মঙ্গলবার   ১২ নভেম্বর ২০২৪   কার্তিক ২৮ ১৪৩১

জামায়াতের অভিনব কৌশল

মাহফুজ সিহান :

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২৪  

# সাংগঠনিক তৎপরতা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে দলের নেতারা

# নির্বাচনকে টার্গেট করে জনসমর্থন আদায়ে সামাজিক কাজে মনোনিবেশ

দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা থাকার পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে জামায়াতে ইসলামী। বিশেষ করে জামায়াতের নারায়ণগঞ্জের নেতারা আগামী নির্বাচনকে মাথায় রেখে জেলাব্যাপী জামায়াতে ইসলামীকে শক্তিশালী করার জন্য ব্যাপক কাজ করছেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএনপি কর্মীরা যখন দখল, আধিপত্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেছেন অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী তাদের সাংগঠনিক শক্তিকে বাড়ানোর জন্য মনোযোগী হয়েছেন।

 

গত তিনমাসে জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জে নেতাদের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, নারায়ণগঞ্জ শহর তো বটেই জেলা ব্যাপী জামায়াতে ইসলামীর নেতারা সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়িয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের স্বজনদের পাশে দাঁড়ানোকে প্রথম দায়িত্ব মনে করেন জামায়াতে ইসলামী। নারায়ণগঞ্জ জেলায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহত প্রায় সকল ব্যক্তির বাসাতেই পরিবার পরিজনকে সহযোগিতা করার মানসে হাজির হয়েছেন জামায়াত নেতারা। শুধু তাই নয়, জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমীরও কয়েকবার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে নারায়ণগঞ্জ সফর করেছন।  তাছাড়া নারায়ণগঞ্জে শিবির নেতাকর্মীরাও নানারকমভাবে কর্মীবান্ধব হয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছেন।

 

নারায়ণগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীকে সংগঠিত করার ব্যাপারে বিশেষভাবে বাহবার দাবিদার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগরী জামায়াতের আমী মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার, সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মানোয়ার হোসেইন, মহানরগী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জামাল হোসাইন,  মহানগর কর্ম পরিষদের সদস্য এইচএম নাসিরউদ্দিন, মহানগরী ওলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা সাইফুদ্দিন মনির। তারা একের পর এক সাংগঠনিক কর্মী সভা করছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে জামায়াত নিয়ে যেই ভীতি তৈরি করা হয়েছিল সেটি উত্তোরণে কাজ করছেন। বিশেষ করে সনাতন ধর্মালম্বীদের মধ্যে যে ধরণের ভয় অতীতে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল তা যে প্রপাগান্ডা ছিল তা এবারের দুর্গাপূজায়  প্রমাণ করেছে জামায়াতে ইসলামী। সনাতন ধর্মালম্বীদের শুধু যে সাহস যুগিয়েছেন তা নয়, তাদের উপসানলয়হগুলোতে যাতে কোন দুর্বৃত্ত আঘাত হানতে না পারে সেব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। একদিকে জামায়াতের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি অপরদিকে মানুষের মন জয়ের চেষ্টার কৌশল আগামী নির্বাচনে ব্যাপকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মত রাজনৈতিক বোদ্ধাদের।

 

তারা বলছেন, জামায়াত ইসলামী শুধু যে নারায়ণগঞ্জ শহরে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়িয়ে এমনটি নয়, গত তিন মাসে বন্দর, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা এলাকায় উপজেলা ভিত্তিক কর্মকাণ্ডকেও প্রসারিত করেছে। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠনের নেতারা ব্যাপকভাবে গণমানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এতোদিন মামলা-হামলাসহ নানা হয়রানির কারণে আড়ালে থাকলেও ধীরে ধীরে তারা প্রকাশ্যে এসে মানুষের সাথে মিশছেন। তাদের সম্পর্কে যেসকল প্রোপাগান্ড ছড়ানো হয়েছিল তা দূর করছেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে সেসকলের বিচার জোরালোভাবে দাবি করেছেন। নারায়ণগঞ্জের মেধাবী শিশু ত্বকী হত্যার বিচার জোরালোভাবে চেয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জামায়াত নেতারা। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর এই শক্ত অবস্থান সাধারণ মানুষের কাছে তাদেরকে আরো বেশি জনপ্রিয় করে তুলছে। শিক্ষাখাতকে ধংসের হাত থেকে বাঁচাতে যে সংস্কারের দাবি তুলেছেন তাও প্রশংসা কুড়িয়েছে।

 

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর নারায়ণগঞ্জ উত্তরকে শক্তিশালী করার জন্য উত্তর থানার সেক্রেটারি আবদুর রহিম, কর্ম পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ রুহুল আমিন, মোস্তফা মইনুল হক তারেক, খোরশেদ আলম, গাজী আবু সাইদ, আশরাফুল ইসলাম টিটু, এড. শাহাদাত আলী ইমন, ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান কাজ করে যাচ্ছেন।

 

সিদ্ধিরগঞ্জে দক্ষিণ থানার আমীর আলহাজ¦ কফিল আহম্মেদ, সিদ্ধিরগঞ্জ পশ্চিম থানার আমীর মাহাবুব আলম, থানা সেক্রেটারি হাবিবুর রহমান, উত্তর থানা সেক্রেটারি সাইদুল হক, দক্ষিণ থানার সেক্রেটারি আবদুল গফুর, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কর্ম পরিষদের সদস্য মাওলানা ইকবাল হোসাইন, মোহাম্মদ আলী, অধ্যাপক আবুল বাশার, মনির হোসেইন হেলালী সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।

 

বন্দরে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মো.আরিফুর রহমান, উপজেলা শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবু আব্দুল্লাহ, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন দক্ষিণ সভাপতি আবদুস সালাম, সেক্রেটার মাওলানা নুরুল আমিন, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পূর্ব সভাপতি কবি নজরুল ইসলাম আমিনী ব্যাপকভাবে কাজ করছেন।

 

রূপগঞ্জে জামায়াতে ইসলী রূপগঞ্জ উপজেলা উত্তরের আমীর এড. ইসরাফিল, উপজেলা পশ্চিমের আমীর মাওলানা মো.ফারুক হোসেন, রূপগঞ্জ উপজেলা দক্ষিণ সেক্রেটারি আনিসুর রহমান, ইউনিয়ন আমীর ও সেক্রেটারি মাওলানা জয়নাল আবেদীন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে পালন করছেন।

 

 সোনারগাঁয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সোনারগাঁ আইডিয়াল কলেজের প্রিন্সিপাল ড. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া, সোনারগাঁ উত্তর জামায়াতের সেক্রেটারি মো. গিয়াস উদ্দিন, সোনারগাঁ দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি মো. আসাদ, কাঁচপুর ইউনিয়ন দক্ষিণ জামায়াতের সভাপতি মো. নাঈম, সাদিপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি মাওলানা মো. আজিজুর রহমান, সোনারগাঁ উত্তর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মো. ইব্রাহীম, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম সারওয়ার সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর কাজ করছেন।

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরী জামায়াত ইসলামী ইউনিটসহ উপজেলা পর্যায়ের নেতারা নানাবিষয় নিয়ে প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় সভা করছেন। জনগণের সমস্যা সমাধানে জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য সামাজিক কাজে উদ্বুদ্ধ করছেন। এছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক ও রাজনৈতিক সহাবস্থানের দিকে মনোনিবেশ করেছেন। নানামুখী কার্যক্রমে বর্তমানে ব্যাপকভাবে ব্যস্ততা বেড়েছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের। আগামী জাতীয় নির্বাচন তো বটেই, সাধারণ মানুষের সাথে নিবিড় বন্ধন তৈরিতে জামায়াতে ইসলামীর এই কৌশল দারুণভাবে কাজ করবে বলে মত বোদ্ধামহলের।

এই বিভাগের আরো খবর