Logo
Logo
×

জনদুর্ভোগ

প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৪ পিএম

প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম
Swapno

 

# নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে চিনি, আলু, আদা-রসুন ও ডিমের দাম

 

 

প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্য পন্যের দাম। চাল, ডাল, তেল, নুন সহ সকল প্রকারের খাদ্যমূল্য এবং সব ধরনের পন্য মূল্য কেবল বেড়েই চলেছে। মাছ, মাংস, দুধ এবং ডিম এখন সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে। ফলে নিন্মবিত্তরাতো বটেই মধ্যবিত্তদেরও বেঁচে থাকা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।

 

বাজারে কাটছাট করে জীবনযাপন করছে মানুষ। তার উপর অব্যাহত ভাবে বাড়ছে ডলারের মূল্য। আর ডলারেই সকল প্রকারের পন্য সামগ্রী আমদানী করতে হয়। যার ফলে প্রতি দিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সব কিছুর দাম। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পরেছে। পরিস্থিতি আসলে কোন দিকে যাচ্ছে কেউ বলতে পারছে না।

 

সম্প্রতি ভারত পিয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসা মাত্রই দেশের বাজারে বেড়েছে পিয়াজের দাম। অথচ দেশে এই মুহূর্তে পিয়াজের কোনো সংকট নেই। পাশাপাশি নতুন করে উত্তাপ ছড়াচ্ছে চিনি, আলু, আদা-রসুন ও ডিমের দাম। গত এক মাসে ভোক্তার পকেট থেকে অতিরিক্ত শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। এ ছাড়া হাতবদল হয়েও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। 

 

গত কয়েক বছর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাজারে পণ্যের দাম বাড়লেই ব্যবসায়ী নেতারা আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। ঘোষণা দেন, চাহিদার অতিরিক্ত পণ্যের মজুত থাকায় কোনো পণ্যেরই দাম বাড়বে না। বাণিজ্যমন্ত্রীও তখন মানুষকে আশ্বাসের বাণী শোনান। তারপর বাজারে গিয়ে ভোক্তারা বোকা হতে শুরু করেন। একই চিত্র চলছে বছরের পর বছর। সরকারি দু-একটি সংস্থা কোনো কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে নামমাত্র জরিমানা করছে। এতে জরিমানার অর্থ তুলতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

 

বিশ্লেষকরা জানান, সরকারি হিসাব বলছে- দেশে বেশকিছু নিত্যপণ্যের যথেষ্ট মজুত রয়েছে। দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। মূলত সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ায় আমদানিকারক, পাইকার ও আড়তদাররা। এই চক্রই পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। এই চক্র ভাঙতে পারলেই বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে মনে করেন তারা।

 

এছাড়া এই সিন্ডিকেট চক্র বেশির ভাগ ক্ষমতাসীন দলের সুবিধাভোগী। মনে হচ্ছে চক্রটিকে ভোক্তার পকেট কাটতে সুযোগ করে দেয় নীতি নির্ধারকরা। অসাধুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। তবে দাম বাড়ার জন্য এজন্য বড় প্রতিষ্ঠান ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করছেন আড়তদাররা। বিক্রেতারা সরবরাহ সংকটকে দায়ী করলেও সরকারের নজরদারির দুর্বলতাকেই দায়ী করছেন সাধারণ ক্রেতা। তাদের মতে, নজরদারি না থাকার সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। 

 

সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের আয় যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হারে বাড়ছে ব্যয়। যা আয় হচ্ছে তার প্রায় সবই খাদ্যপণ্য কিনতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য খরচ করার মতো টাকা হাতে থাকছে না। 

 

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। চাল-তেল থেকে মাছ-সবজিসহ প্রায় সব নিত্যপণ্য নিয়েই বাজারে চলছে কারসাজি। বাজারে চিনির দাম নিয়ে কারসাজি। সরকার দাম কমানোর ঘোষণা করলেও বাজারে উল্টো বাড়ে। এদিকে আগে ১৮০ টাকা কেজি বিদেশি আদা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। তারপরও লাভ থাকছে না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

 

কিছুদিন আগেও কাঁচা মরিচ নিয়েও হয়েছে লঙ্কাকাণ্ড। বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ১০০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। রসুনের দাম বেড়ে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি বিআর-২৮ চাল কিনতেও খরচ হচ্ছে ৬০ টাকা পর্যন্ত। খোলা আটার কেজি ৫০ টাকার ওপরে রয়েছে।

 

ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রাণিজ আমিষের এই উৎস দুটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারাই দাম বাড়াচ্ছে আবার প্রয়োজনে তা কমাচ্ছে। তাই এই চক্র ভাঙা এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় মুরগি ও ডিমের মূল্য আরও বাড়তে পারে। বর্তমানে বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ টাকার বেশি।

 

পত্রিকার খবর থেকে জানা গেছে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, অসাধু চক্র সুযোগ পেলেই সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। আর ভোক্তার পকেট কাটে। বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলকে আরও শক্তিশালী করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। 

 

অনেকেই বলছেন, দাম বাড়ানোর জন্য খুচরা-পাইকারি ব্যবসায়ীরাই কি শুধু দায়ী? বড় আমদানিকারক, শিল্প গ্রুপ, যারা তেল, চিনির মতো খাদ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযানের খবর কি শোনা গেছে কখনো? কতো টাকায় আমদানি করে কতো টাকায় তারা পণ্য বাজারে ছাড়ছে, কীভাবে সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে বাজারে দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সেসব বিষয় খতিয়ে দেখার প্রয়োজন মনে করছে না সরকার, কেননা ব্যবসায়ীদের এই উঁচুপর্যায়ের সিন্ডিকেটের অর্থের জোর বেশি, ক্ষমতাও বেশি। এরাই প্রতি বছর বাজেটের আগে ব্যবসায়ীরা কর-সুবিধা নেয়ার জন্য তদবির শুরু করেন। 

 

এদিকে গত ২৬শে জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খাতে ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় বিরোধী দলের সদস্যদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন- এ কথা ঠিক যে বড় বড় গ্রুপগুলোই একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে। কিন্তু একটা জিনিস মনে রাখা দরকার, জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম, সেটা হয়তো করা সম্ভব। কিন্তু তাতে যে সংকটটা হঠাৎ করে তৈরি হয়, আমাদের তো সেটা সইতে কষ্ট হয়। আমরা চেষ্টা করি আলোচনার মাধ্যমে, নিয়মের মধ্যে থেকে কিছু করতে।

 

বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের বিষয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সিন্ডিকেটে হাত দেয়া যাবে না কে বলেছে? আমি জানি না। যখনই দ্রব্যমূল্য বাড়ে তখনই আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এরপর ওই সাংবাদিক জানান, এটি বলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তখন শেখ হাসিনা বলেন, আমি বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধরবো। 

 

সংবাদ সম্মেলনে সরকার প্রধান বলেন, আমাদের খাদ্যপণ্য নিয়ে কয়েকটা হাউস ব্যবসা করে। তারা যখন কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ায় আমরা তখন আমদানি করি। বিকল্প ব্যবস্থা করি, যাতে তারা বাধ্য হয়ে দাম কমায়। সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিই। সিন্ডিকেট থাকলে সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না এটা কোনো কথা না। কে কতো বড় শক্তিশালী সিন্ডিকেট আমি জানি না। এটা আমি দেখবো। ব্যবস্থা নেবো।

 

এরপর বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, সংবাদ সম্মেলনের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই ঘণ্টা ছিলাম। কিন্তু বাজারে সিন্ডিকেটের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। উনিও জিজ্ঞেস করেননি বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

 

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন, কী মিন (বোঝাতে) করেছেন সেটা তিনি ভালো জানেন। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। বাজারে সিন্ডিকেট আছে, ভাঙা হবে এ ধরনের কোনো কথা আমি কোথাও বলিনি। এর আগে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছিলেন, মন্ত্রীদের ভেতরেও একটি সিন্ডিকেট আছে। তারা সব খাতেই প্রভাব বিস্তার করে।

 

ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, বিশ্ববাজারের কারণে যদি কোনো পণ্যের দাম বাড়ে ১০ শতাংশ, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে সে পণ্যের দাম বাড়ে ৮০-৯০ শতাংশ। প্রতিটি পণ্যেই রয়েছে বাজার সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেট ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দেশের মানুষের পকেট ফাঁকা করছে, অথচ কোনো প্রতিকার মিলছে না। এ বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এস.এ/জেসি

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন