বুধবার   ০৪ অক্টোবর ২০২৩   আশ্বিন ১৯ ১৪৩০

তৈমূরের রাজনীতির অপমৃত্যু হয়েছে বলে মত বিএনপি নেতাদের

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩  


বিএনপির সাবেক শীর্ষ নেতা এড. তৈমুর আলম খন্দকার তৃণমূল বিএনপিতে যোগদানের খবরে হৈ চৈ পড়েছে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গণে। ক্ষমতাশীন দল আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাধারণ কর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছে খবরটিতে। হতভম্ব হয়েছে বিএনপির জেলার শীর্ষ নেতারাও। তারা বলছেন, বিএনপিকে ভাঙ্গন সৃষ্টি করতে তৈমূর আলন খন্দকার ‘তৃণমূল বিএনপি’তে যোগ দিয়েছেন।

 


দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দেড় বছর পূর্বে বিএনপি থেকে বহিস্কার হয় তৈমুর আলম খন্দকার। সে সময়ও অসংখ্য অনুসারী তৈমূর আলমের পক্ষে রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন। এরপর তিনি বহুবার চেষ্টা করেছেন দলটিতে ফেরার।

 

 

সর্বশেষ ১ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তার অনুসারীদের নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থ্যতা কামনায় দোয়ার আয়োজন করেছিলেন নিজ বাড়িতে। মাত্র ১৭ দিনের ব্যবধানে সেই তৈমূর আলম প্রয়াত নাজমুল হুদার দল ‘তৃণমূল বিএনপি’তে যোগ দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়েছে।

 


তৈমূর আলমের ছোট ভাই মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এখনও বিএনপির রাজনীতির সাথে রয়েছেন। তাঁর ভাগনে মো. রশিদুর রহমান রশু ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদল নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্ব পান।

 


তাই তৈমূর আলমের এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি তার ছোট ভাই মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ। তিনি জানান, তৈমূর আলম খন্দকার আমাদের পরিবারের একমাত্র ভরসাস্থল ও নীতি নির্ধারক। তবে তার বর্তমান রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সাথে আমরা একমত নই। আমি বিএনপিতেই থাকতে চাই।

 

 

হয়তো আর কোনদিন দলের কোন পদ পদবী পাবো না, এখনো প্রাথমিক সদস্য ব্যাতীত কোন পদে আমি নেই। তবুও দলের সাধারণ সদস্য হিসাবে, একজন কর্মী হিসাবে কাজ করে যাব। বিএনপি যদি আমাকে বহিষ্কারও করে তবুও আমি ধানের শীষের একজন ভোটার, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শের একজন অনুসারী ও শুভাকাক্সক্ষী হিসাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতি আস্থাশীল ও দলের সাথে থাকবো ইনশাআল্লাহ।

 

 

আমাকে ভালবাসেন এমন নেতাকর্মীদের ও নারায়ণগঞ্জবাসীকে বিভ্রান্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান রইলো। এক সময় রিকশা-ভ্যান চালকদের নেতা হিসেবে পরিচিত ছিল আইনজীবী তৈমুর আলম খন্দকারের।

 


১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। এরপর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে ছিলেন। বিএনপির চেয়ারর্পাসনের উপদেষ্টার পদও পেয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি ছিলেন বিএনপির প্রার্থী।

 

 

শেষ মুহূর্তে দলের সিদ্ধান্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে দেশব্যাপী তখন আলোচনায় এসেছিলেন। তবে বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন খন্দকার তৈমুর আলম। তাঁর এই সিদ্ধান্তের কারণে গত বছরের জানুয়ারিতে তৈমুর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি।

 


তৈমূর আলম এর দল বদলের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘রাজনীতি করাটা একটা গণতান্ত্রিক অধিকার। তিনি দীর্ঘদিন বিএনপি করেছেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। বিগত সিটি নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

 

 

তারপরও তিনি দলে ফিরে আসার জন্য নেতাদের সাথে কথাও বলেছেন এবং প্রচেষ্টাও করেছেন। হঠাৎ করে উনি এমন সিদ্ধান্ত কেনো নিলেন, এটা আমার বোধগম্য নয়। রাজনৈতিক ব্যাপারে আরও গভীর ভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হতো আমার মনে হয়।’

 


তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা। তিনি ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুই দফায় খালেদা জিয়ার সরকারে মন্ত্রী ছিলেন। তবে ২০১২ সালে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হন। এরপর ‘তৃণমূল বিএনপি’ গঠন করেন তিনি।

 


নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর খান সেন্টু বলেন, ব্যারিস্টার  নাজমুল হুদা  শাসকদলের প্রধান শেখ হাসিনার সাথে পরামর্শ করে তৃণমূল বিএনপি গঠন করেন। বাংলাদেশের জনগণ ভালো করে জানে এই তৃণমূল-বিএনপি বর্তমান শাসক শেখ হাসিনার গদিকে চিরস্থায়ী রুপ দেওয়ার জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁদের মনোনিত প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।

 

 

এই মুহূর্তে জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকা করে যারা তৃর্ণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে আগামী দিনে বাংলাদেশে নীল নকশা  জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, তাঁদেরকে বাংলাদেশে রাজনীতির অঙ্গনে  বিশ্বাসঘাতক হিসাবে চিহ্নিত করা হবে। তৈমুর আলম খন্দকার ‘তৃণমূল বিএনপিতে গিয়ে রাজনৈতিক ভাবে তার অপমৃত্যু হলো।

 


জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বলেন, ‘এড. তৈমুর আলম খন্দকার দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা কালীন কিন্তু উনাকে মূল্যায়ন করা হয়েছিলো। উনি বি আরটিসির চেয়ারম্যান ছিলো। আজকে বিএনপিকে ভাঙ্গার জন্য তৃণমূল বিএনপিতে তিনি যোগ দিয়েছেন।

 

 

আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে মিটিং হয়েছে, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এসব নেতাকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হবে। যাতে করে আর কখনো চাইলেও মেম্বার হয়ে ফিরতে না পারে। সরকারের ভোটার বিহীন নির্বাচনের প্রক্রিয়ার একটা অংশ এটা। নীতি আদর্শ নিয়ে যারা রাজনীতি করে তারা কখনো দল পরিবর্তন করে না। ‘



এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বিএনপি একটি বিরাট রাজনৈতিক দল, এড. তৈমূর আলম খন্দকারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার সাথে দলের কোন সংযুক্ততা নাই। সে সরকারের সাথে আঁতাত করে, বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্যই অন্য দলে যোগ দিয়েছেন। আজ অবধি যারা তার মতো এমন আচরণ করতে তারা নিক্ষিপ্ত হয়েছে।

 


তৈমূর আলম প্রসঙ্গ নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু ইউসুফ খান টিপু বলেন, ‘উনি আসছেন আওয়ামী লীগের ঘরোয়ানা থেকে। কারণ উনি আলী আহম্মদ চুনকার শিষ্য ছিলেন। তিনি যত ধরণের ফায়দা লুটার তিনি লুটেছেন। এখন ফায়দা লুটা শেষ তাই তিনি আবার চলে যাচ্ছেন যেখানে তার সুবিধা হবে।

 

 

তার এই কান্ডে বিএনপির কোন আপসোস নাই। উনি বিএনপিকে যা দিয়েছেন, তার থেকে চার গুন উনি ভোগ করেছেন। আজকে তৈমূর আলম খন্দকারকে বাংলাদেশের মানুষ চিনে; এটা পুরোটাই বিএনপির অবদান। এতোদিন যা নেওয়ার নিছে, এখন যেখানে সুবিধা সেখানে চলে যাচ্ছেন। তাছাড়া সে তো এমনিই আগাছা, অন্য দল থেকে আসছে।’   এন.হুসেইন রনী /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর