Logo
Logo
×

শিল্প ও সাহিত্য

কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার শুভ জন্মদিন

Icon

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৫৪ পিএম

কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার শুভ জন্মদিন
Swapno

কাজী আনিসুল হক হীরা : আজ কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার জন্মদিন ছিলো ৩০ সেপ্টেম্বর। ১৯৪৯ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ষাটের অগ্রগণ্য কবি জাতি সত্তার কবি হিসেবে পরিচিত। সাহিত্যে স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৮ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কারে ভূষিত হন। এ ছাড়াও বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হছেন তিনি। 

কবি নূরুল হুদা দরিয়ানগরের কবি। কবির জন্ম (৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৪৯), গ্রামের নাম পূর্ব পোকখালি। ঈদগাহ হাইস্কুল থেকে কুমিল্লা বোর্ডে ম্যাট্রিকে (ম্যাট্রিক পরীক্ষা) তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে মেধার পরিচয় রেখেছিলেন। তিনি ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র (ইংরেজিতে এম.এ)। ছাত্রজীবনে ‘অধোরেখ’ সংকলনটি সম্পাদনা করে সুধীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারপর বাংলা একাডেমীর পরিচালক কবি নূরুল হুদা জার্মান, জাপান, আমেরিকা, হাওয়াই, লন্ডন, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্থান, বেইজিং, শ্রীলংকা, তুরস্ক প্রভৃতি দেশে বিভিন্ন  সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন এবং তুরস্ক প্রভৃতি দেশ থেকে সম্মাননাও গ্রহণ করেন।

তিনি আর যে সব স্বীকৃতি ও সম্মাননা লাভ করেন তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮৮), যশোর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), আলাওল পুরস্কার (১৯৮৩), কবি আহসান হাবীব কবিতা পুরস্কার (১৯৯৫), তুরস্কের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বিশেষ সম্মাননা লাভ (১৯৯৭), কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার, সুকান্ত পুরস্কার (২০০৪), কক্সবাজার মেয়র কর্তৃক নগর চাবি প্রদান (২০০৯) প্রভৃতি। তিনি বহু গ্রন্থ ও কাব্য রচয়িতা, বহু ভাষার ধ্রুপদি সাহিত্যের রূপান্তরসাধক এবং আপন ভাষা ও দেশমাতৃকার অসংকোচ সেবক। তিনি বাংলাদেশের লেখকদের প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তাঁকে দেশ-বিদেশের নানাজন নানাভাবে সম্মাননা ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। নাট্যকার মমতাজউদ্দীন বলেন, মুহম্মদ নূরুল হুদা শব্দ শিকারী কোথা থেকে না কোথা থেকে শব্দকে খুঁজে আনে। বাছবিচার করে না। ইলিয়ডে তার আনন্দ, শেক্সপীয়রে তার নেশা, বাল্মীকিতে সে অনুরাগী, হোমারে সে অভিভূত আর কোরানে সে আকণ্ঠ। আর আছে তার সাগর, আছে পাহাড়, আছে ঈদগাহ বিদ্যালয়।’

‘যতদূর বাংলা ভাষা ততদূর এই বাংলাদেশ
দরিয়ানগরে জন্ম, পৃথিবীর সর্বপ্রান্ত আমার স্বদেশ’

এত সাহস কার আছে যে বাংলার নতুন সিমানা আঁকে, এত শক্তি কার আছে যে বিশ^কে বাংলার চোখে দেখে। ‘যতদূর বাংলা ভাষা ততদূর এই বাংলাদেশ’ হ্যাঁ  বাংলা কবিতার কবিকণ্ঠ মুহম্মদ নূরুল হুদার জাতিসত্তার কবি অভিধায় খ্যাত । কবি সমুদ্রনগর কক্সবাজারের ভূমিপুত্র, সমুদ্রের সাথেই তাঁর বেড়ে ওঠা, সমুদ্রের তীরে তাঁর শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি, সমুদ্রের তীরজুড়ে তাঁর পূর্বপুরুষের ঠিকানা; সমুদ্রের সাথে তাঁর নাড়ির টান। সমুদ্রের কাছে তাঁর বারবার তাই ফিরে আসা। দরিয়াসন্তান মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতায় দরিয়া (সমুদ্র) নানা ব্যঞ্জনায় আবিষ্কৃত হয়েছে। তাঁর কবিতায় সন্ধান মেলে আলোক বার্তা। মানুষ হওয়ার সংকল্প । মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতা সমুদ্রের বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীলতায় নিত্য ক্রিয়াশীল কবি-কাব্যকোবিদ সৃষ্টিসত্তা নানা নিরীক্ষায় উজ্জ্বল, কাব্য-প্রকরণ আর শুদ্ধতার আশ্রয়ে থেকেও তিনি নিয়ত নবায়নপ্রবণ। সুদীর্ঘ কাব্যঅভিযাত্রায় কাব্যভাষা এবং স্বাতন্ত্যমুর্তি কাব্যমুদ্রা তাঁকে দিয়েছে সমকালীন বাংলা কবিতার অন্যতম শীর্ষ কণ্ঠস্বর হবার সম্মান; দিয়েছে বিশ্বকবিতার তাৎপর্যপূর্ণ কারুকৃতের সম্মানও।

তাঁর পঞ্চাশে সংবর্ধনাগ্রন্থ প্রকাশিত হয় সময়মানুষ নামে। সম্পাদকত্রয়ী (বিশ্বজিৎ ঘোষ ও অন্যান্য, ১৯৯৯), গ্রন্থভূমিকায় (‘প্রসঙ্গত’) কবির সাহিত্যসৃষ্টির পরিচয়কে যেভাবে উল্লেখ করেন সেটি উদ্ধৃত করে আমরাও তাঁর সব্যসাচী স্বরূপটি বিশদ করতে চাই– মুহম্মদ নূরুল হুদা কবিতার পাশাপাশি লিখেছেন উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, কাব্যনাট্য, গান ইত্যাদি। কিন্তু সর্বত্রই তাঁর কাব্যরুচি ও কাব্যিক শাসন যুক্ত হয়ে পড়ে, যার কারণে অনিবার্যভাবেই তার রচনায় তৈরি হয় স্বকীয়তা ও ভাবনার একটি নতুন প্রান্ত। মুহম্মদ নূরুল হুদার সৃষ্টিশীলতায় দ্বৈত সত্তা বিরাজমান।

প্রথম সত্তায় আমরা তাঁর কবিতায় হই আকৃষ্ট, হৃদয়াবেগ দিয়ে তা গ্রহণ করি; আর তাঁর কবিতার দ্বিতীয় সত্তায় আমরা লাভ করি বহুমাত্রিক চিন্তা-উদ্রেককর বিচিত্র অনুষঙ্গ, যা পাঠ করতে আমরা হই আচ্ছন্ন ও সম্মোহিত। সৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ কবি’র কবিতা শুধু আকৃষ্ট করে না, আকৃষ্ট স্তর পার হয়ে তা বিশেষ আচ্ছন্নতা বিস্তার করে যেখানে তার রচনায় বহুমাত্রিক জ্যোতিবলয়ের স্বাক্ষর পাওয়া যায়। মুহম্মদ নূরুল হুদার অধিকাংশ রচনায় আমরা এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করি।’

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন