রোববার   ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪   ভাদ্র ৩০ ১৪৩১

জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিকদের নজরদারীতে শামীম ওসমান

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

 

# সম্প্রতি তার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে কথা বলেছেন মাসুদ কামাল ও মোস্তফা ফিরোজ

 

 

দেশের পরিচিত এবং বিশিষ্ট সাংবাদিকদের নজরধারীতে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। সাম্প্রতিক সময়ে এসে ইউটিউব চ্যানেলগুলি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর এ কারনেই দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলিও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করছে। তবে সম্প্রতি দুইজন বিশিষ্ট সাংবাদিক সংসদ দস্য একেএম শামীম ওসমানের বক্তব্যেও তীব্র সমালোচনা করেছেন। এদের একজন হলেন সাংবাদিক মাসুদ কামাল এবং অপরজন সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ।

 

সাংবাদিক মাসুদ কামাল ‘রাজনীতির কথা’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত দেশের রাজনীতি বিশ্লেষন করেন। এই চ্যানেলে তিনি বলেছেন একজন সংসদ সদস্য হয়ে শামীম ওসমান যে ভাষায় কথা বলেছেন এই ভাষায় তামিল ছবির গডফাদাররাও কথা বলেন না। তিনি আরো বলেছেন শামীম ওসমানের আগে থেকেই একটি পরিচিতি আছে যে পরিচিতিটাকে কোনো ভাবেই পজিটিভ পরিচিতি বলা যাবে না। তিনি এমপি হয়েছেন বটে কিন্তু মানুষ তাকে যতোটা না ভালোবাসে তার চেয়ে বেশি ভয় পান। তার কথাবার্ত যতোটা না পরিশিলিত তার চেয়ে বেশি উগ্র।

 

তিনি বলেছেন তিনি বিএনপিকে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া করবেন। কিন্তু আপনি কেনো তাদেরকে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া করবেন? এই এখতিয়ার আপনাকে কে দিয়েছে? আপনি কি নারায়ণগঞ্জের মালিক? মালিক আপনি? আপনি হয়তো ভাবেন আপনি মালিক, কিন্তু এটা কি সম্ভব? আপনি পারবেন? পারবেন নাতো। যেটা পারবেন না সেটা বলেন কেনো? বলে কেনো মানুষের কাছে হাঁসির পাত্র হন? আমি তার এসব কথা নিয়ে নারায়ণগঞ্জের কিছু মানুষের সাথে কথা বলেছি।

 

তারা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়েছেন। তারা বলেছেন তিনিতো যা ইচ্ছে তাই বলেন। বলেন বাহাদুরি দেখানোর জন্য। মানুষের প্রতিক্রিয়াটি কি? মানুষ কি আপনার এসব কথা ভালো ভাবে নিচ্ছে? আমি ধরে নিলাম ওনার মাঝে একটি ইমোশন কাজ করেছে। নারায়ণগঞ্জে নাকি বিএনপির লোকেরা শেখ হাসিনাকে গালি দিয়েছে, কটুক্তি করে কথা বলেছে। তাই তিনি বলেছেন বিএনপিকে তিনি চব্বিশ ঘন্টার মাঝে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া করবেন। শামীম ওসমান বলেছেন তিনি বিএনপিকে এমন কঠোর জবাব দেবেন যে উঠে দাঁড়াতে পারবেন না। তাহলে তিনি সবাইকে ফিজিক্যালি এ্যাটাক করবেন, পা ভেঙ্গে দেবেন।

 

সবাইকেতো পারবেন না। হয়তো তিনি ধরে ধরে কিছু মানুষকে ক্ষতি করবেন। এই কাজ কি তিনি করতে পারেন? তাকেতো এরেস্ট করা উচিৎ। ওনাকে ধরে নিয়া যাওয়া উচিৎ, কেনোনা ইনিতো বাহিরে থাকলে মানুষের ঠেংঠোং ভেঙ্গে দেবে। আবার বলেছেন আমার কোনো পুলিশের দরকার পরবে না। জনগন যদি নির্দেশ দেয় তাহলে কারো বাড়িঘর রক্ষা পাবে না। কি করবেন আপনি? ওনাদের বাড়িঘরে হামলা করবেন? আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেবেন? তারপর বলবেন জনগন এসব করেছে? এখানে আবার তিনি জনগনকে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। কোনো সুস্থ সমাজে কোনো সুস্থ্য মানুষ তার উপর আবার তিনি একজন জনপ্রতিনিধি এমন কথা কি করে বলেন?

 

আমারতো মনে হয়যে আমরা যে তামিল ছবি দেখি সেই ছবির গডফাদাররা যে ভাষায় কথা বলে তাদেরকেও হার মানিয়েছেন। মাসুদ কামাল বলেন আমি ভেবে উঠতে পারি না একজন সংসদ সদস্য কিভাবে এমন অশ্লিল ভাষায় কথা বলতে পারেন। আপনি যেই হোন না কেনো এই দেশ, এই দেশের আইন আপনাকে এসব করার অনুমোদন দেয়নি। এসব কোনো এমপির ভাষা হতে পারে না এসব মাস্তানের ভাষা। আমি আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান এবং নীতিনির্ধারকদের বলবো আপনার দেখেন ওনার মস্তিষ্ক ঠিক আছে কিনা। আর না হলে ওনাকে থামান। 

 

মাসুদ কামালের পর শামীম ওসমানের বক্তব্যের সমালোচনা করে কথা বলেছেন, অপর সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ। তিনি তার ইউটিউব চ্যানেল ভয়েজ বাংলায় বলেন, শামীম ওসমান গ্যারান্টি দিয়ে বলছেন আবারও শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসবে। তিনি বলছেন খেলা হবে। কিন্তু এসব বলে তিনি কি বুঝাতে চান। তিনিতো সরকারের পরিকল্পনা ফাঁস করে দিলেন। তারা যে বিএনপিকে বাদ দিয়ে একটি নির্বাচন করতে চান সেটাই বলে দিলেন। তিনি গ্যারান্টি দিয়ে বললেন আবারও আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসবে। তিনি আবার বলছেন বিএনপি জামাতের সাথে কোনো আলোচনা হবে না।

 

কিন্তু তিনি যেভাবে বলছেন তাতে তো সবার জানাই আছে ফলাফল কি হবে। তাতে এতো গ্যারিান্টি দেবার কি আছে? মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী খেলোয়ার না রেখে কি খেলবেন? দল ক্ষমতায়, প্রশাসন পুলিশ সহ সব কিছু সাজানো গুছানো তাতে এভাবে গ্যারান্টি দেয়ার কি আছে। আপনারা যে জিতবেন এটাতো সবাই জানে। তবে আপনিতো আপনার নিজের দলের খোলোয়ার আইভীর সাথেই জিততে পারেননি। ১/১১ এর সময় দেশে ছিলেন না। আইভী দেশে ছিলো। আপনি আবার বিএনপির সাথে খেলতে চান।

 

তিনি বলেন শামীম ওসমানের এক ধরনের স্ট্যান্টবাজী আছে। তিনি বলছেন খেলা হবে, কোথায় খেলবেন, তারিখ দেন। নির্বাচন যেনো ফুটবল খেলা, ক্রিকেট খেলা। তাহলে আপনাকে বলবো এতো যদি জনপ্রিয়তা থাকে তাহলে পুলিশ প্রশাসন সব সরিয়ে ফেলেন। তার খেলেন। তখন দেখা যাবে কারা জিতে। পূরো মাঠ দখলে আপনার, রেফারি আম্পায়ার আপনার, পুলিশ প্রশাসন সব কিছু আপনার, বিরোধী দলকে মাঠের বাইরে রেখেছেন। তাহলে খেলবেন কার সাথে?

 

খেলারইতো লোক নেই। তাহলে বিরোধী দলকে কোনো আহ্বান জানান। আসলে নির্বাচনী খেলা খেলতে হলে একটি নিরপেক্ষ ভেন্যু থাকতে হবে। নিরপেক্ষ রেফারী থাকতে হবে। এসব তো নেই। তাহলে কার সাথে কি ভাবে খেলবেন আপনি। শামীম ওসমানের এই বক্তব্য নিয়ে আবার নানা রকম শিরোনাম হচ্ছে। তোলপাড় করা হচ্ছে। তিনি তার দলের সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু বিএনপির যে বর্তমান অবস্থান তাতে তারা তত্বাবদায় সরকার প্রতিষ্ঠা না হলে নির্বাচনে আসবে না। তাই আপনাদেরও প্রস্তুত থাকার কিছু নাই।

 

এতো বড় কথা বলারও কিছু নাই। শামীম ওসমান বলেছেন নারায়ণগঞ্জে আমাদের বাড়িঘর তাই নারায়ণগঞ্জের কারো সাথে খেলবো না। বিএনপি জামায়াত ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে ঢাকায় যাবো খেলতে। শামীম ওসমান বলেছেন আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি এবারও প্রধান মন্ত্রী হবেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তিনি যে পদ্ধতিতে খেলার কথা বলেছেন তাতে যে শেখ হাসিনা আবার প্রধান মন্ত্রী হবেন এটা বুঝার জন্য রকেট সাইন্স পড়ার কোনো দরকার নেই। এটা দেশের একজন রিকশা ওয়ালাও বুঝেন।

 

তবে তিনি কোনো রকম লুকো ছাঁপা না করেই ফাঁস করে দিলেন সরকার আসলে কি করতে চায়। আসলে শামীম ওসমান প্রতিনিয়ত যে নাটকীয়তা করেন সেই নাটকীয়তা এখন আর জমে না। আগে এক সময় জমতো। কিন্তু তিনি যখন তার নিজের দলের প্রার্থী আইভীর কাছে ধারাশায়ী হলেন তারপর থেকে কিন্তু তার এসব কথা আর মানুষ খায় না। তার কথায় নতুন কিছু নেই। তিনি মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী না রেখেই খেলতে চান।  মূলত এভাবেই সম্প্রতি এখন সিনিয়র সাংবাদিকরা শামীম ওসমানের বক্তব্যের সমালোচনা করছেন। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর