
# নারায়ণগঞ্জ-১ ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ছড়াছড়ি
# তৈমূর আলম খন্দকার ব্যতীত শক্ত প্রার্থী নেই তৃণমুল বিএনপির
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭ জানুয়ারি ভোটে অংশ নেয়ার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় পেরিয়েছে। ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর বিরুদ্ধে একমাত্র রূপগঞ্জেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দিতে পেরেছে আলোচনায় থাকা তৃণমূল বিএনপি। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামীলীগের কোন প্রার্থী দেয়া হয়নি আর সেখানে আওয়ামীলীগ নেতাদের মধ্য থেকে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি।
নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্বতন্ত্রসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৪৫ জন প্রার্থী। এই দিন প্রার্থীরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। শেষ দিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে ১০ জন, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে ৬ জন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে ১৩ জন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ১১ জন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে (রূপগঞ্জ) আওয়ামীলীগের প্রার্থী ও রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম দস্তগীর গাজীকেই (বীর প্রতীক) এবারের নির্বাচনে সবচাইতে বেশি পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই আসনে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার মনোয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে রূপগঞ্জ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভুঁইয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এছাড়া জাকের পার্টি থেকে জোবায়ের আলম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি থেকে আফাজ উদ্দিন মোল্লা, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে গোলাম মর্তুজা পাপ্পা ও হাবিবুর রহমান মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া মো. জোবায়ের আলম (স্বতন্ত্র), মো. জয়নাল আবেদীন চৌধুরী (স্বতন্ত্র), একেএম শহিদুল ইসলাম (ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ) মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে (আড়াইহাজার) আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবু মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর শিকদার লোটন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাছাড়া জাকের পার্টির শাহজাহান, তৃণমূল বিএনপির আবু হানিফ হৃদয়, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির মোতাহের হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শরিফুল ইসলাম, মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে (সোনারগাঁ) আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রাথী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্য, জাতীয়পার্টির মনোনীত প্রার্থী ও ঢাকা বিভাগীয় জাতীয়পার্টির মহাসচিব ও বর্তমান সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামীলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটির সদস্য এএইচএম মাসুদ দুলাল।
তাছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কায়সার হাসনাতের স্ত্রী রুবিয়া সুলতানা, সুপ্রীম পার্টির আকরাম হোসেন এবং বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য সিরাজুল হক মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য এরফান হোসেন দীপ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মারুফ ইসলাম ঝলক, বিএনএম এর জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসভাপতি এবিএম ওয়ালীউল্লাহ রহমান খান, ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান নারায়ণ দাস, বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির মোহাম্মদ আসলাম হোসাইন, মুক্তিজোটের আরিফ হোসেন, জাকের পার্টির জামিল মিজি মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম ওসমানের সামনে শক্ত কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এখানে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মনোনীত প্রাথী সালাউদ্দিন খোকা মোল্লা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রাশেদুল ইসলাম তাঁর মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
তাছাড়া এই আসনে তৃণমুল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এড. আলী হোসেন তার মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া মো সেলিম প্রধান (বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি), মো. হাবিবুর রহমান (ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ), শহিদ উন নবী (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), গোলাম মোর্শেদ রনি (বাংলাদেশ কংগ্রেস), মো. সৈয়দ হোসেন (জাসদ) কাজী দেলোয়ার হোসেন (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এমন সম্ভাবনা তৈরি করেও শেষ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে (সদর-বন্দর) একেবারে সহজ জয়ের পথে জাতীয় পার্টির মনোনিত প্রার্থী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তৃণমূল বিএনপির মনোনিত প্রার্থী এড. আবদুল হামিদ খান ভাষানী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এই আসনে আওয়ামীলীগের কোন প্রার্থী দেয়া হয়নি। তাছাড়া আওয়ামী লীগের কোন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নেননি। তবে ছোট দলগুলোর মধ্যে এএসএম একরামুল হক (ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ), মোর্শেদ হাসান (জাকের পার্টি), ছামসুল ইসলাম (বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি) মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
নির্বাচন কমিশন সুত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের মোট ভোটার ২২ লাখ ৫৫ হাজার ৬০জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭৭ জন এবং নারী ভোটার ১১ লাখ ৭ হাজার ৬৬জন; তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছে ১৭ জন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৬ জন। নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩লাখ ৩৩ হাজার ২৬৭ জন। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মোট ভোটার ৩লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৮জন। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মোট ভোটার ৬ লাখ ৯৬ হাজার ১৩৯ জন। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ৪ লাখ ৪৪ হাজার।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই, ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তির জন্য নির্ধারিত হয়েছে। সেই সাথে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে। এস.এ/জেসি