আলোচনা হলেও যুবলীগের কমিটি হয় না

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪২ পিএম

# পদপ্রত্যাশীরা সিভি জমা দিয়েছেন
# উত্তর দক্ষিণ মেরুর কোন্দল কাটছে না
আগামী নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠ এখন উত্তেজনা চলছে। সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য যেমন বিএনপি মরিয়া হয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে তেমনি ভাবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও তাদের ঠেকাতে প্রতিনিয়ত রাজপথে মিছিল মিটিং করে যাচ্ছে।
আর এতে করে ঢাকার সবচেয়ে নিকটতম জেলা নারায়ণগঞ্জ হওয়ায় দুই দলের নেতা কর্মীরা সভা মিছিলে ভুমিকা পালন করে যাচ্ছে। ঢাকার রাজপথে কেন্দ্রীয় যুবলীগ যতটা গরম করে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ যুবলীগ তার ধারে কাছেও নেই। আর না থাকার কারণ হিসেবে এখানকার নতুন কমিটি না থাকাকে মনে করছে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ যুবলীগের কমিটি গঠনের জন্য বার বার তাকিদ দেয়া হলেও এখানে কমিটি হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে দুই মেরুর কোন্দলের জন্য এখানকার কমিটি আটকে রয়েছে। ২০২২ সনের সেপ্টেম্বর মাসে আওয়ামীগের কার্যালয়ে যুবলীগের বর্ধিত সভায় তখন ৩ মাসের মাঝে থানা কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন। কিন্তু এতে করে জেরার নেতৃবৃন্দ ব্যর্থ হন। দলীয় কোন্দল থাকায় থানা পর্যায়েও কমিটি হয় নাই।
দলীয় সুত্রমতে, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু ও সাধারণ সম্পাদক আলীরেজা উজ্জলের মধ্যে মতবিরোধের কারণে ২৭টি ওয়ার্ডে যুবলীগের কোনো কমিটি নেই। তাছাড়া মহানগর যুবলীগের দুই শীর্ষ নেতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একজোট হয়ে দীর্ঘ ১৮ বছরেও কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। ফলে দুই ধারায় বিভক্ত মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক অবস্থা হ-য-ব-র-ল।
অপরদিকে ২০০৫ সালে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা থাকা অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জেলা যুবলীগের সভাপতি পদে আলহাজ আব্দুল কাদির ও সাধারণ সম্পাদক পদে এডভোকেট আবু হাসনাত শহিদ মোহাম্মদ বাদল নির্বাচিত হন। সেই সঙ্গে জাকিরুল আলম হেলালকে করা হয় সিনিয়র সহ-সভাপতি, আসিফ হোসেন মানুকে সহ-সভাপতি ও শাহ নিজামকে করা হয়েছিল যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
আব্দুল কাদির জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পদে এবং ভিপি বাদল সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পান। যদিও বর্তমানে আব্দুল কাদির জেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি না হওয়া তিনি পদে নেই। পরবর্তীতে জাকিরুল আলম হেলাল ও শাহ নিজাম মহানগর আওয়ামী লীগে যুক্ত হয়েছেন। তাছাড়া দীর্ঘ ১২ বছর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতানৈক্যের কারণে জেলা যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।
এর মধ্যে ২০১৬ সালের ৯ই অক্টোবর কেন্দ্র থেকে ঘোষিত জেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটিতে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো. বাদলকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ১৩ মাস পর ২০১৭ সালের ২৫শে নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল কাদিরকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি করা হয়।
ফলে জেলা যুবলীগের এই দুই শীর্ষ নেতা জেলা আওয়ামী লীগে পদায়ন হওয়ার পর তারা যুবলীগের কোনো কর্মসূচি পালন করেন না। এতে ৬ বছর ধরে জেলা যুবলীগ নেতৃত্বহীন। তাছাড়া ২০০৫ সাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদির নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো. বাদল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে ঘিরে দুই ধারায় বিভক্ত। যা অদ্যাবধি বিদ্যমান।
অপরদিকে ২০০৫ সালে সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ শহর যুবলীগের (বর্তমানে মহানগর) কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সভাপতি শাহদাত হোসেন ভূঁইয়া সাজনু ও সাধারণ সম্পাদক আহমদ আলী রেজা উজ্জ্বল। এরমধ্যে সাজনু শামীম ওসমানের অনুসারী আর উজ্জ্বল মেয়র আইভীর ছোট ভাই। মহানগর যুবলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে দীর্ঘ ১৮ বছরেও একজোট হয়ে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখেনি নেতাকর্মীরা।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলাদা আলাদা ভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন। ৩ বছরের মহানগর কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৫ বছর আগে। ফলে নতুন কমিটি না আসায় মহানগর যুবলীগের পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীরা হতাশ।
স্থানীয় একাধিক পদপ্রত্যাশী নেতারা জানান, নারায়ণগঞ্জ যুবলীগ নিয়ে বার বার আলোচনা হলেও এখোন কমিটি গঠনের জটিলতা কাটছে না। তাছাড়া দুই মেরুর কোন্দলতো রয়েছেই। তবে আগামী নির্বাচনের আগে কমিটি গঠনের প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
এদিকে দলীয় সূত্রমতে, গত ২৩শে আগস্ট কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ২৮শে আগস্টের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী যুব লীগের পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। জীবনবৃত্তান্ত কেন্দ্রে জমা দেয়ার শেষ দিনে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক পদে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হক নিপু ও যুগ্ম আহ্বায়ক পদে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সাফায়েত আলম সানি এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক পদে বর্তমান সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সাজনু, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বল জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন বলে তারা নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি, জেলা যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, ফতুল্লা থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, যুবলীগ নেতা আহম্মেদ কায়সারসহ যুবলীগের বর্তমান ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা জীবনবৃত্তান্ত কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক এবং যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আগ্রহী প্রার্থীরা তাদের জীবনবৃত্তান্ত কেন্দ্রে জমা দেয়ার পর পদ-পদবি পেতে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। নানা ভাবে লবিং করছেন। মহানগর যুবলীগের বর্তমান সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সাজনু বলেন, আশাকরি কমিটি হয়ে যাবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো. বাদল বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে জেলা যুবলীগের কমিটি হয়ে যাবে। সেভাবেই কাজ চলছে। কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী যুবলীগের পদ প্রত্যাশীরা আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক পদের জন্য নিজেদের জীবনবৃত্তান্ত কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। এখন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা সেগুলো যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করবে। এস.এ/জেসি