না.গঞ্জে চার বছরে হাজার মানুষের আত্মহত্যা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৭ পিএম

মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায় মায়ের সঙ্গে ঝগড়া হয় অনেকবার। কিন্তু দিনমজুর বাবার পক্ষে এত দ্রুত ফোন কিনে দেওয়া সম্ভব ছিল না। সেটা ওই কিশোরীকে বারবারই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন মা। তবে ওই সময় তার কাছে মনে হয়েছিল, ‘ফোনটাই বুঝি সব’। কিন্তু পরে তার সেই ভুল ভেঙেছে।
আত্মহত্যা করতে গিয়ে খুঁজে পেয়েছে জীবনের মানে। এখন তার কাছে মোবাইল ফোন খুবই সামান্য বিষয়। আত্মহত্যা করতে গিয়ে বেঁচে ফেরা নারায়ণগঞ্জের ইসদাইর এলাকার এক কিশোরী জানাচ্ছিল তার অভিজ্ঞতা। কথাগুলো বলা তার জন্য সহজ ছিল না। মুখে কথা আটকে যাচ্ছিল। অশ্রুশিক্ত নয়নে তার শেষ কথাটি ছিল, ‘গলায় দড়ি দিয়ে বুঝলাম সবই ছিল ভুল।’
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই এমন ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে ফতুল্লার তল্লা এলাকায় স্ত্রীর টিকটক করা নিয়ে অভিমান করে এক যুবক ফেসবুকে লাইভ চালু রেখে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ তাৎক্ষণিক ছুটে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
পুলিশ ও হাসপাতাল রেজিস্টারের তথ্যমতে, চলতি বছর নারায়ণগঞ্জে (৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত) আত্মহত্যার ঘটনায় ২৭৮টি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ২০২২ সালে হয়েছিল ২৯৪টি; এর মধ্যে ১৮ বছরের নিচে ছিল ৪৮ জন। ২০২১ সালে ২৩৮টি আত্মহত্যার ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়; এর মধ্যে ১৮ বছরের নিচে ছিল ৫৩ জন। ২০২০ সালেও এ সংখ্যা কম নয়। ওই বছর ২৩৬ জন আত্মহত্যা করেন বলে পুলিশের তালিকায় উল্লেখ করা হয়। সে বছর ৬৩ জনই ছিল ১৮ বছরের নিচে।
প্রতিটি ঘটনাতেই অপমৃত্যু মামলা হয় জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বেশির ভাগ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দেওয়া হয়। জেলায় অস্থায়ী বাসিন্দাদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় আত্মহত্যার সংখ্যাও বাড়ছে। এ সংখ্যা কমানো না গেলে ভবিষ্যতে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’
পারিবারিক কলহ, সম্পর্কের বিরোধ থেকে শুরু করে তুচ্ছ ঘটনায় বিগত সময়ের তুলনায় জেলায় আত্মহত্যার প্রবণতা ব্যাপক হারে বেড়েছে বলে মনে করেন সরকারি তোলারাম কলেজের উপাধ্যক্ষ জীবনকৃষ্ণ মদক। বলেন, ‘কর্মস্থলে অনেকে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। এমন নানা কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এতে আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলার সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, ‘আত্মহত্যা এখন সামাজিক ব্যাধি হয়ে গেছে। প্রতিদিন মানুষ মরছে। আগে এ জেলায় দুর্ঘটনা বেশি থাকলেও এখন আত্মহত্যাই বেশি। বিশেষ করে ফেসবুকে সম্পর্কে জড়িয়ে অনেকে এ পথ বেছে নিচ্ছে। এ প্রবণতা কমাতে হলে স্থানীয় প্রশাসনের এখনই উচিত স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে গ্রামে গ্রামে এর কুফল সম্পর্কে সচেতন করা। না হলে একসময় এটি মারাত্মক আকার ধারণ করবে।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক জানান, বিষয়টি আসলেই চিন্তার। এ নিয়ে স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া হবে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ও পরিবারে এর কুফল সম্পর্কে জানাতে হবে। এস.এ/জেসি