
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জে ভয়াবহ ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব ঘটনায় ৩৫ জন পুলিশ ও সাতসাংবাদিকসহ কয়েকশত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে এই পর্যন্ত ২০০ এর বেশি সংখ্যক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক জানান, ‘বিভিন্ন স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিরূপণ করতে নারায়ণগঞ্জের গণপূর্তের নির্বাহীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পরিপূর্ণ তথ্য নিরূপণের পর বলা যাবে। তবে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, ‘ভাঙচুর লুটপাটের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে আমরা বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছি। এখনো নানাস্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’
বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ক্ষতিগ্রস্ত সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ শহর, শহরতলি, সাইনবোর্ড, চিটাগাংরোডে বিভিন্ন স্থাপনায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে শুধু ফতুল্লার এসবি গার্মেন্টেই ১২৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে। কর্তৃপক্ষ জানায়, ঘটনার সময় তৃষ্ণার্থ শিল্প পুলিশ সদস্যদের পানি পান করিয়েছিলেন গার্মেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দুর্বৃত্তরা তাদের গার্মেন্টে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাসপোর্ট অফিসে ভাঙচুর লুটপাট অগ্নিসংযোগে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে পাসপোর্ট অফিসে থাকা ৮ হাজার পাসপোর্ট পুড়ে গেছে। লুট করে নিয়ে গেছে পাসপোর্ট অফিসে থাকা কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ নানা সরঞ্জাম।
পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ পিবিআই(পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) অফিস ভাঙচুরসহ পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর ও নথিপত্র লুটপাট করা হয়েছে। একই সড়কের জালকুড়ি বিজিবি ক্যাম্প লাগোয়া নারায়ণগঞ্জ শীতল এসি বাসের ২৬টি বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে মালিকপক্ষ প্রায় ১৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। বিজিবি ক্যাম্পের একটু সামনে শিল্প পুলিশ ক্যাম্প ভাঙচুর, আনসার বাহিনী ক্যাম্প ভাঙচুর, জালকুড়ি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, ও নমপার্কে অগ্নিসংযোগ লুটপাট ভাঙচুরে প্রায় শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় ‘হাই স্পিড’ নামে একটি স্পিড বোট কারখানায় অগ্নিসংযোগে প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চিটাগাংরোডের শিমরাইল এলাকায় ইব্রাহিম শপিং কমপ্লেক্স ও প্রিয়ম নিবাসের ১০তলা ভবনের ডাচবাংলা ব্যাংক, রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল ও মার্কেটে দেয়া আগুনে এই ভবনেই প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া হাজী সেলিম গোডাউনে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, চিটাগাংরোড ও সাইনবোর্ড এলাকায় কাভার্ড ভ্যান, বসুন্ধরা সিমেন্টের ৮টি কংক্রিট মিক্সার ট্রাকসহ বিভিন্ন যানে অগ্নিসংযোগসহ ৩০টি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। শিমরাইলে হাইওয়ে ট্রাফিক পুলিশের ব্যারাকে অগ্নিসংযোগ, সাইনবোর্ডে মিতালী মার্কেটে ভাঙচুর, লুটপাট, শিমরাইলে সৌদিবাংলা শপিং কমপ্লেক্সে ভাঙচুর, লুটপাট, হামদর্দ বিল্ডিং ভাঙচুর, লুটপাট, এসএন সুপার মার্কেটে ভাঙচুর লুটপাট, ফজর আলী গার্ডেনে লুটপাট ও ভাঙচুরে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।