উনার স্বামী কীভাবে বোরকা পড়ে পালিয়েছিলো : মেয়র আইভী (ভিডিও)

যুগের চিন্তা অনলাইন
প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২১, ১০:৩৯ পিএম

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, আবার শুনি তার ওয়াইফ (স্ত্রী) লিপি ভাবী সম্মান করেই বলি ,উনি বলেন যে পালাবার পথ পাব না। উনি মনে হয় ভুলে গেছে কিভাবে ২০০১ সালে উনি কিভাবে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ওনার স্বামী কিভাবে বরখা পড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। ৭৫’র পর থেকে এ শহরে আলী আহম্মদ চুনকা এ শহরে ছিলো। আওয়ামীলীগকে রক্ষা করেছে নারায়ণগঞ্জ বাসীকেও রক্ষা করেছে।
সোমবার (৮ মার্চ) বিকেলে শহরের ৫নং ঘাট এলাকায় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ৮ বছর পূর্তিতে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত 'আলোর ভাসান' অনুষ্ঠানে মেয়র এসব কথা বলেন।
মেয়র আইভী বলেন, কী বিচিত্র ব্যাপার একটি মসজিদ হচ্ছে মন্ডলপাড়াতে (মডেল মসজিদ)। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার। সে মসজিদটিকে বন্ধ করে দিয়েছে। ডিসি সাহেব পিডব্লিউডির ইঞ্জিনিয়ারকে বলেছেন বন্ধ রাখতে, কারণ কি? শামীম ওসমান ম-লপাড়াতে মসজিদ করতে দিবেনা সেখানে আইভী গিয়েছে বলে। কী বিচিত্র হয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন। আমরা মনে হয় চুপসে গিয়েছি। আমরা মনে হয় কথা বলিনা, কথা বলুন। ত্বকী তো আমাদের কথা বলা শিখিয়েছে। ত্বকী আমাদের সাহস দিয়ে গিয়েছে। ত্বকী আমাদের সন্তান হয়ে শিখিয়ে গিয়েছে কীভাবে বাঁচতে হবে। অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে হবেনা। আমি নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমাজকে অনুরোধ করবো আবারো কথা বলুন। উনারা ভেবেছে, আমরা পিছিয়ে গিয়েছি। ৮ বছরে যেহুতু ত্বকী হত্যার বিচার হয়নি, আর মনে হয় বিচার হবেনা। খুনীরা আবারো মসনদে বসে, প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে নারায়ণগঞ্জে যা খুশি তাই করতে দিচ্ছে। সেটা হতে আমরা নিশ্চয়ই হতে দিবোনা। দিবোনা। আমাদের সন্তানের বিচার আমরা চাইবো। ত্বকী হত্যার বিচার একদিন এই বাংলার মাটিতে হবে। পালাবো আমরা না, পালাতে হবে আপনাকে, আপনার ফ্যামিলিকে, আপনার গোষ্ঠীকে, যারা হত্যা করেন, যারা মানুষ মারেন, যারা নির্যাতন করেন, মিথ্যাচার করেন। বড় বড় কথা বলেন। প্রশাসন ছেড়ে, পুলিশ বাহিনী ছেড়ে বের হয়ে আসেন রাস্তায়, দেখি আপনার কত বড় সাহস, কত বড় আপনার ক্ষমতা!
