
# শামীম ওসমানে বিশেষ বার্তা নিয়ে পলাশের অফিসে তাঁর অনুসারীরা
# ৩ ঘন্টার রুদ্ধদ্বার সভা নিয়ে শহর জুড়ে নানা গুঞ্জন
কথায় আছে ‘বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়’। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার আগে এমন চিত্রই যেন দেখা যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় প্রায় ১৫ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে নিজ দলের এক নেতা আরেক নেতাকে প্রতিদ্বন্দ্বি মনে করে মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ ছিল। কিন্তু যখনই নির্বাচন ঘনিয়ে আসে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে অনেকে মনোনয়ন কেনেন।
তখন প্রতিদ্বন্দ্বীকে বস করতে নানা রকম কৌশল নেন আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী। এমনই চিত্র দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন কেনার পর। এই আসনে প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা ও বর্তমান সাংসদ শামীম ওসমানের বিপরীতে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন কিনেছেন শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জননন্দিত শ্রমিক নেতা কাউছার আহম্মেদ পলাশ।
পলাশকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে শামীম ওসমানের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হয় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন সংগ্রহের পর থেকে কাউছার আহম্মেদ পলাশকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। শোনা গেছে, কাউছার আহম্মেদ পলাশের শারীরিক ব্যাপারে খোঁজ নিতে দীর্ঘদিন পর ফোনে যোগাযোগ করেছেন সাংসদ শামীম ওসমান।
এই খবর ছড়িয়ে যাওয়ার পর আওয়ামীলীগের প্রার্থী চূড়ান্ত হবার আগে তার খোঁজ খবর নিতে পলাশের কাছে ছুটে গেছেন শামীম ওসমানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত আওয়ামীলীগ নেতারা।
জনশ্রুতি আছে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের শামীম ওসমানের বিপরীতে শক্ত অস্থানে রয়েছেন পলাশ আর সেটিই মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে শামীম ওসমানের জন্য। আর তাই বিএনপি নির্বাচনেনা এলেও পলাশ দলীয় মনোনয়নপত্র কেনার পর থেকে সকলের আগে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন শামীম ওসমান। ইতিমধ্যে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় বড় বড় দুই শান্তি মিছিল করে ও নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা করেন।
তবে এবার জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেকটাই ভাবনার মধ্যে দিন পার করছে শামীম ওসমান। আওয়ামীলীগ পরিবারের সন্তান হওয়ার কারণে এবং নিজেও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামীলীগের রাজর্নীতির সাথে জড়িত থাকায় শামীম ওসমানের বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে রয়েছে পলাশ। এছাড়া শ্রমিক রাজনীতির দরুণ সারাদেশেই পলাশের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
এদিকে সূত্র জানিয়েছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ চার আসনের আওয়ামীলীগ থেকে এমপি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে শ্রমিক নেতা কাউসার আহম্মেদ পলাশ। আর এরপরপই এমপি শামীম ওসমানের বিশেষ বার্তা নিয়ে হঠাৎ করে পলাশের অফিসের হাজির হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজাম।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলী, শাহ্ নিজামের এর বন্ধু নান্টু, মহানগর যুবলীগের ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদক এসএম জিলুর রহমান লিটন, আবু জাফর বাপ্পী সহ বেশ কয়েকজন।
সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬ টা থেকে একটানা প্রায় ৩ ঘন্টার বেশি সময় ধরে বিশেষ মিটিং করেন পলাশের কার্যালয়ে। অতিগুরুত্বপূর্ণ এই মিটিংয়ে আস্থাভাজন ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। আলোচিত এই মিটিং নিয়ে শহর ও শহরতলীতে নানা ধরনের কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে থেকে এরআগেও তিনবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন কাউছার আহম্মেদ পলাশ। অপর দিকে, ১৯৯৬ সালে দলীয় মনোনয়নে প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শামীম ওসমান। ২০০১ সালের নির্বাচনে কৃষক লীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের কাছে পরাজিত হন। পরে দেশ ছাড়েন শামীম ওসমান।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর দেশে ফেরেন। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে লক্ষাধিক ভোটে পরাজিত হন। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে তিন লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে একই আসনে নির্বাচিত হন শামীম ওসমান।