আড়ালে সভাপতি আবদুল হাই ও এসপি হারুনকে সিংহাম বানানো তানভীর

 

 

 

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নারায়ণগঞ্জের সাইল্যান্ট কিলার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের পদে থেকে পুরো জেলার বিএনপি নেতাদের এবং টার্গেট ব্যক্তিদের প্রশাসন দিয়ে নাজেহাল করতে আবদুল হাই। আওয়ামী লীগের উচ্চ পদে আসীন হবার আগে জেলা পরিষদের প্রশাসক ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জেলার সর্বোচ্চ আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে ছাত্রদের বিপক্ষে নিজে মাঠে নেমেছে নেতাকর্মীদের নিয়ে।

 

 কমিটি বাণিজ্য আর মামলায় তদবীর বাণিজ্যে নিজেকে শৈল্পিক লেভেলে নিয়ে গিয়েছিলেন আবদুল হাই। তার বড় ছেলে তানভীরও ছিলো বাবার মতোই চতুর ও চালাক। রূপগঞ্জ আওয়ামী লীগে বাবা ছেলে দুইজনেই পদ আখড়ে ধরেছিলেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগেও পদবাণিজ্য তদবীর বাণিজ্য ছিলো বাবা ছেলের। সমালোচিত ও বিতর্কিত ডিবি হারুনের সাথে বাবা-ছেলের দুইজনেরই ছিলো সখ্যতা। নারায়ণগঞ্জে এসপি হারুন আসার পর সিংহামের পোষ্টার সবার আগে শহরে টানিয়ে ছিলেন আব্দুল হাইয়ের ছেলে তানভীর।

 

 যার দরুণ প্রশাসনের একচেটিয়া সুবিধা নিয়ে বিএনপি কর্মীদের তো নাজেহাল করেছেনই পাশাপাশি তদবীর বাণিজ্যও ছিলো বাবা ছেলের হাতে। আশ্চর্যের বিষয়ে ভুরি ভুরি মামলায় হাজারো আসামি হলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পদধারী আবদুল হাই ও তার ছেলে রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অথচ এই আবদুল হাইয়ের মুখে সবসময় রাজকার শব্দটি লেগে থাকতো। মতের অমিল হলেই আবদুল হাই যাকে তাকে রাজাকার, রাজাকারের বাচ্চা বানিয়ে দিতেন। 

 

এমনকি জেলা আওয়ামী লীগের প্যাডে আবোল তাবোল লিখে নানাভাবে নিজের স্বার্থ হাসিল করতেন। তার বড় ছেলে তানভীর তো আওয়ামী লীগে বাবার হয়েই কমিটি বাণিজ্য করতো। এসব করে আবদুল হাই ও তার ছেলে অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন। বিতর্কিত জিকে শামীম ছিল তার ঘরের লোক। সুবিধা মতো শামীম ওসমানকে ব্যবহার করতেন, আবার আইভীর দিকেও ঝুঁকে থাকতেন। শামীম ওসমান রাজনৈতিকভাবে বেকায়দায় পড়লেই আবদুল হাই সুবিধা নিয়ে শামীম ওসমানের ঘাড়ে চেপে বসতেন তাকে উদ্ধারের জন্য। 

 

নারায়ণগঞ্জে গত ১৬ বছরে অঢেল কুকর্মের নির্দেশদাতা ছিলেন আবদুল হাই ও তার ছেলে তানভীর। অথচ অদৃশ্য কারণে আবদুল হাইকে গত ৫ আগস্টের আগের ভূমিকার জন্য এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতাকে বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছেন আবদুল হাই। মামলায় বাদ যায়নি বার বার নির্বাচিত মেয়র আইভীসহ বহু আওয়ামী লীগ নেতা। অথচ গোটা নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের নেতারা যার কাঁধে বসে অপকর্ম করে বেড়িয়েছেন গত একদশকের বেশি সময় সেই আবদুল হাই রয়ে গেছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এতে অনেকে নানা প্রশ্ন তুলছেন।

আবদুল হাই যে শুধু তদবীর বাণিজ্যে ছিল এমনটি নয়। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল  তৃণমূল। ২০১৬ সালের অক্টোবরে জেলা আওয়ামী লীগের ঘোর্ষিত আংশিক কমিটির সভাপতি করা হয় আবদুল হাইকে। পরবর্তীতে জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়। এই কমিটি দেয়ার পরপরই আবদুল হাই শুন্যপদ  নিয়ে ও পরবর্তীতে বিভিন্ন থানা কমিটির করার ব্যাপারে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে পদবাণিজ্য করার অভিযোগ পাওয়া যায়।

 

 আবদুল হাই এসব কাজে শুধু নিজেই নন, তিনি তার বড় ছেলে তানভীরকে দিয়েও আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের নানা প্রলোভনে পদবাণিজ্য করেছেন। এমনকি ২নং রেলগেটে আওয়ামী লীগ কার্যালয় রেখে জেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ সদস্যদের সাথে বৈরিতা তৈরি করে স্বেচ্ছাচারি সিদ্ধান্ত নিতে নিজ বাসাকেই পদবাণিজ্যের  কাজে ব্যবহার করেছেন। এজন্য তিনি তার ছেলে তো বটেই নিজ স্ত্রীকেও সাথে নিয়েছেন। আবদুল হাইয়ের পদবাণিজ্য ও পদের প্রলোভনে অর্থ দেয়ার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের দুই নেতাই । তারা জানিয়েছিলেন আবদুল হাই কিভাবে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতেন।

সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের নেত্রী হিসেবে পরিচিত এড. নুরজাহান। সেই নূরজাহান বেগমকেও পদের লোভ দেখিয়ে প্রতারিত করেছেন  আবদুল হাই। হাতিয়ে নিয়েছেন ১ লাখ টাকা। সেই টাকা ফেরত চাওয়াতে এখন নূরজাহানের ফোন ধরেননা আবদুল হাই। নূর জাহান আবদুল হাইয়ের মার্ক টাওয়ারের ফ্ল্যাট বাসায় গিয়েই টাকা দিয়ে এসেছিলেন। ত্যাগী নেত্রী হওয়াতে এমনিতেই মিলতো পদ কিন্তু আবদুল হাইয়ের আবদার রক্ষাতেই দিয়েছিলেন সেই অর্থ। করোনা শুরুর আগে রমজানে আবদুল হাইয়ের বাসায় গিয়ে ১ লাখ টাকা দিয়ে এসেছিলাম আমি।

 

 রোজার সময় আমি আবদুল হাই ভাইয়ের হাতে টাকা দিয়েছিলাম। আবদুল হাই তার বৌকে ডেকে নিয়ে সেই টাকা রাখতে দিয়েছে। এবং তার বউ হাসি দিয়ে টাকার ব্যান্ডেল নিয়ে আমার সামনে বসে ছিল। আমার মতো দুঃখিনী মানুষের টাকা মাইরা খাইছে, আল্লাহ করবো তার বিচার। আমি নূরজাহান ছাত্রলীগ করেছি, যুব মহিলা লীগ করেছি। কিন্তু এরপরের এতো কিছু! শুধু ওইটাই না, সোনারগাঁয়ে আমি যাতে পদ না পাই সেই ব্যবস্থাও করছে। আমি এখন ফোন দিলেও ফোনটা পর্যন্ত সে ধরেনা টাকা ফেরত দিতে হইবো ভাইবা।

 

 টাকা খাইয়া পদ দিছে অন্য মাইনষেরে। আমি টাকা দিয়া পোষ্ট চাই নাই। সম্মেলনের আগে নেতাকর্মী নিয়ে গিয়ে আবদুল হাইয়ের সাথে দেখা করলে তাকে একটা ভালো পদে দেয়ার আবদার জানাই। নাম দিতে বলি। এরকয়েকদিন পরেই রোজা। আমি ব্যাংকের থাইকা টাকা নিয়া  আবদুল হাইরে দিয়া আসি। হ্যার শরম নাই। এখন উনি ফোন ধরেনা।আমার এতিম-পোলাপানের টাকা যারা বিনা অন্যায়ে খাইছে তাগো বিচার আল্লাহ করবো। আমি টাকা চাইছি দেইখা এখন ফোন দিলে ফোনই ধরেনা। তিনি বলেন,  আবদুল হাইয়ের বাসার সামনে গেলেই দেখা যেত, কত মানুষ পোটলা, বাজার নিয়ে যায়। ওই বাড়িতে বাবার সাথে কথা বললে বলে পোলার লগে কথা কন, পোলার লগে কইলে কয় মায়ের লগে কথা কন। তারা এই ব্যবসায় শুরু করেছিল দীর্ঘদিন।

সূত্র জানায়, জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার পরপরই কেন্দ্রীয় পদ থাকায় জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম ও কল্যাণ বিষয়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেন শ্রমিক লীগ নেতা কাউসার আহমেদ পলাশ। পলাশের শুন্য হওয়া ওই পদে বর্তমান নারায়ণগঞ্জ শ্রমিক লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এক নেতাকে বসানোর কথা বলে নিজের ছেলে তানভীরকে দিয়ে ১ লাখ টাকা নেন আবদুল হাই। কিন্তু এতোদিন পরেও তা সম্ভব করতে পারেনি আবদুল হাই। ওই নেতা টাকা  ফেরতের কথা বলায় তাকেও এড়িয়ে চলেন আবদুল হাই। 

 

আবদুল হাইয়ের ছেলে তানভীর তৃণমূল নেতাদের পদের বিল করতো। জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি যখন হয় তখন আবদুল হাইয়ের ছেলে তানভীর আমার কাছ থেকে ১ লাখ টাকা নিয়েছে পদে আমাকে বসাবে বলে। তানভীর আমাকে বলে, সে তার বাবা আবদুল হাইকে দিয়ে কাজ করায়া দিবে। শ্রমিক লীগ নেতা পলাশ যখন জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে সরে যান তখনকার ঘটনা। আমি যখন দেখলাম কাজের কাজ কিছুইনা। তখন আবদুল হাইয়ের ছেলেকে বললাম, ভাই আমি তো তোমাদের মতো বড়লোক না। চাকরী বাকরি করে খাই। যেহুতু তোমরা পারতাছনা, আমার টাকাটা আমারে দিয়া দাও। কিন্তু আবদুল হাইয়ের ছেলে পরে, দেই, দিচ্ছি, আঙ্কেল দিবো বলে এখন পর্যন্ত ঘুরাচ্ছে। বলে আঙ্কেল আপনার সাথে বসবো। আবদুল হাইয়ের ছেলে তানভীর বাবার সাথে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের পদবাণিজ্য করতো।