
বাবা মা দুজনেই করোনা যোদ্ধা। বাবাতো ফ্রন্টলাইনে করোনার সাথে যুদ্ধ করছিলেন। বাবাকে ওরা কমই কাছে পেত। সব সময় বাবার অভাবটা মা পূরণ করার চেষ্টা করতেন। ওদেরকে বোঝাতেন তোমার বাবা সাধারণ মানুষের জন্য জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে করোনার সাথে যুদ্ধ করছেন।
আদরের সন্তানরা মায়ের কথাতেই সান্তনা পেত। জরুরী প্রয়োজন না হলে ওরা খুব একটা বাবার সান্নিধ্যে আসতোনা। আজ বাবা-মা দুজনেই হাসপাতালে। বাড়িতে ওরা একা। আত্মীয়-স্বজন থাকলেও বাবা-মা যে নেই। মনে সারাক্ষণ একটা শংকাও কাজ করে।
বাবা-মা দুজনেই করোনায় আক্রান্ত। ওরা সারাক্ষণ মহান আল্লাহপাকের দরবারে দোয়া করছে বাবা-মা দুজনেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন এবং ওদেরকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিবেন।
প্রিয়পাঠক, করোনা যোদ্ধা ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার ও তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে স্কয়ার হাসপাতারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাবা-মায়ের এমন অসুস্থ্যতার সময়ে তাদের ফিরে আসার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে খোরশেদের ৩ সন্তান।
কাউন্সিলর খোরশেদ ও তার স্ত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই তার ৩ সন্তান তাদের নানা বাড়ীতে অবস্থান করছে। তাদের দু’জনকে কাছে না পেয়ে সন্তানরা এখন বাবা-মায়ের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে।
করোনা বীর কাউন্সিলর খোরশেদের তিন সন্তান। এর মধ্যে বড় ছেলে ইসতিয়াক আলম খন্দকার নকিব নারায়ণগঞ্জ আদর্শ স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র, মেজ মেয়ে তানিয়া খন্দকার নাবিলা আদর্শ স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ও ছোট মেয়ে নুসাইবা খন্দকার খুশি একই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে।
করোনার শুরু থেকেই বাবা করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে থাকায় তাদের থেকে আইসোলেট থাকতেন ফলে তারা দীর্ঘদিন বাবাকে দূর থেকেই দেখতেন এবং মায়ের কাছেই থাকতেন।
আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে শনিবার (৩০ মে) নিজেই করোনায় আক্রান্ত হন খোরশেদ। এর আগে গত ২৩ মে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা। এদিকে তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলে শনিবার দিনগত রাতে তাকে কাঁচপুরের সাজেদা ফাউন্ডেশনে ভর্তি করান খোরশেদ। পরে সেখান থেকে ৩১ মে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে সস্ত্রীক ভর্তি হন তিনি।
অপরদিকে বাবাকে দূর থেকে দেখতে পেলেও এখন আর সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি মাও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এমন অবস্থায় মা-বাবার জন্য দোয়া করেই সময় কাটছে সন্তানদের। পাশাপাশি মামাসহ পরিবারের অন্যরাও তাদের সাহস দিচ্ছেন।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে করোনার সংক্রমনে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হওয়ার পূর্বেই সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন জনপ্রিয় এই কাউন্সিলর। শুরুতে নিজস্ব পদ্ধতীতে হ্যান্ড সেনিটাইজার বিতরণের মধ্য দিয়ে সামাজিক ও মৌলিক দায়িত্ব নিজ কাধে তুলে নেন খোরশেদ। তবে মূল দায়িত্ব শুরু হয় যখন সমগ্র নারায়ণগঞ্জকে লকডাউন ঘোষনা করা হয়।
সেই সময় অনেক দিনমজুর ও মধ্যবিত্ত পরিবার উপার্জনের রাস্তা বন্ধ হওয়ায় দরুন অনাহারে দিন অতিবাহীত করছিলো। ঠিক সেই সময় নাসিকের এই কাউন্সিলর মাস্ক, খাদ্য, সবজি সহ আনুসাঙ্গিক অন্যান্য সহায়তা সহ তার বিশাল কর্মী সমর্থকদের সন্বয়ে এলাকায় এলাকায় ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন।
অপর দিকে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা মানুষদের লাশ যখন নিজ পরিবারের সদস্যরাও অবজ্ঞা সহ লাশ ফেলে রেখেছিলো সেই সময় কাউন্সিলর খোরশেদ ও তার টিম মানবতার ডাকে সারা দিয়ে করোনায় আক্রন্ত হয়ে নিহত ব্যক্তিদের লাশ দাফন কাফনে এগিয়ে আসেন।
তার এই লাশ দাফশ শুধু মসলিমদের মধ্যে সিমাবদ্ধ ছিলোনা। খোরশেদ ও তার টিম সনাতন ধর্মের মানুষদের সৎকার করেছে। একে একে দীর্ঘ সাড়ীর লাশ দাফন সৎকার করার পর নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় খোরশেদ। বাদ যায়নি তার স্ত্রী আফরোজা খন্দকার লুনা।
একটি সূত্রে জানা গেছে, করোনয় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা কাউন্সিলর খোরশেদ ও তার স্ত্রীকে খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তার পরিবার ও নিকট আত্মীয়। পরিবারের দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে থাকায় খোরশেদের পরিবারের মাঝে নেমে এসেছে শূন্যতা।