পারিবারিক কবরে শ্মশানের মাটি ফেলার অভিযোগ শামীম ওসমানের

যুগের চিন্তা অনলাইন
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২১, ০৯:১০ পিএম

নগরীর মাসদাইর এলাকার নারায়ণগঞ্জ সিটি কবরস্থানে এমপি শামীম ওসমানদের পরিবারের সদস্যদের কবরগুলির উপর সিটি কর্পোরেশন শ্মশানের মাটি ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। তবে মেয়র আইভী বলেছেন, সেখানে শ্মশানের কোনো মাটি ফেলা হয়নি।
বৃষ্টিতে পানি জমায় ওসমান পরিবারের নিযুক্ত কেয়ারটেকার শামসুর মাধ্যমে নাসিম ওসমানের স্ত্রী-ই কোনো স্থান থেকে মাটি এনে তাদের কবরগুলিতে ফেলে উঁচু করেছেন। কবরে ফেলা মাটির রঙ সাদা। আর শ্মশানের পাশের পুকুর থেকে যে মাটি তোলা হয়েছে সে মাটির রঙ লাল। এমপি শামীম ওসমান অতীতের মতো আবারো সাম্প্রদায়িক উস্কানীর ঘৃন্য রাজনীতি করছেন।
সোমবার বাদ জোহর সংসদ সদস্য শামীম ওসমান তার বাবা-মাসহ আত্মীয়দের কবর জিয়ারত করতে এসে শ্মশানের পুকুর কেটে তোলা মাটি কবরগুলোর উপর দেখতে পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এসময় তাকে কবরস্থানের ইমাম বদর শাহ্রে সাথে ধমকের সুরে কথা বলতে দেখা যায়। ক্ষুব্ধ শামীম ওসমান গণমাধ্যম কর্মীদের ডেকে তার ক্ষোভের কথা বলেন।
সাংবাদিকদের শামীম ওসমান বলেন, এ ঘটনার মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের সা¤প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে। সন্তান হিসবে আমি ব্যর্থ যে আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য হয়েও বাবার মায়ের কবরের পবিত্রতা হেফাজত করতে পারিনি। সেই সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবরগুলোকে অবমাননার হাত থেকে রক্ষা করতে পারিনি। শামীম ওসমান কান্নজড়িত কণ্ঠে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, আপনারা কি সহ্য করবেন যে আপনাদের মা-বাবার কবরে শ্মশানের মরদেহ পোড়া মাটি দিয়ে কেউ ঢেকে দিলে। ওই সময় শামীম ওসমান বলতে থাকেন আমি আমার বাবার ব্যর্থ সন্তান । নাহলে এ দৃশ্য আমার দেখতে হত না। তিনি কবরগুলো পূর্বের অবস্থায় ফিরিতে আনতে সেখানে দায়িত্বরতদের ৪৮ ঘন্টা সময় দেন। এসময় শামীম ওসমান উপস্থিত সাধারণ মানুষের প্রতি জানতে চান একইভাবে তাদের পরিবারের প্রয়াতদের কবরে যদি শ্মশানের পোড়া মাটি দেয়া হয় তাহলে সেটা তারা মানবেন কিনা।
শামীম ওসমান সাংবাদিকদের আরো বলেন, আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন আমাকে ও আমার পরিবারকে ধৈর্য্য ধরার শক্তি দেন। আমি গত ২৭ জুলাই মেয়র আইভীর মা ও আলী আহমদ চুনকা সাহেবের স্ত্রী মমতাজ বেগমের কবর জিয়ারত করতে এখানে আসি। তখন দেখেছিলম শ্মশানের সংস্কার কাজ চলছে এবং এখানে মাটি পড়ে আছে। তখনও আমার বাবা মা দাদা দাদী ও মুক্তিযোদ্ধাদের কবর ঠিকঠাক ছিল। তিনি বলেন, আমি সিটি করপোরেশনকে দায়ী করবো না। আমি মনে করি এটা কোন মানুষের কাজ না, এটা ইবলিশের কাজ। 'যারা এ কাজটা করেছেন বা করিয়েছেন তাদের কাছে আমার একটাই জিজ্ঞাসা, কী লাভ হল এটা করে। আমারা বাবা মা ভাই মারা যাওয়ার পর আমার যেমন কষ্ট হয়েছিল আজকে তার চেয়ে কোন অংশে কম কষ্ট হচ্ছে না।' যারা এই কাজ করেছে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।'
কবরস্থানের মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, শ্মশানের যে পুকুরের কথা বলা হচ্ছে সে পুকুরে লাশ পোড়া ছাই ফেলা হয়না। ফেলা হয় শ্মশানের চুল্লির পেছনের পুকুরে। এছাড়া এ পুকুরের মাটি তুলে কবরস্থানের পাশে রাখা হলেও মাটি কবরে দেয়া হয়নি। শ্মশানের পুকুর সংস্কার কাজের ঠিকাদার মামুন মিয়া বলেন, আমি কবরস্থানের গেটের ভেতরে দু’টি মাটির স্তুপ জমা করি। কারণ শ্মশানের গাইড ওয়াল নির্মাণের পর দেয়ালের একপাশে ঠিকা দেওয়ার জন্য মাটির দরকার হবে।
নগরীর মাসদাইরে পাশাপাশি মুসলমানদের কবরস্থান, খ্রিষ্টানদের কবরস্থান, মেনন কবরস্থান ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শ্মশানের অবস্থান। অতি সম্প্রতি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ কবরস্থানের পশ্চিমপাশে থাকা শ্মশানের পুকুর খনন, ঘাটলা নির্মাণ ও গাইড দেয়াল নির্মাণের জন্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকার কার্যাদেশ দেয়।
এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও ৫ আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমানের দাদা খান সাহেব ওসমান আলী, দাদী জামিলা ওসমান, বাবা আবুল খায়ের মোহাম্মদ সামসুজ্জোহা, মা নাগিনা জোহা ও বড় ভাই একেএম নাসিম ওসমানের কবর রয়েছে। এছাড়া রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থ করার জন্য সংরক্ষিত এলাকা।
ঘটনাস্থলে গিয়ে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট যা বললেন
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সংসদ সদস্যের অভিযোগের পর আমরা ঘটনাস্থলে এসে জানতে পারি, কবরস্থানের কেয়ারটেকার সামসু ও সিটি কর্পোরেশনের মসজিদের মুযাজ্জিন কবরস্থান দেখাশোনা করেন। তাদের দুইজনের বক্তব্য আমরা শুনেছি। তাদের কথা অনুযায়ী সাংসদের মা বাবা ভাই, দাদাসহ পুর্বপরুষের যে কবরগুলো রয়েছে আশেপাশের জায়গা থেকে এটি একটু নীচু জায়গা। যে কারনে সেখানে বৃষ্টি হলে পানি জমে যায়। কিছুদিন আগে নাসির নামের এক ব্যক্তি কবরস্থানে এসে সাবেক সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের কবরে পানি জমে থাকতে দেখে ছবি তুলে সেই ছবি সাংসদ নাসিম ওসমানরে স্ত্রী পারভিন ওসমানের কাছে পাঠান।
তখন পারভীন ওসমান কবরস্থানের কেয়ারটেকার সামসুকে কবরস্থানে যাতে পানি না জমে সে জন্য মাটি ফেলে উঁচু করে দেয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কবরস্থানে মাটি ফেলে উঁচু করা হয়। তবে সেই মাটি শ্মানের মাটি ছিলো না। অন্য জায়গা থেকে মাটি এনে কবর উঁচু করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে একটি মাত্র জায়গা নারায়ণগঞ্জে যেখানে মুসলমানদের কবরস্থান, হিন্দুদের শ্মসান, মেননদের কবরস্থান, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধদের সমাহিত করার স্থানে একই কমপ্লেক্সে। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির অন্যন্য উদাহরন হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ। শুধু মাত্র দেয়াল দিয়ে একেক গোত্রের জায়গা নির্ধারন করে দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।
তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন শ্মসানের জায়গায় পুকুরের উন্নয়ন কাজ করছেন। যে কারনে পুকুরের মাটি কবস্থানের পাশে স্তুুপ করে রাখা হয়েছে। সেই মাটি ঠিকাদার সরিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া এছাড়া কবরস্থানের উপর যে মাটি ভরটা করা হচ্ছে সেই মাটিও সরিয়ে নিয়ে পুর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ চলছে। #