Logo
Logo
×

রাজনীতি

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে পরিবর্তনের আভাস

Icon

অর্ণব হাসান

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:২৮ পিএম

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে পরিবর্তনের আভাস
Swapno

 

# জাতীয় পার্টি বছরের শুরুতেই বেকায়দায়
# আওয়ামীলীগে ব্যাপক প্রতিযোগিতা

 

এই বছরকে নির্বাচনের প্রচারণার বছর হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে রাজনীতি মাঠ উত্তপ্ত হয়ে আছে। এক দিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি একে পর এক কর্মসূচি দিয়ে মাঠ গরম করে যাচ্ছে। অপর দিকে ক্ষমতাসীন দল টানা চতুর্থ বারের মত ক্ষমতায় থাকার জন্য ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারনায় মাঠে নেমে মানুষের কাছে ভোট চেয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির মাঠও গরম হচ্ছে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন নিয়ে এখন থেকেই আলোচনা চলছে। সেই সাথে এবার এখানে নির্বাচনকে সামনে রেখে জটিল সমীকরন করছে প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামীলীগ চায় নির্বাচনের বর্তমান ধারাবাহিকতায় অব্যাহত রাখতে, বিএনপির দাবী নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আর জাতীয় পার্টি অনেকটা সুবিধাবাদী পার্টির চরিত্র অবলম্বন করছে। জানাযায়, আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টি মহাজোট গঠন করে টানা দুই বারের জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছেন লিয়াকত হোসেন খোকা। পাশাপাশি তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবেও দলীয় ভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

 

আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টি ২০১৪ সনে মহাজোট গঠন করায় ক্ষমতাসীন দল এই আসনটি ছেড়ে দেয়। তখন আওয়ামী লীগ থেকে এখানে কোন প্রার্থী ছিল না। অপর দিকে বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহন না করায় লিয়াকত হোসেন খোকা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করায় তখন বিএনপি থেকে আজহারুল ইসলাম মান্না মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী লিয়াকতস হোসেন খোকার সাথে পরাজিত হন। এখানে আরেক স্বতন্ত্রপ্রার্থী বর্তমান সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতকে বসে পরার জন্য বাধ্য করা হয়। তিনি বাধ্য হয়ে নির্বাচনে বসে পড়েন। আর এতে করে অতি সহজে জয় ক্ষমতাসীনদের শরীক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা।  

 

কিন্তু এই এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ তারা টানা ৯ বছর যাবৎ অবহেলিত হয়ে আছে। আবার কেউ কেউ দিনে আওয়ামী লীগ রাতে জাতীয় পার্টির এমপির সাথে পিরিত রাখে বলে বিভিন্ন সভায় মন্তব্য করে থাকেন। তাই ২০১৮ সনের নির্বাচনের পর থেকে নারায়ণগঞ্জ ৩ আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়ার দাবী জানিয়ে আসছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন নিয়ে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বরর সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিন নারায়গঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। সেই সাথে তিনি বলেন, শহরের এক প্রভাবশালি সোনারগাঁ ৩ আসনে হস্তক্ষেপ করেন। তিনি কোথাকার এক জাতীয় পার্টির ব্যক্তিকে এনে এখানকার এমপি বানিয়েছেন। যার কোন নিশানা ছিলনা। তখন তার এই বক্তব্যে যেন সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা স্বস্তি পান।

 

খোজঁ নিয়ে জানা যায়, গত বছর সোনারগাঁ ৩ আসন সোনারাগাঁ রয়েল রিসোর্ট মামুনুল হক কান্ডে জাতীয় পার্টির এমপি সমর্থকতের হাতে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা মাইরধরের শিকার হন বলে জানান স্থানীয়রা। তখন এই ঘটনায় সোনারাগাঁ থানায় ৩টি মামলা হয়। সেখানে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম ইকবালকেও আসামী করা হয়। এছাড়া ওই এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা অনেকটা জিম্মি হয়ে আছে বলে তাদের অভিযোগ। এদিকে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ-ঐতিহ্যের দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনটি। তাই আগামী নির্বাচনে এ আসনে কারা হচ্ছেন রাজণৈতিক দলগুলোর প্রার্থী তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। আর এই সকল জল্পনাকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দেয় নানা হিসাব-নিকাশ ও বিশ্লেষণ।

 

