
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচিত হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমান। এবার কাগজ কলমে সেই অবস্থায় না থাকলেও অনেকটাই সেই পথেই আছেন ওসমান পরিবারের এই দুই নেতা।
এবারও একজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করবেন অন্যজন জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের দেওয়া সুবিধা নিয়ে নির্বাচন করবেন বলে জানা যায়। তাই ওসমান ভক্ত আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বলতে শোনা যায় আমাদের মিশন সফল। একদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে শামীম ওসমানের আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করা অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থীকে মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়টিকে ওসমান পরিবারের সাফল্য হিসেবে দেখছেন তারা।
আর অভিমানে হোক কিংবা ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে বিরাগভাজনের শিকার হওয়ার ভয়ে হোক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক কাউকে কিংবা কোন শক্তিশালী প্রার্থীকে নির্বাচনে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও স্বতন্ত্র হিসেবে না অংশগ্রহণকে সেলিম ওসমানকেও ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার জন্য ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, এই বছরের শুরুতেই যখন দ্বাদশ নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করে তখন থেকেই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান গিয়াসফোবিয়ায় ভূগতে শুরু করেন। অর্থাৎ এবার জাতীয় নির্বাচনে যখন বিএনপির পক্ষ হতে মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় তখন থেকেই বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও প্রচার মাধ্যমে গিয়াসের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করেন শামীম ওসমান।
তখন রাজনীতি বিশ্লেষকদের অনেকেই বলতে শুরু করেন, শামীম ওসমান ২০০১ সালের সেই নির্বাচনের কথা ভুলতে পারেননি। তাই তিনি বিএনপি নেতাদের মধ্যেই বিভেদ তৈরি করে গিয়াসের মনোনয়নের গ্রহণ যোগ্যতা কমাতে চেষ্টা করেন। তবে বিএনপি নির্বাচনে না আসায় গিয়াসও থাকছেন না নির্বাচনে। তাই এই নির্বাচনে তাকে কোন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বির মুখোমুখি হতে হচ্ছে না বলে অনেকটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন বলে মনে করা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে শামীম ওসমান শামীম ওসমান ১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সিরাজ কমান্ডারের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন করে জয়ী হন। এরপর তাকে আর কোন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়নি। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মনে করা হয়। তাছাড়া ২০১৮ সালে অনেক সহজ প্রক্রিয়ায় জয়ী হন বলে মনে করা হয়। তাই এবার কোন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় অনেকেই বলতে শুরু করেন শামীম ওসমান ফাঁকা মাঠে গোল দিতেই বেশি পছন্দ করেন।
এবার একই অবস্থায় আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবং ওসমান পরিবারের আরেক সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবং ওসমান পরিবারের আরেক সদস্য একেএম নাসিম ওসমানও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এবার সেলিম ওসমানও সেই একই প্রক্রিয়ায় আছেন বলে মনে করা হয়। শুধুমাত্র সেই বার কোন প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
এইবার পারিবারিক সকল সামর্থ দিয়ে লবিং করাসহ নির্বাচনী মাঠে হুমকি ধমকি দেয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের মাঠ থেকে বিতারিত করার চেষ্টা চালান। যা গত নির্বাচনে দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে চাওয়া তার বড় ভাই প্রয়াত এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমানের বিরুদ্ধেও করেছিলেন।
প্রকাশ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তার বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিমূলক কথাবার্তা বলেন তিনি। তাই এবার দুই ভাই-ই আবারও ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। এস.এ/জেসি