মেয়র বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার একদিন হবেই হবে। সেই আশা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মানবিক কারণে একটি কথা শুধু বলতে চাই রাসেলের হত্যাকান্ডের যেভাবে আপনি বিচার করেছেন ঠিক সেইভাবে আপনি ত্বকী হত্যাকান্ডের বিচার করুন। আপনার কাছে সকলেই সমান। আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়, কেউ নয়, কেউ নয়।
মেয়র বলেন, একটু খেয়াল করে দেখবেন এই মার্চ মাস আসলেই তাদের যত চ্যালা চামচা সকলে মিলে এমন সব আলোচনা এমন সব নাটক ,এমন সব কথা শুরু করে ,জুজুর ভয় দেখানো শুরু করে যেন কোনো কিছুই করা যাবে না। নারায়ণগঞ্জ থেকে যা খুশি তাই করবে। কিন্তু এ পর্যন্ত তারা কোনোটাই সঠিকভাবে করতে পারে না। ভকিষ্যতেও ইনশাআল্লাহ পারবে না।
তিনি বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার এখনও হয়তো হয়নি কোনো না কোনো কারণে। তার মানে এই নয় যে কোনো দিন হবে না। সে কথা ঠিক নয়। ত্বকী হত্যার বিচার একদিন হতেই হবে। ত্বকী আমাদের প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে ,ত্বকী আমাদের প্রতিবাদের ভাষা হয়ে দাড়িয়েছে। অন্যায় অবিচারের অথ্যাচারের প্রতীক হয়ে দাড়িয়েছে। ত্বকী শুধু নারায়ণগঞ্জে সীমাবদ্ধ নয় বাংলাদেশে সর্বত্র আনাচে কানাচে ,একটি ছোট্ট বাচ্চাও ত্বকীর কথা বলতে পারে। বাংলা ভাষাভাষী বিশ্বের যেখানে ত্বকী আছে সেখানেই ত্বকী আজ বিরাজমান। ত্বকী আত্মবলির মধ্যে দিয়ে আমরা নিশ্চয়ই সন্ত্রাসমুক্ত করবো। হত্যাকারীদের বিচার করবো। অবশ্যই হবে বিচার হবে। আল্লাহ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশক্তিমান। উনি মানুষকে বাড়তে দেয় বাড়তে দেয় বাড়তে । একদিন নিশ্চয়ই এ বিচার বাড়তে বাড়তে টান দিবে । আমরা অবশ্যই সে সময়ের অপেক্ষায় থাকবো। আমরা ততদিন পর্যন্ত রাষ্ট্রের কাছে বিচার চাইবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছে বিচার চাইবো।
মেয়র আইভী আরো বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতিকে বলতে চাই আপনি অনেক হত্যার বিচার করেছেন। আপনি সবখুনের হত্যা বিচার করছেন। নারায়ণগঞ্জের অনেক হত্যার বিচার করছেন। কিন্তু ত্বকী হত্যার বিচার এখনও করছেন না। কিন্তু কেন? কারা এর পেছনে দায়ী আপনি জানেন। তারা কি রাষ্ট্রের চেয়ে বড়? তারা কি এতই বড় আর এতই প্রয়োজনীয় যে ত্বকী হত্যার বিচার করা যাবে না। আজকে নারায়ণগঞ্জে তারা যেভাবে মিথ্যা কথা বলছে রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানায় মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার বানায়। যার যা ইচ্ছা করছে তাই করছে। তাদের শক্তির ওপর শক্তি রয়েছে প্রশাসন। প্রশাসন ছাড়া তারা জিরো। রাস্তায় হাঁটতে পারে না তারা প্রশাসন ছাড়া। প্রশাসনের ছত্র ছায়ায় বসে বসে ডিসি অফিসে এসপি অফিসে অথবা কোনো উপজেলায় গিয়ে তারা অনেক বড় বড় কথা বলে ‘ কলিজা খুলে নিবে , মুড়ির মত পিষিয়ে মারবে ,মুরগীকে খাওয়াবে মাছকে খাওয়াবে। কত কথা যে বলতে পারে। আবার ইদানীং বলতেছে। এত তাদের ক্ষমতা দেখেন কি দাপট ক্ষমতার। বলে যে ইউনিফর্ম পড়া ব্যক্তিই ক্ষমতায় থাকতে পারে না। আবার ১২ হাত পড়া শাড়ি নারী কি ক্ষমতা রাখবে। তাহলে কি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি ১২ হাত শাড়ি পড়েন না। উনি কি এ ক্ষমতা চালাচ্ছেন না। উনি কি এ রাষ্ট্র চালাচ্ছেন না। উনি একবার না তিনবার ক্ষতায় এসেছেন। তার পৃষ্টপোষকতায় প্রধানমন্ত্রীর নাম বেঁচে নারায়ণগঞ্জ শহরে ক্ষমতায় দেখিয়ে চলছেন।
মেয়র আইভী বলেন, নাম বেঁচা বন্ধ করেন, প্রশাসন নিয়ে চলা বন্ধ করেন। দেখেন আপনারা কোথায় যান। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে কুলি,মজুর শ্রমিক আপনাদেরকে পিটিয়ে মারবে এই শহরে। আপনারা কি মারবেন। একের পর এক নাটক সাজাচ্ছেন। কখনও হিন্দু সম্পত্তি কখনও মসজিদের কথা । কখনও হকারদের মাঠে নামান। কখনও নিজেরা কারো পৃষ্টপোষকতায় তাদের মাঠে নামেন। এগুলো সবই একদিন শেষ হবে।
বক্তব্যের সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল মেয়র বলেন, আমি যখন দাঁড়াই তখন বিদ্যুৎ চলে এমনকি আমার বাড়িতেও সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় কারেন্ট চলে যায়। তাই বলে কি তারা আমার আওয়াজ বন্ধ করে রাখতে পারবে। কখনওই আওয়াজ বন্ধ করে রাখতে পারবে না। দাবিয়ে রাখা যাবে না।
এরপর মেয়র বলেন, আমি শুধু বলতে চাই ত্বকী হত্যার বিচার হবেই ।মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি, বিচার করুন। নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি খুনীদের পৃষ্টপোষকতা বন্ধ করুন। একপেশে বক্তব্য দিবেন না। এ শহরের চরিত্র আপনারা জানেন না। যারা নতুন প্রশাসনের মুখ আসেন। তাদের গরম গরম মুখের কথা শুনে মনে করেন নারায়ণগঞ্জের অভিভাবক তারাই। লুটপাটের,সন্ত্রাসের ,খুনের অভিভাবক হল তারা । মানুষের ট্যাক্সেও পয়সায় বেতন নেন আপনারা। আর দায়িত্ব অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জে আসনে। তাই নারায়ণগঞ্জের মানুষের পাশে থাকেন। কোনো খুনীকে পৃষ্টপোষকতা করবেন না।
এর আগে মেয়র আইভী বলেন, ১৯৭১ সালের পর নারায়ণগঞ্জে যতগুলো হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে তার কোনোটির বিচার আমরা পাইনি। কেউই পায় নি। সাহস করে তো কেউ বলতেই পারেনি। থানা অব্দিও কেউ যেতে পারেন নি। আশিক যখন মারা গেল। তার পরিবারের খুব কষ্ট হয়েছে থানায় যেতে। কষ্ট হয়েছে একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরী) করতে। সেই জিডি থেকে নামটাম বাদ দেয়া হয়েছে। আজও হয় নি। প্রতিবাদ করার মত কেউ ছিল না। আমার মনে আছে সেইদিন আমি ডিসি অফিসের একটি মিটিংয়ে আশিক হত্যার বিষয়টা তুলেছিলাম।
মেয়র আইভী বলেন, যে টগবগে একটা ছেলেকে এভাবে হত্যা করা হল। হত্যার প্রায় ১ মাস আগে আশিক আমার অফিসে ও বাড়িতে গিয়েছিলো। আমাকে বলেছিলো আজমেরী ওসমান আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে বাঁচতে দেবে না। তখন আমি ওকে বলেছিলাম তুমি যখন এতই সন্দেহ প্রকাশ করছো তাহলে দেশের বাইরে বা অন্যকোথাও চলে যায়। কিন্তু সে ছেলেটা যায় নি দেশেই ছিলো এবং তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিলো। আমি যখন সেটা ডিসি অফিসের মিটিংয়ে বললাম তখন একজন সাংসদ বলেছিলেন এরকম দুই,চারটা হত্যাকান্ড হতেই পারে। এটা কোনো কথা নয়। তার প্রায় ৩-৪ বছর পর আমাদের আদরের সন্তান মেধাবী সন্তান তানভীর মোহাম্মদ ত্বকীকে আমাদেও হারাতে হয়েছে। এরপর চঞ্চল,মিঠু,বুলু হত্যাসহ অসংখ্য হত্যা হয়েছে। ৭১’র পরেও এ শহরে অনেক হত্যা হয়েছে। কোনো হত্যার সঠিক বিচার হয়নি বলে খুনীরা এত দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে। মিথ্যাচার তো করেই এমন মিথ্যা বলে এমন এভিড্যান্স দেখায় যেটা দূর থেকে নথিপত্র হাত নাড়িয়ে দেখায়। মনে হচ্ছে যে কি পন্ডিত তাদের পান্ডিত্য এ শহরের মানুষ এদেশের মানুষ কিছুই বুঝতে পারে না। তারা জানে না তাদের মানুষ কতটুকু ঘৃণা করে।
মেয়র বলেন, দুটি ছবি মানুষের মুখে ভেসে ওঠে একটি ভালোবাসা ও আরেকটি ঘৃণা। কি পরিমাণ ঘৃণা ক্ষোভ নিয়ে মানুষ তাদের দিকে তাকিয়েছে তারা যদি তা জানতে পারতো। তাহলে বুঝতে পারতো মানুষ তাদের কি পরিমাণ ঘৃণা করে। অথচ এই ঘৃণাকে এই ক্ষোভকে ভয় দেখিয়ে মানুষকে ভীত করতে চায়। নারায়ণগঞ্জ শহরকে ভীতুর শহর হিসেবে পরিণত করতে চায়।
অনুষ্ঠানে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক ও ত্বকী পিতা রফিউর রাব্বি, ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এড.মাহবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল, সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।