Logo
Logo
×

বিচিত্র সংবাদ

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে

Icon

জাহাঙ্গীর কবির

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৩৪ পিএম

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
Swapno


কেউ কথা বলছে না!  এ দেশে কি ১০ জন এমপিও নেই যারা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করবে? ১০ জন সচিবও কি নেই যারা একত্রিত হয়ে এটি নিয়ে কথা বলবে? ১০ জন ইউএনও কি এক হতে পারেনা যারা এটি নিয়ে জোড়ালো পদক্ষেপ নিবে?

 

 

১০ জন জেলা প্রশাসকও কি অনুধাবন করতে পারছেনা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে। এদেশেকি ১০ জন বুদ্ধিজীবীও নেই যারা একত্রিত হয়ে জাতীয় এই সমস্যাটি সমাধানের উদ্যোগ নিবে? আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ৫ম শ্রেণির একটা ছাত্র  লিখতে পারে না,

 


# আমরা দাঁতের যত্ন নিই কেন?
# আমাদের বাড়ির আঙ্গিনা পরিস্কার রাখা দরকার কেন?
# পরিবেশ কি?
# পরিবার ও প্রতিবেশীর প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি কি?

 

 


এগুলি লিখতে পারে না কারণ এগুলি এখন আর বইয়ে নেই। ছাপা হচ্ছে না, এগুলি তুলে দেয়া হচ্ছে। কি সব উদ্দীপক টুদ্দীপক জাতীয় লেখা দিয়ে ভরিয়ে দেয়া হচ্ছে সেটার কোন অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও উদ্দেশ্য নেই।

 


আজ থেকে ১২/১৩ বছর আগেও একজন এসএসসি পাশ মা তার সেভেন এইট পড়ুয়া বাচ্চাকে নিজেই সকল বিষয়ে পড়াতে পারতেন। কাজের ফাঁকে বাবা সপ্তাহে বা পনেরো দিনে একবার বাচ্চার পড়া দেখিয়ে দিলেই বাচ্চারা ভালো ফল করতো। এখন ডিগ্রি পাশ একজন মাও তার সিক্সের বাঁচ্চাকে পড়াতে পারে না।  পড়াশোনা থেকে কবিতা মুখস্থ তুলে দেয়া হয়েছে, শব্দার্থ মুখস্থ তুলে দেয়া হয়েছে, সারমর্ম, সারাংশ, কবি পরিচিতি, লেখক পরিচিতি এগুলি আর পড়াশোনার মধ্যে নেই।

 


নিজে নিজে পড়ার নামে যে ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে সেই ব্যবস্থার কারণে বাচ্চাদের পড়াশোনা ধ্বংসের মুখে। সৃজনশীল শিক্ষার নামে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা মরনশীল হচ্ছে।

 


আমি চ্যালেঞ্জ করছি বাংলাদেশের কয়েকজন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী মন্ত্রীকে ( শিক্ষামন্ত্রীসহ যাদেরকে আমি ছবিতে উল্লেখ করেছি)  যদি উন্মুক্ত মঞ্চে ক্লাস সিক্সের ছয়টি বই দিয়ে বলা হয় আপনারা উক্ত বইগুলি থেকে নির্দিষ্ট অধ্যায় পড়ে ৬ টি করে প্রশ্নের উত্তর লিখবেন। সময় দেয়া হবে ৬০ মিনিট। উনারা পারবেন না।

 

 

আমি জোর দিয়েই বললাম উনারা পারবেন না যতই উনারা পিএইচডি ডিগ্রিধারী হোক। পারবেন না এই কারণে যে আমাদের বইগুলির সব কিছু এতটাই অকাজের ও জগাখিচুরি  করে তৈরি করা হয়েছে যেখানে প্রশ্নেরও ঠিক নেই,  উত্তরেরও ঠিক নেই।

 

 

যে বই পড়ার পরে পিএইচডি ডিগ্রিধারীদেরও তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর লেখার ক্ষমতা হবে না  সেই সিস্টেমের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা ধ্বংসের নীলনকশা  ছাড়া কিছু না। যারা এই সিস্টেম চালু করেছে তারা নিজেরাও এই কনসেপ্ট ক্লিয়ার না। সেই সাথে যারা এই বইগুলি সম্পাদনার কাজে যুক্ত  তারাও জানে না  তারা কি লিখছেন।

 


শিক্ষার এই বেহাল অবস্থার জন্য দায়ী নীতিনির্ধারণী ফোরামের হুটহাট সিদ্ধান্ত। কিছুদিন পর পর কোন গবেষণা ছাড়াই একেকটা সিস্টেম চালু করা হচ্ছে এবং মেধার অপচয় করা হচ্ছে।  শিক্ষার মত সংবেদনশীল বিষয়টিতে কোন পরিবর্তন আনতে চাইলে সেটা নিয়ে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এর কোন বালাই নাই।

 


সত্যি বলতে কি স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে গত ১০/১২ বছরের শিক্ষার মান সবচেয়ে খারাপ। গত ১৫ বছর ধরে প্রাইমারি ও হাই স্কুল পরিচালনার দায়িত্বে থাকায় বাংলাদেশের শিক্ষার সেকাল-একাল দেখেছি খুব কাছ থেকে । বর্তমান সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন করলেও শিক্ষার মানোন্নয়নে তেমন কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি।

 

 

পর পর দুজন প্রভাবশালী মন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকলেও মানের কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারেননি । প্রতি বছর লাখ লাখ জিপিএ ফাইভ  বাড়লেও মান বাড়েনি ১ গুণ। মাঝে মাঝে আশা জেগে উঠতো, মনে হতো আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মায়েদের রান্নাঘর থেকে শুরু করে সংসদ ভবন পর্যন্ত সকল খবর রাখেন।

 

 

একদিন তার চোখে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্বংসাবশেষ চোখে পড়বে। কিন্তু একে একে ১৫টি বছর কেটে গেলেও তিনিও এদিকে সুদৃষ্টি দিলেন না। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের দায় সবার উপরই বর্তাবে। দায় এড়ানোর কোন ফাঁক ফোকর কেউ পাবেন না।

 


আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। চারপাশ ডুবে যাচ্ছে। একজন শিক্ষক হিসেবে চোখের সামনে লাখ লাখ নিষ্পাপ শিশুদেরকে নৌকাডুবিতে মৃত্যু দেখা ভয়ংকর যন্ত্রণা ও কষ্টের। এই ধ্বংসাবশেষে দাঁড়িয়ে এখনো আশাবাদী কেউ একজন এই শিশুদের রক্ষা করতে আসবে। আমাদের ডাক দেয়া দরকার, হাক ছাড়া দরকার, একে একে একত্রিত হওয়া দরকার।  এন.হুসেইন রনী /জেসি

জাহাঙ্গীর কবীর
পরিচালক
আলোর ভুবন মডেল হাই স্কুল

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন