
# জাতীয় নির্বাচনের জন্যই মনোনয়ন নিয়ে কৌশলে যেতে পারে কেন্দ্র
# শামীম-আইভী শীতল যুদ্ধের দ্বৈরথ দেখা যেতে পারে এই নির্বাচনে
সদ্য বিদায়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের অভূতপূর্ব উন্নয়নের কারণে অনেকেই সহজেই অনুমান করেছিলেন আবারো জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে খুব সহজেই তিনিই আসছেন। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সেই ব্যাপারটি কঠিন ও জটিল হয়ে পড়েছে।
সূত্র বলছে, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে যদিও জেলা পরিষদের পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পর প্রশাসক করা হয়েছিল তবে এবার নির্বাচনের আগে মনোনয়ন লড়াইয়ে জয়ী হতে হবে তাকে। ইতিমধ্যে সাংসদ শামীম ওসমানের বন্ধু ত্রিরত্ন মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, সহ-সভাপতি বাবু চন্দন শীল এবং জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল জেলা পরিষদের জন্য মনোনয়নপত্র কিনেছেন।
তবে এই ত্রিরত্ন সাম্প্রতিক সময়ে নানা কারণে বিতর্কিত। এরমধ্যে বাবু চন্দনশীলের পাল্লা অন্য দুজনের তুলনায় ভারী। তবে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও এমপি শামীম ওসমান জেলা পরিষদে কার মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে তা তারাও নিশ্চিত নন। এদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন পরস্পর ঘনিষ্ট বন্ধু জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু।
ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও বর্তমানে তাদের মধ্যে তিক্ত সম্পর্ক বিদ্যমান বলে জানিয়েছে সূত্র। জেলা আওয়ামীলীগে নানা বিতর্কিত ও স্বেচ্ছাচারি সিদ্ধান্ত, মনোনয়ন বাণিজ্য, পদ বাণিজ্যে অভিযোগ ও প্রমাণাদি নিয়ে অনেকেই আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় আদতে আবদুল হাই জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দৌড়ে ছিটকে গেছেন।
তবে অত্যন্ত কৌশলে গত কয়েকবছর যাবৎ জেলাব্যাপী নিজের প্রভাব বৃদ্ধি করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান বাচ্চু। জেলার সকল সাংসদের সাথে তার সুসম্পর্ক থাকার ইঙ্গিতের কথাও জানিয়েছে একট সূত্র। জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে আনোয়ার হোসেনের সবচাইতে কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে সম্ভববত মিজানুর রহমান বাচ্চুর সাথে এমনটিই জানিয়েছে সূত্র।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাইকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী যেমন শতভাগ বিশ্বাস করতে পারেননা, তেমনি আবদুল হাই সাংসদ শামীম ওসমানের আস্থার তালিকাতেও নেই। সূত্র বলছে, ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে শামীম ওসমানের সাথে আনোয়ার হোসেনের যে গভীর সম্পর্ক ছিল তা এতোদিনে তিক্ততায় এসে ঠেকেছে।
ওই নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হলেও জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কারণে আনোয়ার হোসেন এক প্রকার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সরাসরি পুরস্কৃত হয়েছিলেন। সদ্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ নির্বাচন একটি লিটমাস পরীক্ষার মতো। নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৬১৫টি ভোটের কড়া হিসাব নিকেশের মাধ্যমেই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।
এক্ষেত্রে যেমন নারায়ণঞ্জ সিটি করপোরেশন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি জেলার বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভার চেয়ারম্যান, কাউন্সিলররাও অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি নির্বাচনে না এলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নির্বাচনের আগে মনোনয়ন নিয়েই। এটা বুঝতে পেরেই কিনা মিজানুর রহমান বাচ্চু রাজনীতিতে নানা ক্ষেত্রে দুরুত্ব কমিয়ে এনে নিজের দিকে সমর্থন ভারী করেছেন।
এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে দুরুত্ব বাড়লেও সাংসদ শামীম ওসমান ও সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবুর সাথে রাজনৈতিক দুরত্ব কমিয়ে আনায় জেলা পরিষদ নির্বাচনে তাকেও হট কেক ভাবা হচ্ছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী স্পেশাল পিপি রকিবউদ্দিন রকিব। তিনিও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তার মতে, তার কর্মকাণ্ড জেলাব্যাপী প্রশংসিত এবং জেলার সকল জনপ্রতিনিধির সমর্থন তিনি পাবেন।
এদিকে নারয়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিউটি হিসেবে খ্যাত মেয়র আইভী ও সাংসদ শামীম ওসমানের নিজ বলয়ের দ্বৈরথ জেলা পরিষদ নির্বাচনেও লক্ষ্য করা যেতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। সূত্র বলছে, যেহেতু জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ মানুষ ভোট দেয়ার সুযোগ নেই, জনপ্রতিনিধিরাই মূলত এর ভোটার। সেক্ষেত্রে নির্বাচনী উত্তাপটা হচ্ছে ভেতরে ভেতরে।
উপরের সারির রাজনীতিকরাই মূলত এই উত্তাপটা টের পাচ্ছেন। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জে স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধিদের সাথে এবং কেন্দ্রে লবিং দুটো কাজই একসাথে চলছে বলে জানিয়েছে সূত্র। যেহেতু বর্তমানে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে রয়েছেন। এরমধ্যে এই ৮ সেপ্টেম্বর আওয়ামীলীগের মনোনয়নপত্র কেনার শেষ তারিখ। সেহেতু কিছুটা ব্যাকফুটে পড়েছেন আনোয়ার হোসেন।
এদিকে সূত্র জানিয়েছে, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই লন্ডনে যাওয়ার কথা রয়েছে সাংসদ শামীম ওসমানের। সূত্র বলছে, এরআগে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রাপ্তিতে নিজ বলয়ের কাউকে স্থাপনের জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে সব চেষ্টাই বৃথা যাবে যদি গতবারের মতো এবারও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী সরাসরি কাউকে মনোনয়ন দিয়ে দেন।
তবে আওয়ামীলীগের মনোনয়নবোর্ডের মাধ্যমে এবার জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হতে পারে। এমনটি করার মূল কারণ হিসেবে সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আর এখন আপাতত কোন স্থানীয় নির্বাচনেই বিএনপি অংশগ্রহণ না করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেহেতু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বিশেষ কৌশলী চিন্তাভাবনা নিজ দলের নেতাদের নিয়ে।
সরাসরি কাউকে মনোনীত না করে মনোনয়ন বোর্ডের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করলে জেলা পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সিনিয়র আওয়ামীলীগ নেতারা মনোকষ্ট হতে দূরে থাকবেন। এছাড়া বিভেদও এক্ষেত্রে হ্রাস পাবে। নারায়ণগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে বিবেচিত বিধায়ই এবার আওয়ামীলীগ প্রার্থী বাছাইয়ে এতোটা সতর্ক হতে পারে।
তবে আওয়ামীলীগের একটি অংশ তাদের মনপূত প্রার্থী না হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে এগিয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচন জমজমাট করে তুলতে পারে বলে জানিয়েছে সূত্র। প্রসঙ্গত, ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ চলবে আওয়ামী লীগের। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার জনপ্রনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভায় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। আগামী ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এন.এইচ/জেসি