দেলোয়ারকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি

যুগের চিন্তা অনলাইন
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:১৩ পিএম

# একসময় একই ভাষায় কথা বলতেন গোলাম আজম : এমএ রশীদ
# বারবার বেয়াদবি করবে, আমরা তাকে ক্ষমা করবো এটা হতে পারে না : ইব্রাহীম কাশেম
# জাতির কাছে আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে : শালিমা হোসেন শান্তা
# দেলোয়ার প্রধানতো আওয়ামী লীগ করে না : সানাউল্লা সানু
বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধানের বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবমাননা করে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দরের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এমনকি তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন নেতৃবৃন্দ।
বিশেষ করে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগসহ কলাগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ দেলোয়ারের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ঘৃণা প্রকাশ করেছেন। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে তার এই বক্তব্যে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং কলিজায় আঘাত লেগেছে বলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।
তাদের প্রশ্ন হলো দেলোয়ার প্রধান একটি ইউনিয়নের তিনবার চেয়ারম্যান হওয়ার পরও সে কিভাবে বলে যে বঙ্গবন্ধুকে জানে না, শেখ হাসিনাকে জানে না। এ জন্য তাকে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তারা তীব্র থেকে তীব্রতর কর্মসূচী গ্রহণ করতে বাধ্য হবেন। এ ধরণের বক্তব্যে সে চরম বেয়াদবের পরিচয় দিয়েছেন উল্লেখ করে এ ধরণের বেয়াদবকে চেয়ারম্যান হিসেবে রাখা যায় না বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।
কলাগাছিয়া ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সভাপতি আসিফ মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তি করলে আমরা মেনে নিতে পারি না। আমাদের কলিজায় আঘাত লেগেছে। আপনি কলাগাছিয়া ইউনিয়নের শত শত কোটি টাকার উন্নয়নের কথা বলেন, অথচ সে উন্নয়ন যে দিয়েছে সেই জননেত্রী শেখ হাসিনাকেই আপনি বুঝেন না বলে আপনি চরম বেয়দবির একটা কথা বলেছেন।
ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোক্তার উদ্দিন মুক্তু বলেন, উনি বঙ্গবন্ধুকে তার কন্যাকে না বুঝলে উনি নির্বোধ, অযোগ্য, অবুঝ। এধরণের অবুঝ লোককে দিয়ে কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাজ চলবে না। এ সময় কলাগাছিয়া যুবলীগের পক্ষ হতে তার বক্তব্যে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, জতির পিতাকে না চিনলে, প্রধানমন্ত্রীকে না চিনলে আমরা তার অপসারণ চাই। বন্দর থানা সিএনজি থ্রি হুইলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মৃধা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যে অপমানিত করে সে নিজেই অপমানিত হয়ে যায়। তাদের অস্তিত্ব এমনিতেই বিলীন হয়ে যায়।
কলাগাছিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম কাশেম বলেন, দেলোয়ার প্রধান বক্তব্য প্রত্যাহার করুক আর না করুক, আমরা তার চেয়ারম্যান পদ থেকে অবসান চাই। আমরা স্বউদ্যোগে সাংসদ, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সকলের কাছে দরখাস্ত করবো, আমরা তার অবসান চাই।
যিনি আওয়ামী লীগ বিএনপি কিছুই চিনেন না, জামায়াতের মদদ দাতা, আমরা তার অবসান চাই। যে বারবার বেয়াদবি করে আমরা তাকে ক্ষমা করবো এটা হতে পারে না। গাজীপুরের মেয়রের পদ যাইতে পারলে উনারটা যাবে না কেন? কলাগাছিয়া ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক আকতার হোসেন (বিএ) বলেন, দেলোয়ার প্রধানকে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে। দেলোয়ার প্রধানের ঘটনাকে নেক্কার জনক উল্লেখ করে বন্দর উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শালিমা হোসেন শান্তা বলেন, আপনি কার জন্য চেয়ারম্যান হয়েছেন।
আপনি যে ওসমান পরিবারের কথা বলেছেন তারাও বঙ্গবন্ধুকে ও তার কন্যাকে শ্রদ্ধা জানান। আপনার ভিতরে পাকিস্তানীদের প্রেতাত্মা ভর করে আছে। জাতির কাছে আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে। আমি আমার নেত্রীর কাছে আহবান জানাচ্ছি তিনি যেন স্বয়ং বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে কঠোর পদক্ষেপ নেন।
বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশীদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করতে পারে এই যোগ্যতা দেলোয়ার প্রধানের নাই। একসময় একই ভাষায় কথা বলতেন গোলাম আজম। জামায়েতে ইসলামের গোলাম আজম বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্বকে স্বীকার করেননি। তাই বলে বঙ্গবন্ধু তার বঙ্গবন্ধু থেকে এক ইঞ্চিও বিচ্যুত হননি। জাতিসংঘ বঙ্গবন্ধুর একটি ভাষণকে সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলাপ আলোচনা কিংবা সমালোচনা হলেও তা হয় গঠনমূলক।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার জন্য আলাপ আলোচনা হয়। কিন্তু আমি এমন নিকৃষ্ট আলাপ আলোচনা আগে আর শুনিনি। তাই এটা একমাত্র গোলাম আজমের মতো লোকের সাথেই তার তুলনা করা চলে। জাতীয় পার্টির নারায়ণগঞ্জ এবং বন্দরে যারা দায়িত্বশীল পদে আছেন আমি তাদের আহবান জানাবো, সবার কাছে আমার একটি আহবান থাকবে, যে নাকি বঙ্গবন্ধুর নামে এতবড় কথা বলতে পারে এবং বঙ্গবন্ধুকে ছোট করতে পারে, অবজ্ঞা করতে পারে তাকে তড়িৎ গতিতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক ও বন্দর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানু বলেন, দেলোয়ার প্রধানতো আওয়ামী লীগ করে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হল জাতির জনক, সবার চেয়ে ঊর্ধ্বে। কোন রাষ্ট্রই রাষ্ট্রের জনককে নিয়ে কোন প্রকার মন্তব্য করতে পারে না। এটাই সারা পৃথিবীর নিয়ম। তাই তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) বিরুদ্ধে এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য না।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী হল রাষ্ট্রের প্রধান তাকে নিয়ে অবমাননামূলক বক্তব্য দেওয়া আমি মনে করি সঠিক হয়নি। বিষয়টা নিয়ে অবশ্যই তিনি বিব্রত উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা তীব্র ভাষায় এর প্রতিবাদ করি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আমরা রাজনীতি করি, বঙ্গবন্ধুর সূত্র ধরেই তারা নেতা এবং চেয়ারম্যান হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে নারায়ণগঞ্জে জাতীয় পার্টি থেকে কেউ চেয়ারম্যান হতে পারত না। তাই বলা চলে, শেখ হাসিনার বদৌলতেই তারা চেয়ারম্যান। তাই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যদি তারা কটুক্তি মূলক কোন কথা বলে, আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই।
সে যখন দলীয় শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কাজ করবে তখন তার পদত্যাগের দাবি জানাবো। সে যদি আওয়ামী লীগ করে এবং আওয়ামী লীগ করার পরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলে, তখন তাকে বহিষ্কার করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা জাতীয় পার্টির বিষয়ে দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তবে আমরা এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে বলতে পারি, যেন ব্যবস্থা নেয়। যেহেতু আমরা শরিক দল এবং শরিক দলের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যে বক্তব্য দিয়েছে তার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।