Logo
Logo
×

রাজনীতি

আ.লীগের পুনর্দখল বিএনপির পুনরুদ্ধারের চেষ্টা

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৭ পিএম

আ.লীগের পুনর্দখল বিএনপির পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
Swapno

 

# শামীম-গিয়াসের মধ্যেই মূল লড়াই হবে বলে ধারণা
# আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় থাকতে পারেন পলাশ
# বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় থাকতে পারেন মামুন ও কাশেমী

 

 

দ্বাদশ নির্বাচনের হাওয়ায় জাতীয় রাজনীতির সাথে সাথে অনেকটাই উত্তাপ ছড়িয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড। চায়ের স্টল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নির্বাচন এবং প্রার্থী নিয়েও চলছে যুক্তি-তর্ক ও বিচার-বিশ্লেষণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণও হিসেবে-নিকেশ করতে শুরু করে দিয়েছেন কারা প্রার্থী হওয়ার তালিকায় আছেন, কোন নেতার কি ধরণের অবদান ও যোগ্যতা আছে এবং কারা দলীয়ভাবে গ্রীন সিগন্যাল পাইতে পারেন তা নিয়ে।

 

সেই আলোচনার অন্যতম খোরাক নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন। যা নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত পাঁচটি আসনের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং নারায়ণগঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটারের এলাকা। এমনকি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বিশাল একটি এলাকাও এই আসনের অন্তর্ভূক্ত। তাই দীর্ঘ দিনের দখল বজায় রাখতে একদিকে সক্রিয় নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে আসনটিকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠতে পারে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি (যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে)।

 

একই সাথে এই আসনটিতে দুই দলের সাবেক দুই এমপির লড়াই হতে পারে বলেও দলীয় সূত্রগুলো থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তাই এই আসনে এবার বাঘে-মহিষে লড়াই হতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এমনকি এখান থেকে বিভিন্ন দলের অংশগ্রহণ করার পরও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-ই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবে বলে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতামত।

 

এর আগে এরশাদ সরকার ক্ষমতা হারানোর পর থেকে এই আসনে বিএনপি নির্বাচিত হয় তিনবার এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয় চারবার। ১৯৯১ সালে বিএনপি প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম কমান্ডার আওয়ামী লীগের আশারফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নুকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী নির্বাচিত হন (আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি)।

 

২০০১ সালে এই আসন থেকে বিএনপি প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা একেএম শামীম ওসমানকে পরাজিত করেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয় চারবার। ১৯৯৬ সালে (১২ জুন) আওয়ামী লীগের প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান বিএনপি প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম কমান্ডারকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন।

 

২০০৮ সালে এই আসন থেকে বিএনপি প্রার্থী শিল্পপতি শাহ আলমকে মাত্র ২ হাজার ৩৮৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে নির্বাচিত হন সারাহ বেগম কবরী। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর পক্ষ হতে ধানের শীষ প্রতীক নির্বাচন করা মনির হোসেইন কাশেমীকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন একেএম শামীম ওসমান। তাই এবারের জাতীয় নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করে তাহলে তারা আসনটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবেন।

 

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ চাইবে দীর্ঘদিন তাদের দখলে থাকা এই আসনটি আবারও দখলে রাখতে। সর্বশেষ গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে একেএম শামীম ওসমান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর পক্ষ হতে ধানের শীষ প্রতীকে মনির হোসেইন কাশেমী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখায় মো. শফিকুল ইসলাম, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বাংলাদেশ এর গাভী প্রতীকে ওয়াজি উল্লাহ মাতব্বর অজু, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির কোদাল মার্কায় মাহমুদ হোসেন, সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ এর মই মার্কায় সেলিম মাহমুদ, সিপিবির কাস্তে মার্কায় ইকবাল হোসেন।

 

গত নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন একেএম শামীম ওসমান, জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কাউসার আহম্মেদ পলাশ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হালিম সিকদার ও দলীয় নেতা কামাল মৃধা। তবে শেষ পর্যন্ত শামীম ওসমানকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এবারের নির্বাচনেও শামীম ওসমানই দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন বলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।

 

এর বাইরে এবারও কাউসার আহমেদ পলাশ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় আছেন বলে জানা গেছে। এর বাইরে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষ হতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় শামীম ওসমানের শক্ত কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নাই বলে জানা গেছে। তবে বিএনপির ক্ষেত্রে তালিকাটা একটু বড় হতে পারে। গত নির্বাচনে এই আসন থেকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন জেলা বিএনপির তৎকালীন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ শাহ্ আলম ও সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।

 

এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন জেলা বিএনপির মামুন মাহমুদ, আবদুল হাই, রহুল আমিন সিকদার, পারভেজ আহমেদ, ফতুল্লা থানা বিএনপির সহসভাপতি মনিরুল আলম ও জেলা যুবদলের সভাপতি শহীদুল ইসলাম। এবারও এই আসন থেকে অধ্যাপক মামুন মাহমুদ মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে তার সমর্থকদের ধারণা। তাছাড়া জোটবদ্ধ নির্বাচনের সূত্র ধরে এবারও এই আসন থেকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর পক্ষ হতে মনির হোসেইন কাশেমী ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে ধারণা করা হয়।

 

তবে এই আসন থেকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে গিয়াস উদ্দিন অনেকটাই এগিয়ে বলে তার সমর্থকদের ধারণা। তবে উভয় দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মন্তব্য তারা দলীয় সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবেন এবং মনোনয়ন প্রাপ্তদের পক্ষ নিয়ে কাজ করবেন। এবারের নির্বাচনেও ইসলামপন্থী ও বামপন্থী দলগুলো থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবেন তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মনোনীত দুই প্রার্থীর মধ্যেই মূল লড়াই হবে বলে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের ধারণা।

 

এর আগেও এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বির মধ্যে মুখোমুখি নির্বাচনী লড়াই হয়েছিল ২০০১ সালে। সেই সময় অবশ্য বিএনপির গিয়াস উদ্দিনের কাছে হেরে যান শামীম ওসমান। তাই এবারের নির্বাচনেও যদি তাদের মধ্যে লড়াই হয় তাহলে একদিকে গিয়াসের থাকছে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াই অন্যদিকে শামীম ওসমানের থাকছে প্রতিশোধের লড়াই। আর এই লড়াই ও ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা পর্যন্ত। এস.এ/জেসি
 

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন