শনিবার   ২৭ জুলাই ২০২৪   শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

পুলিশের অভিযানে মৃত্যুর ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৮ নভেম্বর ২০২৩  

 

# এমপি খোকার সাথে নিহতের পরিবারের গোপন বৈঠক
# পরিবার অভিযোগ প্রত্যাহার করায় অপমৃত্যু মামলা
# পুলিশের সাথে নিহতের সখ্যতা ছিল বলে স্থানীয়দের দাবী

 

 

পুলিশের অভিযানের সময় পোল্ট্রি ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযানে অংশগ্রহণ করা তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা।

 

অন্যদিকে পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে নিহতের পরিবার। ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের মৃত্যুর বিষয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কারো বিরুদ্ধে কোন প্রকার অভিযোগ নেই বলে জানিয়েছে তার মেয়ে শিল্পী আক্তার। 

 

মৃত্যু নিয়ে পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় গতকাল মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাকে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তাই এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় নিহতের জামাতা মো. জাহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। 

 

নিহত নুরুল ইসলামের মেয়ে শিল্পী আক্তার ও মিথিলা মঙ্গলবার বিকেলে জানান, তাদের বাবার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে তাদের কোন প্রকার অভিযোগ নেই। এক পর্যায়ে ওই বাড়ি থেকে চলে আসার অনুরোধ করেন। কথা বলার এক পর্যায়ে তারা জানিয়েছেন রাতেই এ বিষয়টি মিমাংসা হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কথা বলতে চান না। 

 

এলাকাবাসী জানান, নুরুল ইসলামের বাড়িতে সোমবার দুপুরে পুলিশ আসার পর তার ছোট ভাই শামসুল আলম ও প্রতিবেশী ইমরানসহ কয়েকজন গিয়েছিলেন। নুরুল ইসলাম এক সময় মাদক ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিন বছর আগে তার ওপেন হার্ট সার্জারি হওয়ার পর এ ব্যবসা কিছুটা কমিয়ে দেন। পুলিশের সঙ্গে তার সখ্যতা ছিল বলে জানান তারা। তালতলা পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা নিয়মিত তার বাড়িতে আসতেন বলেও জানান তারা। 

 

সোমবার দুপুরে ২টার দিকে তালতলা ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ইলিয়াস আহমেদ, কনস্টেবল আবুল কালাম ও রুকনুজ্জামান সাদা পোশাকে নুরুল ইসলামের বাড়িতে আসেন। তার কিছু সময় পর নুরুল ইসলামের বাড়িতে চিৎকার চেচামেচি শোনা যায়। পরে গ্রামবাসী তার বাড়িতে যান। 

 

নাম না প্রকাশের শর্তে বেশ কয়েকবার স্থানীয় ব্যক্তি জানান, নুরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের কাছে পুলিশ এক লাখ টাকা চায়। টাকা না দিলে চলমান রাজনৈতিক মামলায় নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখায়। ভয়ে তার স্ত্রী প্রথমে ১০ হাজার, পরে আরও ৯ হাজার টাকা দেন। টাকা নিয়ে পুলিশ নুরুল ইাসলামের হাতের হাতকড়া খুলে দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।

 

পুলিশ যাওয়ার পর দেখি নুরুল ইসলাম ঘরে খাটের মধ্যে পড়ে আছে। তার দুই মেয়ে অচেতন অবস্থায় ডাকতে গিয়ে দেখে সে আর কথা বলে না। এরপর আড়াইহাজার হাসপাতালে নিয়া গেলে ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে পুলিশের সঙ্গে নুরুল ইসলামের ধ্বস্তাধন্তি হয় বলেও জানান তারা। 

 

এ ঘটনার পর বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী ও স্বজনরা একটি ঘরে তিন পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে দীর্ঘ ৫ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর সন্ধ্যা ৭ টার দিকে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-অঞ্চল) শেখ বিল্লাল হোসেন ও সোনারগাঁ থানার ওসি মাহাবুব আলম তাদের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে তাদেরকে ছাড়িয়ে নেন।

 

স্থানীয়রা জানান, রাত সাড়ে আটটার দিকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা ঘটনাস্থলে যান। দরজা বন্ধ করে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনি প্রায় আধা ঘন্টার মতো বৈঠক করেন।

 

বৈঠক শেষে সংসদ সদস্য উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশ্যে বলেন, নুরুল ইসলামের মৃত্যু নিয়ে তার পরিবারের কোন অভিযোগ নেই। তারা থানায় কোন প্রকার মামলা করবে না। ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাকে দাফন করা হবে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

 

সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা নুরুল ইসলামের পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছেন। সংসদ সদস্যের বক্তব্যের পর এলাকার লোকজন ওই বাড়ি ছেড়ে চলে যান।

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা বলেন, নুরুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাড়িতে যাওয়া তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় নানা ধরনের অভিযোগ উঠার কারণে তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর