
গত ১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ১৫ জুলাই এসে ছাত্রলীগের হামলায় উত্তাল পরিস্থিতি তৈরী হয়। পর্যায়ক্রমে ঢাকা সহ সারাদেশের স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এ আন্দোলনের দাবী আদায়ের জন্য মাঠে নামেন। কিন্তু যখনি ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হামলা করা হয় তখনি তা সহিংসতায় রুপ নেয়। ক্ষমতাসীন দলের দাবী জামাত বিএনপি মিলে টার্গেট করে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে। বিএনপির দাবী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে গিলে তাদের নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আর এই আন্দোলনকে ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সহ সারাদেশে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে করে নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিক সহ অনেকে মানুষ আহত নিহত হন।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মাঝে দুস্কৃতরা ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর এতে করে নারায়ণগঞ্জে লুটপাট, হামলা, ভাঙ্চুরে ৫শ’কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, হামলার সময় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা কি করেছে। তারা কোথায় ছিল। এখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যার্থতা ফুটে উঠেছে। তার কথামতে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও ব্যর্থতার চিত্র ফটে উঠেছে।
জানাযায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভেঙ্গে তছনছ করেদেন। এমনকি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের সুযোগ্যপুত্র ওয়ন ওসমানের মালিকানাধীন জেড এন করপোরেশনের জালকুড়িতে থাকা শীতল পরিবহন পুড়িয়ে ছাই করে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় অবস্থিত মিনি পার্ক বঙ্গবন্ধুর মুরাল ভেঙ্গে ফেলা হয়। তাছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজামের মালিনাধীন নমপার্ক আগুন জালিয়ে পুড়ে ফেলা হয়। একই সাথে ভাঙ্চুর করে সকল কিছু তছনছ করে ফেলা হয়। এত কিছুর পরেও জেলা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের এই সহিংসতা প্রতিহতের জন্য কাউকে মাঠে দেখা যায় নাই। এমনকি আওয়ামী লীগের সহযোগি সংগঠনের নেতা কর্মীরাও এই ঘটনায় নিরবতা পালন করেন। অথচ বিভিন্ন সভা সমাবেশে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা বলে বেরান বিএনপির যে কোন আন্দোলনকে মাঠে থেকে প্রতিহত করবে। কিন্তু কাজের বেলা রেজাল্ট শুন্য।
অপরদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলে সকল জায়গায় সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল হয়ে রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জেও দলীয় কোন্দলের কারনে নেতাকর্মীরা সংগঠিত হতে পারে নাই। দলীয় সুত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা থানায় দলীয় কোন্দলের কারনে ৫ইউনিয়নের মাঝে এখনো পর্যন্ত ৩টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কমিটি নেই। যারা আছে তারা বয়সের ভাড়ে তেমন একটা চলাচল করতে পারেন না। বিশেষ করে বক্তাবলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারনে এখানে কমিটি শুন্য হয়ে রয়েছে প্রায় বছরের বেশি সময় ধরে। কমিটি না থাকার পিছনে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলীর ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়।
তাছাড়া একই ভাবে পৃথক ভাবে জেলা আওয়ামী লীগের পুর্ণাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি সেক্রেটারি আলাদা ভাবে কমিটি জমায় দেয়ায় তা পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে না। এছাড়া দলীয় অভ্যন্তরীন কোন্দলনের কারনে ২ বছর যাবত জেলা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ কমিটিহীন রয়েছে। এছাড়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি নেই ৮ মাসের বেশি সময় হতে যাচ্ছে। তাছাড়া জেলা যুবলীগের যারা দায়িত্বে রয়েছে তারা এখন বয়সের ভাড়ে নজু হয়ে আওয়ামী লীগের দায়িত্বে রয়েছে। তারা এখন যুবক নেই। এখানেও দলীয় কোন্দলের কারনে যুবলীগের কমিটি হয় ২০ বছরের বেশি। এই তাছাড়া সম্প্রতি মহানগর আওয়ামী লীগের ১৭টি ওয়ার্ড কমিটি ঘোষনা হওয়ার পরে এখানেও চরম আকারে দলের মাজে কোন্দল তৈরী হয়েছে। এমনকি এখানে দুটি গ্রুপ তৈরী হয়ে মাঠে নেমে একে অপরকে গায়েল করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। ঠিক সেই মুহুর্তে দেশের পরিস্থিতি সহিংসতায় রুপ নেয়। মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং সেক্রেটারি খোকন সাহা একপক্ষে চলে যান। তাদের বিপরীতে জিএম আরাফাতের নেতৃত্বে পদবঞ্চিত নেতারা আন্দোলনে নামেন। এমনকি সভাপতি সেক্রেটারিকে প্রকাশ্যে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করা হয়। বিপরীতে আনোয়ার পন্থিরা জিএম আরাফাতকে গণধোলাইয়ের ঘোষনা দেন। এই ভাবে তাদের কোন্দল চরম আকারে রুপ নেয়। আওয়ামী লীগের এই কোন্দলকে দুর্বলতা মনে করে সেই সুযোগকে কাজে লাগান বিএনপি। কারন বিএনপির হামলা ভাঙচুর প্রতিহত করার জন্য ক্ষমতাসীরন দলের কেউ মাঠে নামেন নাই। আর এতে করে স্পষ্ট বুঝা যায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলাত প্রকাশ পায়।