Logo
Logo
×

রাজনীতি

তৈমুর মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই!

Icon

ফরিদ আহমেদ রবি

প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৫২ পিএম

তৈমুর মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই!
Swapno


সারা নারায়ণগঞ্জে তৈমুর আলম খন্দকার নামটি সবার মুখে মুখে, সংবাদপত্রের পাতায় পাতায় তাঁকে নিয়ে বিশ্লেষণ, আলোচনা, সমালোচনা। এক কথায় এই মুহুর্তে নারায়ণগঞ্জে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ব্যক্তি তৈমুর আলম খন্দকার।

 

 

একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তৈমুর আগে থেকেই নারায়ণগঞ্জের পরিচিত মুখ।বিএনপি'র স্হানীয় নেতা থেকে দলীয় প্রধানের উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর উত্তরণ ঘটে। বিএনপি'র শাসনামলে বিআরটিসি'র চেয়ারম্যান এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন।

 

 

দলের প্রতি আনুগত্য তাঁকে এমন লাভজনক পদ পেতে সাহায্য করে।নারায়ণগঞ্জ সহ সারা দেশেই তাঁর পরিচিতি গড় উঠে বিএনপি'র নিবেদিত প্রাণ একজন নেতা হিসেবে। সেই নিবেদিত প্রাণ রাজনীতিবিদ দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিগত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং পরাজিত হন।

 

 

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় তৈমুর সহ বেশ কজন স্হানীয় নেতা দল থেকে বহিষ্কৃত হন। সারা দেশেই একই কারণে অনেকেই বহিষ্কৃত হয়।দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েও বিএনপির আদর্শে আজীবন অটল থাকার ঘোষণা দিয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন।

 

 

তাঁর কন্ঠে বিভিন্ন সময় বিএনপির আদর্শের কথা উচ্চারিত হতে থাকে, দলের প্রতিষ্ঠাতা এবং দলীয়  প্রধান সহ শীর্ষ নেতৃত্বের গুনাগুণ তাঁর কন্ঠে অহরহ উচ্চারিত হতে থাকে।কর্মী সমর্থকদের একাংশ তাঁর প্রতি অধিক সহানুভ‚তিশীল হতে থাকেন। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য শীর্ষ পর্যায়ে দেন দরবার চলতে থাকে বিভিন্ন ভাবে।

 

 

নেতৃত্বের কোন্দলে বহু উপদলে বিভক্ত নারায়ণগঞ্জ বিএনপির একটি অংশ সবসময় তাঁর পাশেই ছিল।ধরে নেয়া হচ্ছিল তাঁর প্রতিপক্ষ উপদলের কারণেই তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হচ্ছে না। তবে দলের প্রয়োজনে তা হবেই এমন বিশ্বাস তাঁর পক্ষ বিপক্ষ উভয় দলেই ছিল। এমন সংকট তৈমুর মেনে নিতে পারছিলেন না, রাজনৈতিক ভাবে অনেকটা মৃতপ্রায় হয়ে পড়েন।

 

 

বিএনপির রাজনীতিতে মৃতপ্রায় হয়ে মনে মনে হয়তো ছক কাটছিলেন কিভাবে আবার রাজনৈতিক ভাবে জীবিত হওয়া যায়! সুযোগ এসে গেল! তৈমুর সারা দেশে, বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জে আলোচনা, সমালোচনার ঘূর্ণিঝড় বইয়ে দিলেন তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে নির্বাচন কমিশনে সদ্য নিবন্ধিত দলটির মহাসচিবের দায়িত্বও পেয়ে গেলেন।

 

 

বিএনপির সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত নাজমুল হুদা প্রতিষ্ঠিত দলটির চেয়াারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে আসা সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী। সন্মেলনের আগে ভবিষ্যতবাণী ছিল আরও অনেক বড় বড় নেতা দলটিতে যোগদান করবে যাদের অধিকাংশই বিএনপির বহিষ্কৃত বা নিস্ক্রিয় নেতা। বাস্তবে তেমনটি হয়নি।

 

 

বিএনপির সাথে ভিন্নমতের কারণেই দলটির প্রতিষ্ঠা। সাধারণ মানুষের ধারণা দলটি নির্বাচনে অংশ গ্রহনের লক্ষেই এগুচ্ছে। বড় দলের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে অথবা বিরোধী দল হিসেবে অবস্হান নেয়ার লক্ষ্যে গঠিত দলে তৈমুর আলম খন্দকারের নতুন দলে যোগদান সহজেই অনুমেয়। বিএনপির ডাকসাইটে নেতার তকমা পাওয়া তৈমুর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হতে পারেননি।

 

 

সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ গ্রহণ করলেও তাঁকে প্রার্থী করার সম্ভাবনা খুবই কম, সেই আশঙ্কা থেকে এবং দলে বহিষ্কৃত অবস্থায় থাকায় এমন সুযোগ তৈমুর হাত ছাড়া করতে চান নি। নতুন দলে যোগ দিয়ে বিভিন্ন সমীকরণে নারায়ণগঞ্জ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্নও তাঁর মধ্যে কাজ করেছে বলে রাজনীতি সচেতন মহলের ধারণা।

 

 

তাঁকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে এমন আলোচনা সমালোচনার কারণ তৈমুর আলম খন্দকারের বাড়ি এবং নির্বাচনী এলাকা নারায়ণগঞ্জে।যে দলের বদৌলতে নারায়ণগঞ্জের একজন সাধারণ আইনজীবী থেকে রাষ্ট্রীয় উচ্চ পদ পেয়েছিলেন সেই দলের প্রতি সামান্যতম কৃতজ্ঞতা বোধ এবং দলীয় আদর্শের প্রতি সামান্যতম শ্রদ্ধাবোধ থাকলে এমনটি করা সম্ভব হতো না।

 

 

তাঁর যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া আসছে তার কোনটিই তাঁর জন্য ইতিবাচক নয়। তাঁর সাথে বহিস্কৃত এবং তাঁর প্রতি সহানুভ‚তিশীল অনেক নেতা কর্মী তাঁর এই ভূমিকার তীব্র সমালোচনায় মুখর হয়েছেন ।স্বাভাবিকভাবেই বলা চলে সব সময় ক্ষমতা এবং পদের মোহে আবিষ্ট তৈমুর আলম খন্দকার যে লক্ষ্য নিয়ে নতুন দলে যোগ দিলেন তা কতটা ফলপ্রসু হবে তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

 

 

রাজনীতিতে অধিক প্রাপ্তির আশায় তৈমুর আলম খন্দকার যেন স্বেচ্ছা-মৃত্যু বেছে নিলেন। তাঁর ধারণা দলে দলে কর্মী সমর্থক তাঁর নেতৃত্বে সংঘটিত হয়ে তাঁকে সাফল্যের চূড়ায় বসিয়ে দিবে।এ ধারণা যে কতটা ভ্রান্ত তা এর মধ্যেই প্রমানিত হতে শুরু করেছে। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে যতটা না একা হয়েছিলেন বর্তমান অবস্থান গ্রহণ করে তার চাইতেও বেশী একা হয়ে গেলেন।

 

 

তাঁর পরিবারের সদস্যরাও তাঁকে সমর্থন করছেননা।রাজনীতি সচেতন মহলের ধারণা তৈমুর আলম খন্দকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিকভাবে মৃত্যু বরণ করলেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের এখানেই সমাপ্তি ঘটলো। সাহিত্যপ্রেমী এক বন্ধুর মতে ; রবীন্দ্রনাথের ভাষায় কাদম্বিনী'র স্হলে তৈমুর বেিসয় বলতে ইচ্ছে করে:- 'তৈমুর মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই' ! লেখক : বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানী ও পোশাক শিল্পের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা।   এন.হুসেইন রনী /জেসি

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন