গরীবের ইলিশ ‘পাঙ্গাস’ স্বাস্থ্যকর মাছ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৩, ০৬:৫৭ পিএম

আমরা বাঙালী, বাংলাদেশের নাগরিক। এই দেশের মানুষ সকলেই মাছে-ভাতে বাঙালী। প্লেটে গরম ভাতের সাথে মাছের ভুনা বা চরচরি, মাছ ভাজা, মাছের তরকারি ছাড়া ভাত গলধঃকরণ করা একজন বাঙালীর শোভা পায় না। অর্থাৎ প্লেটের কর্ণারে বা মাঝে, গোপনে বা প্রকাশ্যে মাছের উপস্থিতি ছাড়া কোনোভাবেই একজন বাঙালির পাকস্থলি স্বয়ংসম্পূর্ন হয় না।
কিন্তু কালের নির্মম পরিবর্তনের ফলে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে অনেক বাঙালীর প্লেটে দুটো শুকনো মরিচের সাথে কচলানো সিদ্ধ আলু,বেগুন,টমেটো বা মসুর ডাল দিয়ে সাদা ভাত এক চিমটি লবন দিয়ে গোগ্রাসে গিলতে দেখা যায়। মাছ-ভাত খাওয়ার ইচ্ছা জাগলেও বাধ্য হয়ে এসকল খাবার দিয়েই মধ্য-নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো ক্ষুদা নিবারণ করতে বাধ্য হয়।
যা একজন বাঙালীর জন্য অনেক কষ্টদায়ক। জাতীয় মাছ ইলিশ হলেও প্রচন্ড দামবৃদ্ধির কারণে নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ ইলিশ মাছ ক্রয় করতে অক্ষম হয়ে থাকে। ফলে তারা আমিষের/প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে খুঁজে খুঁজে দামে সাশ্রয়ী মাছগুলোই একটু বেশি ক্রয় করেন। দামে সাশ্রয়ী মাছের মধ্যে পাঙ্গাস মাছ অন্যতম। পাঙ্গাশ মাছ একটি অত্যন্ত সুস্বাদু তেল জাতীয় মাছ।
তেল জাতীয় সকল মাছ স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ মানুষ-ই এই মাছ পছন্দ করে। পাঙ্গাস মাছ কেজিতে বিক্রি হয়। প্রতি কেজি পাঙ্গাস মাছ ১৫০-১৭০ টাকায় বিক্রি করেন মাছ ব্যবসায়ীরা। দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় সাধারনত মধ্য এবং নিম্নবিত্ত-রা এই মাছ বেশি ক্রয় করে থাকেন। অনেকেই এই মাছ খেতে অনীহা প্রকাশ করেন।
নাক সিটকানো এই মাছের পুষ্টির মান অতি উচ্চ। এতে ‘ওমেগা থ্রি’ ও ‘ওমেগা সিক্স’ দুটোই ভালো পরিমানে পাওয়া যায়। ‘ওমেগা সিক্স’-এর চেয়ে ‘ওমেগা থ্রি’ ভালো বেশি। পাঙ্গাশ মাছ নিয়মিত খেলে আমিষ, ওমেগা থ্রি, চোখের জন্য উপকারী মিনারেল পাবেন যা শরীরের জন্য অনেক উপকারি। রুই মাছের চেয়ে পাঙ্গাশ মাছের দাম কম কিন্তু পুষ্টিতে কয়েক ধাপ এগিয়ে।
ইলিশ মাছ, পাংগাস মাছ এসব মাছে তেল থাকে অনেক। তাই এই মাছগুলো স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ করে হাট্রের জন্য অনেক উপকারী। মাছের তেল সাধারন তেল নয়। এই তেল খেলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাই বেশি বেশি তেলযুক্ত মাছ খাওয়া প্রয়োজন। তবে অবশ্যই তা যেনো মোটা হওয়ার কারন না হয়ে দাড়ায় সেই দিকটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।
পাঙ্গাশ মাছ কেউ কেউ খেতে নিষেধ করে এর চাষের প্রক্রিয়ার কারনে। গুজব ছড়িয়ে অনেকেই বলে ময়লা পানিতে পাঙ্গাশ মাছ হয় কিন্তু এটা সম্পূর্নরূপেই মিথ্যা। এই মাছ পুকুরে চাষ করা হয় এবং ভালো খাবার খেয়ে বেড়ে উঠে। শুধু শুধু ব্যবসা নষ্ট করতে মাছ ব্যবসায়ীরা একটা ভুয়া তথ্য দিয়ে ক্রেতাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে।
রুই, কাতল অন্যান্য মাছ অবশ্যই ভালো তবে পাঙ্গাস মাছ আরো কয়েকগুন বেশি ভালো পুষ্টিকর মাছ। তাছাড়া যে কোন মাছ যখন ভালোভাবে পরিষ্কার করে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রান্না করা হয় তখন মাছের মধ্যে খারাপ কিছু থাকলেও তা সব ধ্বংস হয়ে যায়। তাই নিশ্চিন্তে পাঙ্গাস মাছ খান।
পাঙ্গাশ হলো এমন এক ধরনের মাছ যা অতি সহজেই রান্না করে খাওয়া যায়। অন্যান্য মাছের তুলনায় কাঁটা কম ও পাতলা হওয়ায় খুব সহজেই ভেজিটেবল স্যুপ, পাঙ্গাস কারি, পাঙ্গাস ভাজি করা যায়। সুতরাং, পাঙ্গাসে অনীহা মানে সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া স্বাস্থ্যকর আমিষ বা প্রেটিনকে দূরে ঠেলে দেয়া। এন.হুসেইন রনী /জেসি