বুধবার   ০৪ অক্টোবর ২০২৩   আশ্বিন ১৯ ১৪৩০

টার্গেট করেই তরিকুলের উপর হামলা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

 

# শামীম ওসমান জামানত হারাবে বলায় এই হামলা : সাখাওয়াত হোসেন
# সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করছি : রফিউর রাব্বি
# এটা দেউলিয়া হওয়ার একটি বহিঃপ্রকাশ : হাফিজুল ইসলাম
# দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন : নিখিল দাস

 

 

গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজনের উপরে অতর্কিত হামলার প্রতিবাদে বর্তমানে নানা মুখী আলোচনা-সমালোচনাসহ ক্ষোভ তীব্র নিন্দ্রার ঝড় বইছে। এছাড়া ও নেতাকর্মীরা ভাষ্য দিয়ে যাচ্ছে গত ২ দিন আগে চুনকা পাঠাগারে গণসংহতি আন্দোলনের এক সভায় তরিকুল সুজন আওয়ামী লীগের সাংসদকে নিয়ে বলেছিলেন সুষ্ঠ নির্বাচন হলে আর তার জামানত থাকবে না। এই কথার পরিপ্রেক্ষিতেই তার উপরে এই সাংসদের সন্ত্রাসী বাহিনীরাই তার উপরে এমন অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।

 

যার সুষ্ঠ বিচার ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সুধিমহল। জানা গেছে, গত রবিবার ১৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮ টায় কলেজ রোডের মোড়ে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন তরিকুল সুজন হঠাৎ তোলারাম কলেজের দিক থেকে ২/৩জন লোক এসে তার উপরে হামলা করে। এতে সুজন গুরুত্বর আহত হন। এরপরই গণসংহতি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষনিক বিক্ষোভ মিছিল করেন। এই ঘটনায় তরিকুল সুজন বাদি হয়ে জীবনের নিরাপত্তায় ফতুল্লা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

 

প্রসঙ্গত, গত ১৬ সেপ্টেম্বর আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগারে গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানকে নির্বাচন নিয়ে চ্যালেঞ্জ করার কারণেই এই হামলা হয়েছে। এর পরপরই গণসংহতি আন্দোলণ নারায়ণগঞ্জ জেলার নেতৃবন্দরা তাৎক্ষনিক প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে এই হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় তারা শ্লোগান দেন সমন্বয়কের উপর হামলা কেন প্রশাসন জবাব চাই, আওয়ামী লীগের গুন্ডারা হুশিয়ার সাবধান, ছাত্রলীগের রিয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলে রিয়াদের আস্তানা ভেঙ্গে দেয় ঘুরিয়ে দাও।

 

এমনকি তারা সকলেই এটা হামলরা প্রতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগার ও মিলনায়তনে আয়োজিত এক সভায় গণসংহতি জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে একজন সংসদ সদস্য আছেন যিনি বললেন তিনি সকালে উঠে কাশি দিলেই নারায়ণগঞ্জ সাফ হয়ে যাবে। আমরা বলতে চাই। নারায়ণগঞ্জ গুন্ডা পান্ডা ও সন্ত্রাসের নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার জন্য আপনি দায়ী নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে নাগরিকদের লাশ ভেসে বেড়ায়।

 

তুর্কীর মত কিশোরের লাশ এই শীতলক্ষ্যায় পাওয়া গেছে। আমরা কেবল ত্বকী হত্যার বিচারের জন্য লড়াই করছি না। আমরা লড়াই করছি আশিক, চঞ্চল, ভুলু, মিঠু সহ সহ অসংখ্য মৃত্যুর দায় আপনাদেও ঘাড়ে বর্তায়। সুতরাং বাহাদুরি করবেন না। গর্জন দিবেন না। আপনি যে বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সেটার হিস্টোরি আছে, বাংলাদেশের মানুষ পালায় না। 'আপনাকে বলতে চাই, আপনার বাহাদুরী সুষ্ঠু নির্বাচনে এসে দেখান। দেশে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে আপনার ইলেকশনে জেতা অসম্ভব। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় শামীম ওসমানের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। আমরা নিশ্চিত হয়েই বলি।

 

আজকে যারা গুন্ডাপান্ডা এবং সরকারের দোসর। তাদের কারও জামানত টিকবে না। শামীম ওসমানকে বলতে চাই। যদি সৎ সাহস থাকে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নামেন এবং দেখেন আপনার জামানত টিকে কিনা। আমরা লড়াই করছি ঐক্যবদ্ধ ভাবে। এই লড়াই মানুষের জীবন জীবিকা ও ভবিষ্যতের। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের উপর হামলা, মামলা, নির্যাতন ও হয়রানী করে রেহাই মিলবে না। এই ব্যবস্থা দেশের গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয়। আমরা এই লড়াই চালিয়ে যাব। সাহস ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতেই চাই এই লড়াইয়ে আমরা জিতবো। এই লড়াই ১৮ কোটি মানুষের লড়াই। তার এই ধরনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই তার উপরে হামলা হয়েছে দাবি নেতৃবৃন্দের।

 

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান যুগের চিন্তাকে বলেন, তরিকুল সুজন একজন সৃষ্টিশীল মানুষ। তার উপরে যে এই ন্যাক্কার জনক হামলা হয়েছে এটা একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার নিন্দা জানানোর ভাষা নাই। উনি যে কারো জন্য হুমকি হতে পারে কারো হিংসার কারণ হতে পারে সেই ধরনের ব্যক্তি সে না। অথচ এখানে মূল সমস্যা হলো গত ২দিন আগে গণসংহতির একটি অনুষ্ঠান হয়েছে যেখানে আমি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলাম।

 

সেখানে এই তরিকুল সুজন নারায়ণগঞ্জের একজন সরকার দলীয় নেতা জামানত হারাবে এই ধরনের একটি বক্তব্যে দিয়েছে এই বক্তব্য দেওয়ার কারণেই তার উপরে এই ধরনের হামলা হয়েছে। আর তরিকুল সুজনরা যে রাজনীতি করে সেখানে কিন্তু কখনো কারো সাথে মারমারি ধরাধরি হয় নাই। যার কারণে আমি মনে তাদের উপরে যে হামলা করা হয়েছে এটা একটা ন্যাকার জনক ঘটনার বহিঃপ্রকাশ পেয়েছে।

 

তিনি আরো বলেন, এই দেশের যে স্বৈরাচারী সরকার বৃত্তমান আছে বলেই তারা বিরোধী সকল দলমত কে শেষ করতে চায় সেই ক্ষেত্রে যেহেতু তারা ও এই সরকারের বিরুদ্ধে ১ দফা দাবির আন্দোলনে আছে বিএনপির মতো এখন তাদের উপরে ও হামলা নির্যাতন শুরু হয়েছে। আর এই হামলা ও আমি মনে করি তারই একটা অংশ।

 

সন্ত্রাস নিমূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি যুগের চিন্তাকে বলেন, গতকাল গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজনের উপরে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে এটার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আর এই ধরনের হামলা যারা করেছে তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানাই। দেশে সকলের মত প্রকাশের স্বধীনতা রয়েছে মত প্রকাশের কারণেই যদি কারো অসুবিধা হয়ে থাকে সেখানে সে একটা পাল্টা মন্তব্য করতে পারে কিন্তু হামলা করার বিষয়টা সুন্দর ও ভালো দেখায় না। আমি আবার ও বলতে চাই এই হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করছি।

 

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিবি) নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি কমরেড হাফিজুল ইসলাম যুগের চিন্তাকে বলেন, গতকাল তরিকুল সুজনের উপরে যে হামলা করা হয়েছে। যে বা যারা এই কাজটা করেছে আমরা এটার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করছি। আর বলতে চাই যারা দেশকে একটা সন্ত্রাসীর রাজ্যে পরিণত করতে চাইতাছে এটা ভালো নয় এটা দেউলিয়া হওয়ার একটি বহিঃপ্রকাশ। আমরা চাই না নারায়ণগঞ্জে এই ধরনের সন্ত্রসী কর্মকান্ড নিয়মিত হোক। দেশে সকল পর্যায়ের মানুষের স্বাধীনতা রয়েছে। যদি কেউ সন্ত্রাসী কায়দায় এই স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চায় আমরা এটার জন্য রুখে দাড়াঁবো। গণসংহতির সমন্বয়ক তরিকুল সুজনের উপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

 

বাম নেতা নিখিল দাস যুগের চিন্তাকে বলেন, আমার মনে হয় এটা অনেকটাই নিন্দনীয় কাজ। আর তরিকুল সুজন যেহেতু এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে থাকে তাই তার উপরে এমন হামলা। আমি মনে করি এটার একটা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর