রোববার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪   আশ্বিন ২১ ১৪৩১

নবজাতকের মাথা কেটে পালিয়ে গেল ডাক্তার

সৈয়দ রিফাত

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

 

 

 

# স্বজনদের অভিযোগ, ঘটনার পরপরই পালিয়ে যান ডাক্তার!
#  ঘটনার ৩ ঘন্টায়ও তারা আমার শিশুকে দেখেনি: শিশুর বাবা
# বিষয়টি অনাকাঙ্খিত, শিশুটি সুস্থ আছে : হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

 

শুক্রবার, দুপুর দেড়টা। প্রসূতী স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে তড়িঘড়ি করে তাকে নিয়ে নগরীর খানপুর জোড়া টাঙ্কিস্থ শাহীন জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বামী রাসেল মিয়া। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে টাকা পয়সার বিষয়ে কথা সম্পন্ন হওয়ার পর বেলা আড়াইটার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় ওই প্রসূতীকে। বিকেল ৩টার দিকে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক সন্তান। 

 

তবে, জন্ম নেওয়ার প্রায় আধঘন্টা পেড়িয়ে গেলেও শিশুটিকে পরিবারের কাছে দিতে চাইছিলেন না কর্তব্যরতরা। সন্দেহ হলে, বাবা রাসেল মিয়া তাদের কাছে যান এবং গিয়ে দেখেন তার শিশুর মাথা কাঁটা! অনবরত রক্ত বের হচ্ছে।

 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সিজার করতে গিয়ে নবজাতকের মাথা কেটে ফেলেছে ডা. ফারজানা নামের একজন চিকিৎসক। এ ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠে হাসপাতালটির পরিবেশ। শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর জোড়া টাঙ্কিস্থ শাহিন জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই পালিয়ে যায় অভিযুক্ত ডাক্তার ফারজানা। ঘটনার দায় স্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, সিজার করতে গিয়ে অনাকাঙ্খিত একটি ঘটনা ঘটে গেছে। 

 

বিষয়টি ইচ্ছাকৃত নয়। আমরা শিশুর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহন করছি। শিশুর বাবা মো. রাসেল বলেন, এটা মোটেই অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনা নয়। তাদের অসাবধনাতায় আমার শিশুর মাথা তারা কেটে ফেলেছে। আমি এই ডাক্তারের বিচার চাই।

 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডা. ফারজানা যুগের চিন্তাকে বলেন, এটা খুব কমন ঘটনা। সিজার করতে গেলে অনেকসময় এই ঘটনা ঘটে। এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। একজন ডাক্তার হিসেবে পরবর্তী যা করার আমি তা করে দিয়ে এসেছি। শিশুটি এখন সুস্থ আছে।

 

এ ব্যাপারে শিশুর বাবা রাসেল মিয়া যুগের চিন্তাকে বলেন, এটা কেমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা। তারা সাবধান হয়ে কাজ করবে না। আমি ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় বসবাস করি। আমাদের এড়িয়াতে কমপক্ষে তিনটি ক্লিনিক আছে। আমি চাইলে তো সেখানেও সিজার করিয়ে নিতে পারতাম। এতো কষ্ট করে দূরে কেনো আসলাম। অবশ্যই একটু ভালো চিকিৎসার পাওয়ার জন্যে। তাহলে আমার লাভটা হলো কি এতোদূর এসে। তারা আমার শিশুর মাথা কেটে ফেলেছে। কতোগুলো রক্ত ঝরলো। কি পরিমাণ কান্না আমার বাচ্চা করেছে সেটা তো আমি দেখেছি। আমার শিশুর মাথায় চারটি সেলাই লেগেছে। আর তারা বলছে, এটা নাকি কমন ঘটনা!

 

তিনি আরও বলেন, তারা যদি সৎ হতো তাহলে অবশ্যই ঘটনা ঘটার পরপরই আমাদের জানাতো। কই তারা তো সেটা করেনি। বরং বিষয়টিকে তারা লুকাতে চেয়েছিল। ঘটনার প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর তারা শিশুটিকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে। তার উপর ঘটনার পর ডাক্তার আর আমার শিশুটিকে একবারের জন্যে দেখতেও আসেনি। ডাক্তার তো দূরের কথা হাসপাতালের কেউ পর্যন্ত একবার আসেনি।

 

এ বিষয়ে শাহীন জেনারেল হসপিটালের নির্বাহী পরিচালক মো. বিল্লাল হোসেন বাদল যুগের চিন্তাকে বলেন, আমাদের ডাক্তার ফারজানা ম্যাডাম তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত। সেখানে কর্মরত অবস্থাতেই ম্যাডাম আমাদের এইখানে সিজার করতে এসেছে। ম্যাডামের দেওয়া সময় অনুযায়ী আড়াইটার দিকে সিজার করানো হয়। সিজারের পর আমি জানতে পারি বাচ্চাটার মাথা কিছুটা কেটে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা দেখলাম এবং প্রাথমিক যেই চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন সেটা আমরা করেছি। সেলাই লেগেছে। একই সাথে তাদেরকে বুঝিয়ে বলা হয়েছে যে, এটা মেজর কোন বিষয় নয়। ঠিক হয়ে যাবে।

এই বিভাগের আরো খবর