
নারায়ণগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভর করে দুস্কৃতিকারীরা নাশকতার তাণ্ডব চালিয়ে লণ্ডভণ্ড করে ফেলেন শহরতলী। এই আন্দোলনের সময়, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় বাস হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। এদিকে বিভিন্ন সময় বড় বড় মিছিল নিয়ে তাক লাগিয়ে ছিলেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদপ্রার্থী হওয়া বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। তাদের প্রায় সময় সিনিয়র নেতাকর্মীদের দিকে কমিটি চেয়ে আগুল তুলে হুঙ্কার দিয়েছিলেন। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় ধ্বংসাত্মক ঘটনা প্রতিরোধে রাজপথে এই সংগঠনের কাউকে দেখা মিলেনি। জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই প্রায় ৪ ঘন্টা ব্যাপী তাণ্ডব চালনো হয় নগরীর ২নং রেল গেইট এলাকায়। সে সময় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়, তার পাশেই অবস্থিত সিটি কর্পোরেশনের মিনি পার্কে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল, ১৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুরের খবর পেয়ে ও তা প্রতিরোধে আসতে সাহস পায়নি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদপ্রার্থী নেতাকর্মীরা। সকলেই দূ:সময়ে লেজ গুটিয়ে এলাকা ছেড়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই নেতাকর্মীরা
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী ছগীর আহম্মেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ভিপি জামির হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী কায়কোবাদ রুবেল, অন্যদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফিক, সোনারগাঁ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ ২ জন সভাপতি প্রার্থী বর্তমানে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পরেছেন তারা হলেন, সোনারগাঁ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি প্রার্থী ফারুক ওমর ও সোনারগাঁ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি প্রার্থী আসিফ আহমেদ আনিস। এদের মধ্যে কেউ কেউ মেয়র আইভী ও আবার কেউ কেউ শামীমপন্থী হলে ও তারা কিন্তু সকলেই আওয়ামী লীগের সাথেই জড়িত আছেন। আর শুধু জড়িয়ে থেকে দলের ক্ষমতা বিক্রি করেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। এর বাহিরে যে দলের উপর যে কোন ধরনের ঝড় বইলে তা মোকাবেলায় সব সমই পিছিয়ে থাকেন এই স্বেচ্ছাসেবক লীগে আসতে চাওয়া নেতাকর্মীরা। বিগত দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে নিজ নিজ এলাকায় ভোটার প্রয়োগে ব্যর্থ ছিলেন এই নেতাকর্মীরা। এদিকে জানা গেছে এই সকল নেতাকর্মীরা দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতায় থেকে নিজেদের আখেড় গুছিয়ে ফেলেছেন। এমনকি নানাভাবে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে ও আতাঁত রেখে নিজেদের অবস্থানই শুধু শক্ত রেখেছেন। এর বাহিরে সংগঠনের কি হলো না হলো সে বিষয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই এই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের। তা ছাড়া বর্তমানে জেলা ও মহানগরসহ বাকি ২ থানার মধ্যে বেশির ভাগই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের শামীম ওসমানপন্থী হিসেবে নিজেদের জাহির করেন। কিন্তু দলের এই ক্লান্তিলগ্নে গত ১৯ জুলাই নারায়ণগঞ্জকে দুস্কৃতিকারীদের হাত থেকে রক্ষা করতে মাঠে নেমেছিলেন শামীম ওসমান ওই সময় তার এই আস্থাভাজন নেতাকর্মীরা কোথায় ছিলো তা নিয়ে ও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী ছগীর আহম্মেদ ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী ফারুক ওমর ও আনিসুর রহমান আনিস:
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী হয়ে বসে আছেন ঢাকা কলেজের সাবেক সভাপতি ছগীর আহম্মেদ। যিনি বর্তমানে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি পদে আদিষ্ঠ রয়েছেন। একই সাথে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী ওমর ফারুক ও আনিসুর রহমান আনিস। তারা দুইজনই নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কাউসারের লোক। আবার নিজেদের এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্টজন বলে ও পরিচয় দিয়ে থাকেন। যা বিক্রি করেই সোনারগাঁয়ে বিভিন্ন কৌশলে নিজের পকেট ভারী করাই তাদের আসল কাজ। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সোনারগাঁয়ে অবস্থিত কাচঁপুর মেঘনা টোল প্লাজায় হামলা চালিয়ে রাস্তা বন্ধ রেখে ও মদনপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা অবরোধ করলে ও এই ছগীর, ফারুক ওমর, আনিসের ভূমিকা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। এদিকে গত ২৭ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৩০ তম প্রতিষ্ঠাতা বাষির্কীতে কোন ভূমিকাই ছিলো না এদের। এদিকে এই
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জামির হোসেন রনি
গত ১৮ ও ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে দুস্কৃতিকারীরা নারায়ণগঞ্জে তছনছ চালায়। সেই সময় নাশকতা ঠেকাতে ১০ থেকে ১২ জন নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জামির হোসেন রনি ১৮ জুলাই প্রথম দিনের তাণ্ডবে মর্গ্যান দিয়ে চুনকা পাঠাগারের সামনে সন্ধ্যার পর আসলে ও ৫ মিনিটের মধ্যেই আবার স্থান ত্যাগ করেন। কিন্তু তিনি নিজেকে মেয়র আইভীর হাতিয়ার হিসেবে আখ্যা দিলে ও তিনি যে ঝোপ বুঝে কোপ দেয়া নেতা হিসেবে পরিচিত তা আর বোঝার বাকি নেই। এদিকে টানা ৩ ঘন্টা ২ নং রেল গেইট এলাকার জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস ভাঙচুর করলে ও এই রনির নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা জমায়েত হয়ে তা প্রতিহত করতে আসতে সক্ষম হয়নি। তা ছাড়া গত ২৭ জুলাই ছোট পরিসরে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা জি.এম আরাফতাকে প্রধান অতিথি করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৩০ তম প্রতিষ্ঠাতা পালন করে জামায়াত-বিএনপি উদ্দেশ্য জ¦ালাময়ী বক্তব্যে দিলে ও সেদিন তিনি কোথায় ছিলেন সেই প্রশ্ন ভাসছে।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী কায়কোবাদ রুবেল
এদিকে ২ নং রেল গেইট আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের অধুরে দেওভোগ। সেখানে ও একজন মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির প্রার্থী হয়ে বসে আছেন এর মধ্যে অন্যতম দেওভোগের বাসিন্দা মেয়র আইভীর পাশেই সর্বদা সহযোগী হিসেবে লেগে থাকেন তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কায়কোবাদ রুবেল। কিন্তু দেওভোগ হয়ে কয়েক কদম হাটঁলেই ২ নং রেল গেইট আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস। কিন্তু সেদিন তিনি তার লোকজনদের নিয়ে কোন মতেই নাশকতাকারীদের প্রতিহত করে আওয়ামী লীগ অফিসের ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল ভাঙ্গা বাচাঁতে মাঠেই নামেনি। এমনকি গত ২৭ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৩০ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীকে ঘিরে সেদিন ও আত্মগোপনতা কাটিয়ে রাজপথে আসতে পারেনি এই রুবেল। তা ছাড়া কায়কোবাদ রুবেল দেওভোগের বহু বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে চলাচাল বিষয়ে অস্বীকার করে তার মামা জেলা আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ভাগিনা বিএনপির কোন নেতাকর্মীদের সাথে জড়িত না বা তাদের সাথে কোন যোগযোগই রাখে না। তিনি আরো বলেন, দেওভোগ এলাকায় প্রতিটি পরিবারে যদি দুই জন আওয়ামী লীগ থাকে তাহলে এর মধ্যে একজন বিএনপি ও রয়েছে। কিন্তু আমাদের সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আইভী ও আমাদের পরিবার এই দুই পরিবারের মধ্যে কেউ বিএনপির সাথে জড়িত নেই। আমাদের মনে প্রানে আওয়ামী লীগ।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফিক
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন শফিকুল ইসলাম শফিক। যিনি নানা সময় আলোচনায়-সমালোচনায় থাকেন তার দুই ছেলে কিশোরগ্যাং লিডার থাকায়। তা ছাড়া তিনি বারবারই তাকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সহযোগী হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন। কিন্তু গত ১৮-১৯-২০-২১ টানা চারদিন আন্দোলনকে ঘিরে সিদ্ধিরগঞ্জে ঘটে যাওয়া সহিংসতা ঠেকাতে এক পলকের জন্য দেখা যায়নি এই শফিককে। এদিকে তিনি বারবারই তার বক্তব্যে বলে থাকেন জামায়াত-বিএনপির নৈরাজ্যে ভেঙ্গে দেওয়া হবে। কিন্ত দলের এই ক্লান্তিলগ্নে কোথায় ছিলেন এই শফিক। তা ছাড়া গত ২৭ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৩০ তম প্রতিষ্ঠাতা বাষির্কীকে ঘিরে ও আত্মগোপনতা কাটিয়েছে এই শফিক। তা ছাড়া গত ১৯ জুলাই শামীম ওসমানের নেতৃত্বে নাশকতা-নৈরাজ্যে প্রতিরোধে মাঠে ছিলেন অনেকেই সেখানে দেখা যায়নি এই শফিককে। তা ছাড়া নামে-বেনামে তার দুই ছেলেকে তিনি এলাকার কিশোরগ্যাং লিডার বানিয়েছেন। সেই গ্রুপের অনেকেই চিটাগাং রোডের এই আন্দোলনে সহিংসতা কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলো বলে ও শোনা গেছে। এদিকে জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন ও ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক শফিকের সেই সুবাদে হয়তো বিরোধী দলীয় নাশকতা ঠেকাতে মাঠে ছিলেন না এই শফিক। কিন্তু কেন্দ্র থেকে চেয়ে রেখেছেন থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির পদ।