
নারায়ণগঞ্জে কালো গ্লাস সংবলিত গাড়ির চলাচল বেড়েছে। দিনে-রাতে কালো গ্লাস সংবলিত মাইক্রোবাস, হাইয়েস, নোয়া ও প্রাইভেটকার দাপিয়ে বেড়ায় শহর থেকে শহরতলীর প্রতিটি সড়কে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় থেকে সর্বসাধারণের জন্য কালো গ্লাস সংবলিত গাড়ির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও বর্তমানে ওই নিষেধাজ্ঞার প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না কোথাও। ফলে লাগামহীন ভাবে বাড়ছে কালো গ্লাস সংবলিত গাড়ির ব্যবহার।
অতীতে দেখা গেছে- গুম, খুন, অপহরণ, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক সরবরাহসহ ভয়াবহ অপরাধে কালো গ্লাস সংবলিত গাড়ি ব্যবহার করে অপরাধিরা। ফলে অপরাধ দমনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় থেকে নিষেধাজ্ঞা আসে গাড়ির জানালায় কালো গ্লাস ব্যবহারে। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা করছে না কেউ। সূত্র বলছে, কালো গ্লাস সংবলিত গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন ভিআইপি ব্যক্তিত্বরা। ফলে এসব গাড়ি চলাচলের সময় ভিআইপি ব্যক্তিত্ব মনে করে এতে তল্লাশী বা সন্দেহও করেন না আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন ‘ভিআইপি ধারনা’কে পুঁজি করে সংঘবদ্ধ অপরাধি চক্রগুলো কালো গ্লাস সংবলিত বিভিন্ন নামি-দামি গাড়ি ব্যবহার এবং ওই গাড়ির সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ পরিচালনা করছেন। কেউ কেউ আবার সাদা গ্লাসেরও কালোর আবরণ লাগিয়ে নিচ্ছেন। এসব গাড়ির ভিতরে কি ঘটছে তা বাইরে থেকে দেখার বা বুঝার উপায় নেই।
জানা গেছে, এসব গাড়ি ব্যবহার করে একেরপর এক ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় থেকে মাইক্রোবাস, নোয়া ও সবধরনের প্রাইভেটকারে কালো গ্লাস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আসে। এরপর ২০১৪ সালের ১১ই মে নারায়ণগঞ্জ’সহ সারাদেশে এর বিরুদ্ধে অভিযানে নামে পুলিশ প্রশাসন। সড়কে প্রশাসনের কঠোরতায় ওই সময়ে কালোগ্লাস সংবলিত গাড়ির চলাচল কমে যায়। পুলিশি ঝামেলা এড়াতে গাড়ির জানালার গ্লাস বা কালোর আবরণ পাল্টে ফেলে গাড়ির মালিকরা। তবে, সময়ক্রমে সড়কে পুলিশের কঠোরতা কমলে আবারও বেড়ে যায় গাড়িতে কালো গ্লাসের ব্যবহার। অপরাধিরা অপরাধ সংঘটিত করতে আবারও ব্যবহার শুরু করেন কালো গ্লাসের গাড়ি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত ২০১৮ সনের ১৮ই জানুয়ারি দুপুরে কাশিপুর হাটখোলা এলাকা থেকে মোঃ রিপন নামে এক ওয়ার্কশপ কারিগরকে কালো গ্লাস সংবলিত একটি হাইয়েস গাড়িতে উঠিয়ে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। রিপন হাটখোলা এলাকায় আইডিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের কারিগর ছিলেন। পরবর্তীতে মুক্তিপণ স্বরুপ ৫০ হাজার টাকা দাবী করে অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় ওই দিনই ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন ওয়ার্কশপের মালিক সাইফুল ইসলাম।
একই বছর ২৮ ফেব্রুয়ারী সকালে ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকা থেকে খোকন মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে কালো গ্লাস সংবলিত একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে অপহরণ ও তার পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্র। এ ঘটনায় অপহৃত শেফালী বেগম বাদি হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তারা দেলপাড়া মির্জাবাড়ীর মোড় এলাকার বাসীন্দা।
গত ২০১৯ সালের ২৩ শে সেপ্টেম্বর ফতুল্লা থানাধীন দেওভোগ পানির ট্যাংকীর সামনে থেকে সাদিয়া আক্তার আচল নামে ১৭ বছর বয়সী এক কলেজ ছাত্রীকে কালো গ্লাস সংবলিত একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় ওই কলেজ ছাত্রীর মা কহিনুর বেগম সজল ও সিরাজুল ইসলাম নামে দুজনের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। কালো গ্লাস সংবলিত মাইক্রো বা প্রাইভেটকারে অপহরণের এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে ফতুল্লাসহ নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি থানায়। কিন্তু এরপরও সড়কে এসব গাড়ি ব্যবহারের বিরুদ্ধে আগের মতো কঠোরতা অবলম্বন করতে দেখা যাচ্ছে না ট্রাফিক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ (ট্রাফিক) মো. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, ‘অপরাধিরা কালো গ্লাস সংবলিত গাড়ি ব্যবহার করায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় থেকে কালো গ্লাস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে কালো গ্লাস ব্যবহারের বিরুদ্ধে পুলিশ হার্ড লাইনেই ছিলো। এখনও আছে। মামলা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে সড়ক আইনের ধারায় বেশ কিছু পরিবর্তন আসায় আপাতত গাড়ির বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে কঠোর হওয়া যাচ্ছে না। সময় সাপেক্ষে কঠোরতা বাড়ানো হবে। তবে, যেসকল গাড়ি ইচ্ছেকৃত ভাবে গ্লাসে ক্লালো আবরণ লাগায়, সেগুলোকে মামলা দিচ্ছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূল সমস্যা হচ্ছে যেখান থেকে গাড়ি ইনপুট হয় সেখানে। তারা গাড়ির মডেলের সাথে কালো ক্লাস যোগ করে। আবার এখানে বিআরটিএ’রও সমস্যা আছে। যেমন তারা যখন রেজিস্ট্রেশন করে, তখন গাড়ি না দেখেই শো-রুম ওয়ালাদের কাছ থেকে কাগজপত্র দেখে রেজিস্ট্রেশন করে দেয়। তাদের উচিৎ সাধারণ মানুষদের কালো গ্লাস সংবলিত গাড়িতে রেজিস্ট্রেশন করে না দেয়া।’