বাণিজ্য মেলায় এবারের আকর্ষণ ‘আস্ত বাড়ি’ বিক্রি

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৩৬ পিএম

শেষ মহুর্তে বেড়েছে বেচাকেনা। তবে তুলনামূলক দর্শনার্থী কম। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৮তম আসর চলছে পূর্বাচলে। তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত এবারের মেলায় সবকিছু ছাপিয়ে মূল আকর্ষণে পরিণত হয়েছে ইউরোপিয়ান ডিজাইনে তৈরি একটি বাড়ি।
কে ওয়াই টু টোন নামের এক ডেভেলপার কোম্পানি আস্ত এ বাড়ি বিক্রি করছেন, যা নিয়ে মেলায় আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আগ্রহের শেষ নেই। প্রতিদিনই হাজার দর্শনার্থী এ বাড়ি দেখতে ভিড় করছেন। তবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্দা নামবে মেলার। এতে লোকসানের সঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কর্মব্যস্ত দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা যায়, মেলায় আস্ত বাড়ি বিক্রি কথা শুনে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে দর্শনার্থীরা। তাই বাড়িটি ঘিরে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই বাড়িটির সঙ্গে ছবি তুলছেন। ভিডিও ধারণ করতেও দেখা গেছে দর্শনার্থীদের।
ইউরোপিয়ান এ বাড়ির মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করেই চোখে পড়বে সুবিশাল একটি ড্রয়িংরুম (অতিথি কক্ষ)। এর পাশেই রয়েছে ডাইনিং রুম। পাশাপাশি দুটি মাস্টার রুম রয়েছে। সেইসঙ্গে দুটো টয়লেট ছাড়াও রয়েছে সুন্দর একটি বেলকুনি।
স্টিলের তৈরি এমন বাড়ি সচরাচর ইউরোপের দেশগুলোতে দেখা গেলেও বাংলাদেশে এমনটা দেখা যায় না। ফলে এবারের মেলায় অন্যতম আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে বাড়িটি।
ব্রাইট শিশু কাকন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও নগরপাড়ার বাসিন্দা আহমেদ রাসেল বলেন ‘বাইরে থেকে বাড়িটি দেখতে যতটা সুন্দর ভেতরে আরও কয়েকগুণ বেশি সুন্দর। এমন আস্ত বাড়ি মেলায় আগে কখনো দেখিনি।
অপর দর্শনার্থী গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা তানজুমা আইজি ইকরা বলেন, বাড়ির সঙ্গে ছবি তুলে স্মৃতিধারণ করে রেখে দিলাম।’ তবে আমাদের দেশের আবহাওয়ায় এমন বাড়ি কতটুকু টিকবে তা দেখার বিষয়। আর দামটাও বেশি চাচ্ছে। তবে মডেল অসাধারণ।
কে ওয়াই টু টোনের ইনচার্জ মো. রুবেল বলেন, ‘আস্ত বাড়ির ধারণা আগে থেকেই এ দেশে ছিল, কিন্তু তা কাঠের তৈরি বাড়ি ছিল। আমরা যে বাড়িটি বিক্রি করছি তা সম্পূর্ণ স্টিলের তৈরি। যা ১০০ বছরেও কিছু হবে না। এছাড়া এটি ভূমিকম্প ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে টিকে থাকার সক্ষমতা রাখে। আমরা এসব বাড়ি প্রতি বর্গফুট অনুসারে বিক্রি করি।
যদি কেউ এমন একতলাবিশিষ্ট বাড়ি বানাতে চান তাহলে প্রতি বর্গফুটে ১ হাজার ৯০০ টাকা এবং ডুপ্লেক্স বাড়ির ক্ষেত্রে ২ হাজার ৬০০ টাকা দিতে হবে। ১ হাজার বর্গফুটের একতলাবিশিষ্ট একটি বাড়ি ৪৫-৫০ দিনে এবং ডুপ্লেক্স বাড়ি ৩ মাসের মধ্যে সরবরাহ করে থাকি। এবারের মেলায় ভালো সাড়া পাচ্ছি।’
এদিকে মেলায় থাকা ব্যবসায়ীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ লক্ষ্যনীয়। ইগলু আইসক্রিম কোম্পানির ডিলার আমানুল্লাহ মিয়া বলেন, এবার মেলার সময়সূচি নিয়ে শুরু থেকে জল ঘোলা হয়েছে। সাধারণত ১ জানুয়ারি থেকে বাণিজ্য মেলা শুরু হলেও, নির্বাচনের কারণে এবার মেলা কিছুটা পিছিয়ে যায়।
পরবর্তীতে ১৫ জানুয়ারি মেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মেলা উদ্বোধন হয় ২১ জানুয়ারিতে। সময় নিয়ে নিশ্চিত না থাকায় এবং নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি কেমন হবে, এ নিয়ে সংশয় থাকায় মেলার শুরুতে প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল।
তাই অনেকেই সময়মতো স্টল প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করতে পারেনি। আমরাও পারিনি। যে টাকায় বরাদ্দ নিয়েছি সে টাকা তুলতে পারবো না। লোকসান হবেই। তাই আমাদের কথা বিবেচনা করে সময় বাড়ানো দরকার।
ব্যবসায়ী রাকিব ভুইয়া বলেন, সময়সূচি, শীতের শেষ এবং রমজান সন্নিকটে থাকায় মেলায় বিক্রি কম। আবার নানা খরচসহ এক মাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে । কিন্তু এখনও ১০ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়নি।
মধুখালীর বাসিন্দা জিন্নাত আলী বলেন, মেলায় দর্শনার্থী বেশি বিক্রি কম, শীত প্রায় শেষ বলে এখন আর কেউ শীতের পোশাক কিনছেন না।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, স্যুট, শাল ও কোটির দোকানদাররা এক রকমের অলস সময় কাটাচ্ছেন। এদিকে রমজান ঘনিয়ে আসায় অনেকে ঈদের কালেকশনের জন্য অপেক্ষা করছেন। এতে এবারের মেলায় বিক্রেতারা না শীতের ক্রেতা ধরতে পেরেছেন, না ঈদের। ফলাফল বেচাকেনা খারাপ হয়েছে।
মত্তুজাবাদ থেকে আসা দর্শনার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, মানুষ এখন হাতে টাকা ধরে রাখতে চাইছে। রোজা-ঈদ মিলিয়ে সামনে বড় খরচ আছে। তবে অনেকেই এখান থেকে ঈদের কেনাকাটা সারতেছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইপিবি সচীব বিবেক সরকার বলেন, এ বছর মেলার সময় বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ২০ ফেব্রুয়ারি মেলা শেষ হলে ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে একই প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক ফার্মাসিউটিক্যালস মেলা আয়োজন করা হবে। সেক্ষেত্রে প্রস্তুতির জন্য হাতে সময় নেই বললেই চলে।
কাঞ্চন ভারত চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমেনা আক্তার লিপি বলেন, বাইরে দেশের অর্থনীতি এবং মুদ্রাস্ফীতির কারনেও মেলায় কম বিক্রি হওয়ায় কারন হতে পারে। আগে বাণিজ্য মেলার জন্য মানুষ আলাদা বাজেট করে রাখতো। এটি ছিল রাজধানী ও আশপাশের জেলার লোকজনের উৎসবের মতো । এখন তা দেখিনা।
কাঞ্চন পৌরসভার চরপাড়া থেকে মেলায় আসা দর্শনার্থী শাহিদা আলম স্মৃতি বলেন, বাণিজ্য মেলায় এমন অনেক পণ্য পাওয়া যেত, যা সাধারণ বাজারে সচরাচর পাওয়া যায় না। কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাধারণ বাজারে বৈচিত্র্য আসলেও বাণিজ্য মেলার পণ্য সেই সেকেলে রয়ে গেছে। নিউ মার্কেট বা গুলিস্তানের বঙ্গবাজার মনে হয়'। এন. হুসেইন রনী /জেসি