Logo
Logo
×

স্বদেশ

নষ্ট হচ্ছে সরকারের শত কোটি টাকা

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:১২ পিএম

নষ্ট হচ্ছে সরকারের শত কোটি টাকা
Swapno


 # অকেজো জাহাজের কারণে নদীর নাব্যতা নষ্ট হচ্ছে

# বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য চাওয়ায় নাই ক্রেতা

# বর্ষায় পানিতে ডুবে থাকা জাহাজে হচ্ছে দুর্ঘটনা
 

প্রায় অর্ধশত বছর যাবত নদীর পাড়ে পড়ে আছে বিআইডব্লিউটিসি’র বেশ কয়েকটি জাহাজ। বর্ষায় এগুলো পানিরে উপর থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে থাকে ডাঙ্গায়। এর মধ্যে দুটি জাহাজ আবার পানির নিচে ডুবে আছে। এর একটি বর্ষাকালে নৌযানের জন্য খুবই বিপদজনক। তবে এই দুটিকে জাহাজ বলা ঠিক হবে না, বলা চলে জাহাজের কঙ্কাল।

 

 

বাকিগুলো বছরের বড় একটি সময় শুকনায়ই থাকে, পানিতে ভাসে শুধুমাত্র বর্ষার মৌসুমে। এসব জাহাজ এখানে প্রায় অর্ধশত বছর যাবত বিকল হয়ে পড়ে আছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। একদিকে বছরের পর বছর পানিতে থাকায় জাহাজের লোহাগুলো ঝং ধরে নষ্ট হচ্ছে।

 

 

এগুলোর ভিতর থাকা ইঞ্জিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিআইডব্লিউটিসি’র কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে খোয়া যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। তবে এর মধ্যে কিছু ছিঁচকে চোর এসব জাহাজ থেকে পুরোনো লোহা লক্কর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান তারা। আর এতে করে সরকারের শত শত কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

 


 
সরেজমিনে গোদনাইল এলাকার দক্ষিণে অবস্থিত নাসিক ১০ নং ওয়ার্ডের এম সার্কাস এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর কিনার এলাকায় পানির মধ্যে ডুবে আছে দুটি জাহাজ। জাহাজ দুটির কিছুটা অংশ পানির উপর দিয়ে দেখা যাচ্ছে। তবে সেগুলো নামেই জাহাজ। বাস্তবে তা জাহাজের খোলসের কিছু অংশ মাত্র।

 

 

এর পাশে ডাঙ্গায় এক সারিতে পড়ে আছে পাঁচটি জাহাজ। এগুলো এক সময় পানিতে থাকলেও বছরের পর বছর একই জায়গায় পড়ে থাকায় সেখানে পলি জমে নদীর বড় একটি অংশ চলে এসেছে ডাঙ্গায়। এতে করে একদিকে সরু হয়ে গেছে দেশের অন্যতম ব্যস্ত নদী শীতলক্ষ্যা তার উপর পানির নিচে ডুবে থাকা জাহাজগুলো বর্ষাকালে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়ে সৃষ্টি করছে দুর্ঘটনার।

 

 

ডাঙ্গায় থাকা জাহাজগুলোতে আবার বাস করছে ৫ থেকে ৬ জন শ্রমিক। এই জাহাজগুলোকে দেখাশোনা করার জন্য তাদেরকে বিআইডব্লিউটিসি নিয়োগ দিয়েছে বলে জানা যায়। অনেকটা ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার প্রবাদ বাক্যের ন্যায়।

 


 
আমির হোসেন নামের পাশের এলাকার এক ষাটোর্ধ বৃদ্ধ জানান, অনেক বছর যাবতই এখানে এগুলো পড়ে আছে। যতটুকু মনে আছে, তা ৪০/৫০ বছর তো হবেই। প্রথম অবস্থায় যখন এগুলো এখানে দেখেছিলাম তখন জাহাজগুলো চলাচল করার মতো অবস্থায় ছিল।

 

 

কিন্তু দীর্ঘদিন এখানে ফেলে রেখে এগুলো বাতিল করা হয়েছে। সরকারি জিনিস, তাই বলার কওয়ার কেউ নাই। তিনি আরও বলেন, বুঝেন না! এগুলো এখানে থাকলেই কর্মকর্তাদের লাভ, আর বিক্রি করে দিলেই লস। এর আগে কয়বারই শুনেছি বিক্রি করবে। কিন্ত পরে আর করেনি।

 

 

এমন দাম চায় যে, কেউ নেয় না। অথচ, বর্তমান বাজার যাচাই বাছাই করে একটি মূল্য ঠিক করলে বিক্রি হয়ে যেতো, সরকারও কিছু টাকা পয়সা পেলে দেশের কাজ হতো। এখন যে টাকায় বিক্রি করতে পারবে আর কয়েক বছর গেলে তার অর্ধেক দামও পাবে না।

 


 
হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ঘাট দিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন বন্দরের রফিকুল। তিনি বলেন, আমার বয়স প্রায় ৪৫ বছর। আমি খুব ছোট থাকতে এই ঘাট দিয়ে পারাপার করি। আমার যতটুকু মনে পড়ে আমি সেই ছোট থাকতেই এই জাহাজগুলো এখানে দেখছি। বেশ কয়েক বছর আগে এখানে ডুবে থাকা জাহাজের জন্য বেশ কয়েকটি নৌযানকে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়েছিল বলে জানান তিনি।

 

 

এখন শুষ্ক মৌসুম বলে সেই ডুবো জাহাজকে দেখা যাচ্ছে। বর্ষাকালে এগুলো পানির নিচে ডুচে থাকে। তাই চোখে পড়ে না। তিনি আরও জানান, শীতলক্ষ্যার নদীর তীর ঘেঁষে এধরণের একাধিক জাহাজ পড়ে আছে। এক সময় এগুলো মেরামতের যোগ্য ছিল, তখন বিক্রি করতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যেত।

 

 

এখন এগুলোর কিছু অংশ নষ্ট হয়েছে পানিতে। আর শুনেছি এসব জাহাজের যন্ত্রপাতিগুলো নাকি বড় বড় কর্মকর্তাদের পেটের ভিতর চলে গেছে। জাহাজের লোহা-লক্করও যে যেভাবে পারে নিয়ে যাচ্ছে।  এন.হুসেইন/জেসি

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন