচলিত নন বলে জানান। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর