Logo
Logo
×

বিশেষ সংবাদ

নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইয়ে এত ভুলের দায় কার

Icon

করীম রেজা

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:১০ পিএম

নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবইয়ে এত ভুলের দায় কার
Swapno

 

শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। কিন্তু কোনও গবেষণার  প্রাপ্ত ফলাফল টেকসই বলে প্রমাণিত হয়নি। বিশেষ করে সরকার পরিবর্তনের পর দেশের শিক্ষা নীতি নিয়ে শুরু হয় টানা হেচড়া। দেশ বিদেশের তাবৎ সব পন্ডিত ব্যক্তি আদাজল খেয়ে বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের সর্বাধুনিক প্রেসক্রিপশান তৈয়ার করেন।

 

 

দুঃখজনক সত্য হলো সব ক্ষেত্রেই কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আবার নিরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিগণ বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে বোঝাতে চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে না।

 

 

সম্প্রতি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে পাঠ্যপুস্তক নতুন ভাবে লেখা হয়েছে। মিডিয়ায়, সংবাদপত্রে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন বই পুস্তকে নানারকম ভুল বিভ্রান্তি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।  শেষ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন।  

 

 

এই ভুল স্বীকারের মধ্য দিয়ে পুস্তক রচনার সঙ্গে জড়িত লেখক সম্পাদকদের দায়িত্বহীনতা, অযত্ন, সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় না রাখার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ অথবা বিষয়ে নিয়ে যারা ভাবনা চিন্তা করেন তারা সুনির্দিষ্ট ভাবে বই রচনায় ভুলত্রুটি নির্দেশ করছেন।

 

 

অতীতে দেখা গেছে শিক্ষা উন্নয়নের মহান উদ্দেশ্যে শিক্ষা ব্যবস্থায় নানা রকম উন্নত আধুনিক সময়োপযোগী তথা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।  কিন্তু তত্ত্বগতভাবে সেই সব পরিকল্পনা উদ্যোগ যতখানি আধুনিক, বিজ্ঞান ভিত্তিক মনে করা হয়েছে; বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তার সুফল পাওয়া যায়নি।  

 

 

দেখা যায় পাবলিক পরীক্ষার মান নির্ধারণে বিভাগ ভিত্তিক ফলাফল বাতিল করে পয়েন্ট ভিত্তিক ফলাফল চালু করা হয়, যা এখনো চলমান জিপিএ নামে।  এতে করে শিক্ষার মান কতটা উন্নত হয়েছে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। একসময় সপয় বা বহু নির্বাচনী প্রশ্নের মাধ্যমে নতুন পরীক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।  উদ্দেশ্য ছিল মহৎ।

 

 

লক্ষ্য ছিল গাইড বই, সহায়ক পুস্তক ইত্যাদির ব্যবহার কমিয়ে আনা বা রহিত করা। কিন্তু বাস্তবে গাইড বইয়ের  ব্যাপক প্রসার ওই ব্যবস্থায় না কমে বরং বেড়েছে।  টিক দেওয়া বা বৃত্ত ভরাট করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মান যাচাইয়ের ব্যবস্থা চালু করা হয়। পরে সেই ব্যবস্থা রহিত করে সৃজনশীল নামের এক নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়।  কয়েক বৎসর পর তার কার্যকারিতাও পাওয়া গেল না।

 

 

তার ফলে এই বৎসর থেকে অর্থাৎ ২০২৩ সন থেকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন পাঠ্যক্রম চালু করা হলো।  চালুর শুরুতেই পাঠ্যপুস্তকে ভুল তথ্য পরিবেশন, দুর্বল ভাষা, অপ্রয়োজনীয় বা অনুপযুক্ত ছবির ব্যবহার প্রভৃতি বিষয় থেকে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে অযত্ন, অবহেলা, স্বল্পতম সময়ে কোনরকমে কাজ শেষ করার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।

 

 

“সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান দুটি বই রয়েছে। ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের (তৃতীয় পৃষ্ঠা) শুরুতে তুলে ধরা হয়েছে, জীববৈচিত্র্য কী।. . . .আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি সুন্দরভাবে তুলে ধরা হলেও, এটি যেখান থেকে লেখকেরা তুলে এনেছেন, তার সূত্র মূল লেখায় উল্লেখ না করা হলেও, কয়েক মিনিটে গুগলে বলে দিচ্ছে, এই কয়েকটি বাক্য হুবহু ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ডট ওআরজি ((যঃঃঢ়ং://বফঁপধঃরড়হ. হধঃরড়হধষমবড়মৎধঢ়যরপ. ড়ৎম/ৎবংড়ঁৎপব/নরড়ফরাবৎংরঃু) থেকে নেওয়া হয়েছে।” প্রআ/১৯/১/২৩। বই রচনায় অদক্ষতা বা অযত্নের বিষয়টি এ থেকে সহজে অনুমান করা যায়।  

 

 

ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি বইতে এ পর্যন্ত ৪৮টি ভুল পাওয়া গেছে (দেরূ/১৯/১/২৩)।  শুধু ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণির বই নয় নবম শ্রেণীসহ অন্যান্য শ্রেণীর বই-পুস্তকেও নানা ভুল-ত্রুটির বিষয় আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসছে। একই পত্রিকার খবরে নবম শ্রেণির অন্তত তিনটি বই সম্পর্কে জানা গেছে, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, পৌরনীতি ও নাগরিকতা।  

 

 

বই তিনটিতে কমপক্ষে ৯টি ভুল সংশোধনের জন্য পত্র দেয়া হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে তার পরিমাণ বাড়বে বলেই মনে করা যায়। যে সমস্ত ভুল ত্রুটি এ পর্যন্ত জানা গেছে তার জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সংশোধনী পত্র প্রত্যেক স্কুলে পাঠাবার কথা ঘোষণা করেছেন।

 

 

সেই সংশোধনী মোতাবেক পাঠ্য বইয়ের নির্দিষ্ট বিষয়টি শতভাগ সংশোধন হবে তার নিশ্চয়তা বিধানের দায়িত্ব ও পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হলেও নিশ্চিত করার দায় সম্পর্কে পরিষ্কার ভাবে কিছু জানা যায় না। “নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে লেখা সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের একটি অংশে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহার করার যে অভিযোগ উঠেছে। 

 

 

তা সত্য বলে স্বীকার করে নিয়েছেন বইটির রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান। এ জন্য তাঁরা এর দায় স্বীকার করেছেন।”(প্রআ/ ১৯/১/২৩) শিক্ষাদানের জন্য অবকাঠামোর বিষয় উল্লেখ না করেও, তিনটি অপরিহার্য উপাদানের কথা বলা যায়।

 

 

অর্থাৎ বই, শিক্ষক, শিক্ষার্থী প্রকৃতভাবে এই তিন উপাদানের সঠিক সমন্বয় না হলে যে কোন পদ্ধতি পাঠ্যক্রম, পাঠ্যসূচি সার্থকভাবে বাস্তবায়নে  অসম্পূর্ণতা, ব্যর্থতার সম্ভাবনা থেকে যায়।  তড়িঘড়ি করে নতুন পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পুস্তক রচনা করে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া হয়েছে।

 

 

অতীতে আমাদের স্কুল জীবনে দেখেছি বোর্ডের বই অত্যন্ত যত্ন নিয়ে ছাপা হত। এমন একটি সাধারণ ধারণা প্রচলিত ছিল যে, বোর্ডের বইয়ে কোনও ভুল ছাপা হয় না। ধ্রুব সত্যের মত ছিল বোর্ডের বইয়ে ছাপা বানান ও অন্যান্য বিষয়। এখন সে ধারণা একবারেই উল্টে গেছে।

 

 

বানান ত সামান্য বিষয়, তথ্যই এখন বোর্ডের মুদ্রিত বইয়ে ভুল ছাপা হয়,বিকৃত করা হয়, নিজে না লিখে তা গুগল অনুবাদের দ্বারা লেখা হয়, পুরো স্তবক বা প্যারাগ্রাফই থাকে ভুলে ভরা। অপ্রাসঙ্গিক বা অতি পরিচিত ছবির বদলে ব্যবহার করা অপরিচিত কিংবা বিদেশি কোনও ছবি।

 

 

যে সময়, শ্রম,যত্ন এবং আন্তরিক মনোযোগ দিয়ে বইগুলো লেখা দরকার, বিষয় নির্বাচন ও বিন্যস্ত করা প্রয়োজন, তা এই পরীক্ষামূলক সংস্করণে করা হয়নি বলেই বুঝা যায়।এসব দেখাশোনার যেন কেউ নেই। অতীতে বোর্ডের পাঠ্যপুস্তক রচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন স্বনামধন্য শিক্ষক পত্রিকায় কলাম লিখে থাকেন।  

 

 

তিনি প্রায়ই তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে শিশুশিক্ষার উপযোগী গ্রন্থ রচনার খুটিনাটি নিয়ে কথা বলেন। এই রকম বিশিষ্ট আদর্শস্থানীয় ব্যক্তিদের আর এখন কদর নেই। পরিবর্তে যাদের দিয়ে এই কঠিন কাজ এবং জাতি গঠনের ভিত্তি রচনার যোগান দেয়া পাঠ্যপুস্তক রচনা করা হচ্ছে, তার ফলাফল জাতি এখন লাগাতারভাবে প্রতি বৎসর চাক্ষুষ করছে।

 

 

বিবেচনা করা হয়নি প্রান্তিক পর্যায়ে স্কুলের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে প্রয়োগ সমস্যাগুলো। পত্রিকার খবরে জানা যায় মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষকদের নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষাদান বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের এখনো প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আবার কোনও প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষককে এই প্রশিক্ষনের আওতায় এখনও আনা সম্ভব হয়নি। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কাজ সম্পূর্ণ না করেই নতুন বই স্কুলে বিতরণ করা হয়েছে।

 

 

প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে একটি নামী  বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানালেন প্রবর্তিত পাঠ্যক্রম সম্পর্কে এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থেকে এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। একটি বিদ্যালয়ের পুরো শিক্ষার পরিবেশ যিনি তদারক করবেন, তারাই নতুন পদ্ধতির প্রাথমিক ধারণাইএখনও পাননি।  

 

 

তিনি আরও জানালেন পাঁচদিনের প্রশিক্ষনে প্রকৃত অর্থে প্রশিক্ষন হবে তিন দিনের। কেননা প্রথম দিন ব্যয় হবে পরস্পর পরিচয় পর্বে আর শেষের দিনে টিএ ডিএ বিতরণে ব্যস্ত থাকবে সবাই। শহরে যেমন তেমন হলেও গ্রামের স্কুলগুলোর শিক্ষকদের প্রশিক্ষনের লক্ষ্য কতটা পূরণ হবে বা কতদিনে হবে তারও কোনও পরিস্কার ধারণা করা যাচ্ছে না। শিক্ষক মহোদয় অতীতের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকেই বিষয়টি বিবেচনা করে মত প্রকাশ করেছেন।

 

 

তাছাড়া তিনি আরও নির্দেশ করেছেন যে, প্রশিক্ষিত শিক্ষকরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের বাদবাকি শিক্ষকদের প্রশিক্ষন দেবেন। তার সঠিক প্রয়োগ  বাস্তবতা নিয়েও তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। বেশ ফলাও করেই বলা হচ্ছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই সবই পরীক্ষামূলক। ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে বা থাকবে বলে সম্পাদক ও রচয়িতারা দাবীও করছেন। জানাচ্ছেন পরে এসব সংশোধন করা হবে। সেই ‘পরে’ কবে, কতদিন পরে তা কিন্তু বলেন না বা জানান না।

 

 

তাহলে এতদিনে যে শিক্ষার্থীরা ভুল বিষয়টি জানবে তা চিরজীবনের জন্যে তাদের জ্ঞানভান্ডারে থেকে যাবে। তা কে, কবে, কিভাবে সংশোধন বা দূর করবে। তাই দেরী হয়ে যাবার আগেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সময়ের কথা মাথায় রেখে। বইগুলো ফিরিয়ে নেয়ার তড়িৎ ব্যবস্থার মাধ্যমেই হয়ত ছেলেমেয়েদের ভুল শেখা থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

 

 

তাছাড়া পরীক্ষার গিনিপিগ কোমলমতি শিশুদের না বানিয়ে কাজটি শিক্ষকদের দ্বারা করলে যথাযথ হতে পারত বলে অনেক শিক্ষক, অভিভাবক মনে করেন। কেননা শিক্ষকরাই ত ভাল বুঝবেন যেহেতু শ্রেণিতে তারাই শেখাবেন, পড়াবেন, বুঝাবেন, ব্যাখ্যা করবেন। বই রচনার ক্ষেত্রে এবং পাঠ্যক্রম প্রনয়ণের ক্ষেত্রে দুই পর্যায়েই তাদের ব্যাপক সংশ্লিষ্টতা এই সব গুরুতর ভুলভ্রান্তি থেকে রক্ষা করতে সহায়ক হতে পারত।

 

 

তত্ত্ব এবং প্রয়োগ বাস্তবতা এক জিনিস নয় এটা সবাই জানে। তারপরও এদিকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। তাই দেখা যাচ্ছে তাবড় তাবড় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কয়েক বছরেই বাস্তবায়ন পর্যায়ে অকার্যকর প্রমাণ হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত অষ্টম শ্রেণির পাবলিক টাইপের পরীক্ষা পদ্ধতি রহিত করা হল। প্রাথমিকের পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণাও হয়ত অচিরেই হবে।

 

 

মাঝখানের এই কয়েক বৎসরের পরীক্ষাকালে যে শিশুদের পিষ্ট করা হলো, তাদের দেহে মনে যে অবাঞ্ছিত চাপ দেয়া হলো তার দায় কে নেবে। জবাবদিহিতার অভাবের কারণও পাঠ্যপুস্তক রচনা, সম্পাদনায় সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ববান হতে বিরত রাখে। দায়ীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। আশু কর্তব্য বইগুলো ফেরত নেয়া এবং শিক্ষা বৎসর যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, পুরনো সিলেবাস অনুযায়ী পাঠ্যক্রম চালু রাখা।   এন.এইচ/জেসি

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন