শনিবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৩   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩০

পুরোদমে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২৩  

 

# আওয়ামী লীগে হাইব্রীড আতঙ্ক, আছে চোখ রাঙানি
# দলীয় মনোনয়পত্র কেনার সুযোগ মিলছে আজ থেকে

 

 

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটিদল জাতীয় নির্বাচনের এই তফসিল প্রত্যাখ্যান করলেও আওয়ামীলীগ তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে। দলটির নেতাকর্মীরা তফসিল ঘোষণার পর আনন্দ মিছিলও বের করেছে। বিএনপি রোববার থেকে আবার ৪৮ ঘন্টার হরতাল ডাকলেও আওয়ামীলীগ সেসবকে তোয়াক্কা না করে আজ শনিবার থেকে দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করেছে।

 

আজ সকাল ১০টায় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নিজের ফরম সংগ্রহ করে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। মনোনয়ন ফরমের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। তাই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পরে মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও ফুরফুরে অবস্থানে রয়েছে। কেননা তাদের নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার প্রেক্ষিতে নেত্রীর কাছে নৌকা মনোনয়ন চাইবেন। নারায়ণগঞ্জের সবকটি আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়ার দাবি তুলেছেন আওয়ামীলীগ নেতারা।

 

মনোনয়ন কেনার ব্যাপার বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এমন একটি ধারণা থেকে নির্বাচনে মনোনয়নের জোয়ার তৈরি হতে পারে বলেও আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা মনে করছেন। আর একারণেই অনেকে আতঙ্কিত। এবার আওয়ামী লীগের টিকিট পেলেই এমপি হওয়া নিশ্চিত এই ধারণা বিভিন্ন সঞ্চালিত হচ্ছে।

 

আর এ কারণেই তারা মনে করছেন যে কোনো মূল্যে আওয়ামী লীগের টিকেট পেতে হবে। আর তাই এবার রাজনীতিবিদরাই কোণঠাসা। প্রকৃত আওয়ামীলীগারদের সাথে জাপা ও বিএনপি সংশ্লিষ্ট লোকজনও নির্বাচনের মনোনয়নের জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন এবং তারা এবার মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করবেন বলেও জানা গেছে। এর ফলে আওয়ামী লীগে হাইব্রিড আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। 

 

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, রাজনীতি এখন আর রাজনীতিবিদের হাতে নেই। সকলের মধ্যে ধারণা হয়ে গেছে যে আওয়ামী লীগের একটা টিকিট পেলেই তাদের জীবন বদলে যাবে। আর একারণেই তারা মনোনয়নের জন্য সবকিছু উজাড় করে দিচ্ছেন। এর ফলে আওয়ামী লীগের নতুন করে হাইব্রিড আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যারা দলের সত্যিকারের ত্যাগী পরীক্ষিত, তারা আবার মনোনয়নে যুদ্ধে কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারেন এমন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে আওয়ামী লীগের মধ্যে।

 

নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু, মহনগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে করে নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিবে তারা তাকে মেনে নিয়েই তার পক্ষে কাজ করে জয়ী করবে।

 

তবে নির্বাচনে মনোনয়ন প্রসঙ্গ এলেই এই আসনে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পদক এড. খোকন সাহা, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আরজু রহমান ভূঁইয়া, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ানসহ এক ঝাঁক আওয়ামীলীগ নেতা মনোনয়নপত্র কেনার ব্যাপারে উদগ্রীব। 

 

সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে আসবে এটি ধরে রেখেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। তাই কৌশলগত কারণে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে একাধিক প্রার্থীকে প্রস্তুত রেখেছে। সেই হিসেবে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী রাখা হয়েছে।

 

তবে দলীয় সূত্র মতে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের যারা টিকিট পাবেন না এরকম বহু প্রার্থীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর জন্য সবুজ সংকেত দেওয়া হতে পারে। আর এজন্য জেলার ৫টি আসনে আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের এমপি মনোনয়ন প্রার্থীরা মাঠে নেমে অবরোধি প্রতিরোধ মিছিলের মাধ্যমে শান্তি সমাবেশ করে নিজের অবস্থান তুলে ধরছেন।

 

অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনের প্রচারনায় নেমেছেন গত ১০ নভেম্বর কুতুবপুর লাকিবাজার এলাকা থেকে। যদিও তিনি একাধিক সভা সমাবেশে বার বার বলে আসছে আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে যেন সাংসদ শামীম ওসমানকে মনোনয়ন না দেয়া হয়। তাকে যেন অন্য কোন জায়গায় কাজে লাগানো হয়। কিন্তু তিনিই সকলের আগে মাঠে নেমে মানুষের সাথে কথা বলা শুরু করেছেন। তবে তার আসনে আওয়ামী লীগ থেকে ২০১৮ সনের নির্বাচনে কাউসার আহম্মেদ পলাশ দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি আলোচনায় রয়েছেন।

 

অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি জাতীয় পার্টি থেকে দখল থেকে উদ্ধার চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বর্তমানে এই আসেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম ওসমান। তিনি এখন এমপি হওয়ায় সদর বন্দরের আওয়ামী লীগের নেতারা অবহেলিত রয়েছে। আর এজন্য আসন্ন নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী রয়েছে।

 

তার মাঝে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনা রয়েছেন আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু। তিনি বন্দরের বাসিন্দা হওয়ায় সদর-বন্দরে পুরো এলাকায় তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। সেই সাথে আদালত পাড়ায় এই নেতার সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এছাড়া এখানে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনও দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জোরালো ঘোষণা দিয়েছেন।

 

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনটি ১০ বছর যাবৎ জাতীয় পার্টির অনুকুলে রয়েছে। একই ভাবে এই আসনটিও আওয়ামী লীগ উদ্ধারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে পরে লেগেছে। যদিও নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁ আসনে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বেশি প্রার্থী হওয়ায় এখানে দলীয় কোন্দল তৈরী হয়ে রয়েছে।

 

এখানকার সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত এবার দল থেকে মনোনয়ন পেতে পুরোদমে মাঠে রয়েছেন। এছাড়া সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সদস্য মাহফুজুর রহমান কালামও দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন তার সমর্থকরা জানিয়েছেন। এছাড়া এরফান হোসেন দীপও মাঠে রয়েছেন।

 

তাছাড়া গত কয়েক দিন আগে সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান সামসুল ইসলামও দল থেকে নৌকা চাইবেন বলে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষনা দিয়েছেন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবু জাফর চৌধুরীও বিভিন্ন ভাবে উঁকিঝুঁকি মারছেন। আওয়ামী লীগের সাথে জাতীয় পার্টির জোট না থাকায় এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এমপিদের কপাল পুড়তে পারে।

 

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনটি টানা তৃতীয়বারের মত আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। এখানে কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসা নজরুল ইসলাম বাবু এমপি হিসেবে রয়েছেন। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনে তার সাথে পাল্লা দিতে তার দল থেকে একাধিক প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।

 

তার মাঝে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল পারভেজ আলোচনায় রয়েছেন হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে মমতাজ উদ্দিন মাঠে রয়েছেন। তাছাড়া উড়ে এসে জুড়ে বসতে নতুন হিসেবে কৃষকলীগ নেতা হাবিব মোল্লা মাঠে উঁকিঝুঁকি মারছেন।

 

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে এখনো পর্যন্ত শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে গাজী গোলাম দস্তগীর আলোচনায় রয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে তিনি পুরোদমে মাঠে রয়েছেন। তবে তার সাথে প্রতিযোগিতায় থেকে দল থেকে মনোনয়ন পেতে আলোচনায় রয়েছেন রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া।

 

তবে এখানে একজন ব্যবসায়ী কিংবা ভিন্ন কেউ আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। তবে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাইও এই আসনে আওয়ামীলীগের যোগ্য দাবিদার বলে মনে করেন এখানকার স্থানীয়রা। এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর