
নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র রাজনীতিতে সবসময় সরব থাকতো আড়াইহাজারে। সাবেক কেন্দ্রীয় পদ ধারী দুই দলের দুই নেতা এমপি নমিনেশনের জন্য নানা ইস্যুতে নিজ দলের অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকতো। তবে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে থেকেই নিজ দলেই কোনঠাসা হয়ে পড়েন ওই দুই নেতা। সাবেক কেন্দ্রীয় যুব লীগ নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আড়াইহাজারে রাজনৈতিক মাঠ থেকে ছিটকে পড়ছেন। একই দশা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়া নজরুল ইসলাম আজাদের।
আড়াইহাজার এলাকার মানুষের অভিমত, এই দুই নেতা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের এমপি মনোনয়নকে টার্গেট করে কাজ করেন। ছোট-খাট ইস্যুতেও নানাভাবে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ইকবাল পারভেজ ক্ষুদ্র একটি অংশ নিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং প্রভাবশালী এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর সাথে টক্কর নেন। ক্ষুদ্র বিষয় নিয়েও কঠোর সমালোচনায় লিপ্ত হন ইকবাল পারভেজের অনুসারীরা। সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্রতা বেশি। বেশ কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেফাঁস ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও ছবি প্রদর্শণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। তবে সমালোচনা থামিয়ে রাখতে পারেনি এমপি নজরুল ইসলাম বাবুকে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে ত্বরান্বিত করে প্রশংসিত হয়েছেন এমপি বাবু। সাধারণ মানুষের সমর্থনে বর্তমানে নিজের সময়ের সবচাইতে শক্ত অবস্থানে তিনি। আর এতেই আড়াইহাজারে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছেন ইকবাল পারভেজ। তার অনুসারী অনেকেই এমপি বাবুকে সমর্থন জানিয়ে যোগদান করছেন। ইকবাল পারভেজকেও এখন আর রাজনীতির দৃশ্যপটে সেভাবে দেখা যায়না।
হঠাৎ রাজনীতিতে নিষ্প্রভ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজ জানান, কেন্দ্র থেকে সর্বশেষ যতগুলো কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিলো আমি তার সবকটিতেই আমার নেতাকর্মীদের নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম। সামনে আরো কর্মসূচি আছে সেগুলোতেও উপস্থিত থাকবো। কিন্তু যারা বলে নজরুল ইসলাম বাবুই সব উন্নয়ন করছে আড়াইহাজারে; তাঁদের আমি বলতে চাই, এতোদিন আপনারাই কিন্তু বলেছেন বাবু চোর এইটা সেইটা! কিন্তু এখন কেন সবকিছু উল্টে গেল!
অপরদিকে জেলা ও মহানগর বিএনপির হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির জন্য দুই কমিটির বেশিরভাগ নেতাই দোষারোপ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-অন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদকে। বলা হয়ে থাকে, জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির প্রেসক্রিপশনের নীল নকশা করেছিলেন নজরুল ইসলাম আজাদ। শুধু তাই নয়, যুবদল-ছাত্রদল-মহানগর বিএনপিসহ অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠন অশান্ত ও অযোগ্যদের দিয়ে কমিটি গড়ার কারিগর ছিলেন আজাদ। তবে কেন্দ্রীয় বিএনপি ও জেলা বিএনপি থেকে আজাদের সেই প্রতাপ খর্ব হয়ে এসেছে। অনেকটাই কোনঠাসা আজাদ। জেলা বিএনপির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে অভিজ্ঞ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকারের হাতে। আর নিজ উপজেলা আড়াইহাজারেও কোনঠাসা হয়ে রাজনীতির মাঠ থেকে ছিটঁকে পড়েছেন আজাদ। বিশেষ করে সাবেক সাংসদ বদরুজ্জামান খসরুর ছেলে আড়াইহাজার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মাহমুদুর রহমান সুমনের কাছে। কোনঠাসা হয়ে আজাদ অনেকটাই পর্দার অন্তরালে চলে গিয়েছেন বলে দাবি নেতাকর্মীদের। আজাদ যেভাবে জেলা ও উপজেলায় বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন, সেই ক্ষত উপশমের দায়িত্ব নিয়েছেন মাহমুদুর রহমান সুমন।
নজরুল ইসলাম আজাদের বিষয়ে আড়াইহাজার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মাহমুদুর সুমন বলেন, নজরুল ইসলাম আজাদ দলের মধ্যে শুধু যে, বিশৃঙ্খলা করে তা নয়। সে বিশৃঙ্খলাকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। নিজের আত্মীয় ও কাছের লোকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পকেট কমিটিও তৈরী করেছে। এতে দলের বদনামের পাশাপাশি প্রকৃত নেতাকর্মীরা দল থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। ক্ষমতার পুরোপুরি অপব্যবহার সে করেছে। পুরো দল জেলা ও উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন আর সেসব করার সুযোগ নেই। আমরা দলকে সুসংগঠিত করছি। জেলা ও উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীরা নজরুল ইসলাম আজাদকে ছেঁটে ফেলেছে।