আগামী নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বর্তমান সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চাইবেন তা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। অপরদিকে এই আসন থেকে সাবেক সাংসদ কায়সার হাসনাতের তেমন কোন বিকল্প না থাকায় আওয়ামীলীগের মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি সবচেয়ে শক্ত দাবিদার। এছাড়াও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর নামও শোনা যাচ্ছে। বিপরীতে, বিএনপি থেকে মনোনয়ণ প্রত্যাশী হিসাবে সোনারগাঁ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নানের নাম এককভাবে শোনা গেলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে প্রার্থীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহলের মতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যদি এককভাবে অংশ নেয়, সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বর্তমান সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা জাতীয় পার্টির মনোনয়ন চাইবেন এ বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে ভোটের লড়াইয়ে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে তিনি খুব একটা পাত্তা পাবেননা বলে মনে করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল। এছাড়া এবার তারা মহাজোটে না থাকায় আওয়ামী লীগ থেকেও আগের মত ছাড় পাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দল থেকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সাংসদ কায়সার হাসনাত প্রার্থী হলে তাহলে জাতীয় পার্টির এই জনপ্রতিনিধির জয়ী হওয়া কঠিন হয়ে যাবে। তবে তিনিও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ছেড়ে দিবেন না। কেননা এবার আগে থেকেই সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা মাঠ গুছিয়ে নিয়েছেন। এই দিক দিয়ে তার সাথে আওয়ামী লীগ বিএনপি কেউ ধারে কাছে নেই।

 

কিন্তু স্থানীয়দের মতে, এবার খোকার অবস্থান অনেকটা নড়বড়ে কেননা গত দুটি নির্বাচনে ভোটের লড়াই না থাকায় এবং আওয়ামীলীগ-জাতীয় পার্টির জোটের কারণে তিনি বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী দিলে এবং বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে সাংসদ হওয়ার সুযোগটি তার হাতছাড়া হতে পারে বলে জানান স্থানীয়রা। এই আসনটি মুলত আওয়ামীলীগ ও বিএনপির ভোটব্যাংক হিসাবেই অধিক পরিচিত, আর তাই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে লড়াই হবে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় প্রার্থীদের মধ্যে। এখানে সাবেক সাংসদ হিসাবে কায়সার হাসনাত অতীতেও দায়িত্ব পালন করেছেন। আর এজন্য তার এখানে বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে।

 

এছাড়া সাবেক সোনারগাঁ ৩ আসনের সাবেক প্রয়াত এমপি মোবারক হোসেনের ছেলে এরফান হোসেন দীপও আলোচনায় আসেন। তিনি নৌকা মনোনয়নের জন্য বিভিন্ন ভাবে দৌড়ঝাপ করছেন। তারও ভালো ভোট ব্যাংক তৈরী হয়ে আছে। কেননা ইতি পূর্বে এরফান হোসেন দীপের পিতা মোবারক হোসেন এখানকার এমপি নির্বাচিত হয়ে জনপ্রতিনিধিত্ব করেছেন। তাই তিনিও আলোচনায় আছেন। কিন্তু হাসনাত পরিবার খুবই শক্তিশালী একটি পরিবার। তিনি নিজে সাবেক সাংসদ, তার বাবা একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবীদ, চাচা ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। সবকিছু মিলিয়ে সোনারগাঁয়ে এই পরিবারের প্রভাব এখনো অক্ষুন্ন বলে মনে করেন স্থানীয় জনগণসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।

 

যদিও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের একটি বলয় রয়েছে সোনারগাঁয়ে, যারা কায়সার হাসনাতকে খুব একটা পছন্দ করেন না এবং তার বিরোধীতাও করেন। তবে নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগের বেশীর ভাগ নেতাকর্মীই কায়সার হাসনাতের পক্ষে রয়েছেন। এছাড়া সম্প্রতি শামীম ওসমানের সাথে কায়সারের দুরত্ব অনেকটাই কমে এসেছে বলেও দেখা গেছে।

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবার নারায়ণগঞ্জ- ৩ আসন নিয়ে জটিল সমীকরণ থাকায় এবং মামুনুল হক কাণ্ডে জাতীয় পার্টি বিতর্কিত হওয়ায় এই আসনের জনপ্রতিনিধি অনেকটা চাপে সময় পার করছেন। এছাড়া তারা এবার আওয়ামী লীগের সাথে না থাকলে তাদের শনির দশা হতে পারে বলে মনে করেন সচেতন মহল। অপর দিকে ক্ষমতাসীনরা এখানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামায় তাদের প্রার্থীরা শক্ত অবস্থানে আছে। তাই এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ জোটেই নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে পরিবর্তন হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন রাজনৈতিক মহল।

এস.এ/জেসি 

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন