মঙ্গলবার   ২২ অক্টোবর ২০২৪   কার্তিক ৭ ১৪৩১

বিবিসি বাংলায় আলোচিত খবর অসহযোগ আন্দোলনের পথে যেতে পারে বিএনপি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩  


অবশেষে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কাজ না হলে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি সহ তাদের সমমনা দলগুলি। দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে তত্বাবদায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে বিএনপি। কিন্তু বিএনপির এই আন্দোলকে মোটেও পাত্তা দিতে চাইছে না আওয়ামী লীগ।

 

 

তাই বিএনপির নেতারা মনে করেন আবারও বিএনপিকে বাদ দিয়ে আরো একটি এক তরফা নির্বাচনের পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে সরকার। শুধু তাই নয় বিচার বিভাগকে ব্যাবহার করে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলি দ্রæত নিস্পত্তি করে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের সকল নেতাকে কারাগারে নিক্ষেপ করার পায়তারায় লিপ্ত রয়েছে সরকার।

 

 

এরই মাঝে ঢাকার শক্তিমান নেতা আমান উল্লাহ আমানকে সাজা দিয়ে কারাগারে ভরেছে সরকার। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের মূল চালিকা শক্তি মির্জা ফখরুলও বলেছেন সরকার বিচারকদের ব্যাবহার করে তাদেরকে কারাগারে ভরার চেষ্ঠা করছে। তাই পরিস্থিতির কোনো সুষ্ঠু সমাধান না হলে সরকার বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেবে বিএনপি।

 

 

এ লক্ষে সকল প্রস্তুতিই সম্পন্ন করেছে দলটি। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন তাদেরকে আপাতত গ্রেফতার এড়িয়ে আন্দোলনে ভূমিকা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিগগিরই একটি অসহযোগ আন্দোলন শুরু হবে বলে ওই নেতা মনে করেন।

 


এদিকে বিবিসি বাংলা তাদের এক রিপোর্টে লিখেছে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ নাগাদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের এবং প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ওই তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।

 


কিন্তু বিএনপি চাইছে তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক ফয়সালা নিশ্চিত করতে এবং এ লক্ষ্যে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার চিন্তা আছে দলের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে।

 


এসব কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘিরে কর্মসূচিসহ নানা ধরণের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে।

 


আর এসব কর্মসূচিতে সরকার পক্ষ বাধা দিলে ‘যদি পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে’ তাহলে এক পর্যায়ে অসহযোগ আন্দোলনের দিকেও যেতে পারে দলটি, এমন ধারণেই পাওয়া গেছে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে।

 


বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালের পনেরই ফেব্রæয়ারির নির্বাচন বর্জন করে তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগের অসহযোগ আন্দোলনের মুখেই সে সময়কার খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার পদত্যাগ করে তত্ত্বাধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিলো।

 


বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন কোন ধরণের আক্রমণাত্মক পথে না গিয়ে একের পর একে কর্মসূচির মাধ্যমে তারাও একই পরিস্থিতি তৈরি করবেন দাবি আদায়ের জন্য, যাতে করে তার ভাষায় ‘সরকার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রশ্নে সমঝোতায় বাধ্য হয়’।

 


“যে কোন সময়, যে কোন স্থানে বসে মানুষকে নিষ্পেষণের যেসব নার্ভ সরকারের হয়ে কাজ করে সেগুলোকে অচল করে দিবো আমরা। সরকারকে দাবি মানতে হবে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

 


আর এসবের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই শনিবার রংপুর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত 'তারুণ্যের রোডমার্চ' কর্মসূচি পালন করছে দলটি। আর আজ রোববার বগুড়া থেকে রাজশাহী পর্যন্ত একই কর্মসূচি পালিত হওয়ার কথা।

 


এরপর আরও কয়েকটি বিভাগে এই কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি ঢাকায় বড় ধরণের ছাত্র বা শ্রমিক গণসমাবেশের আয়োজন হতে পারে চলতি মাসের মধ্যেই।

 


যদিও সরকারি দল আওয়ামী লীগ বরাবরই বলে আসছে যে আগামী নির্বাচন দেশের সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে।


বিএনপি নেতারা বলছেন সরকার বাধা দিলেও তারা আর পিছু হটবেন না।


বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে যে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতায় রেখে কোন নির্বাচন তারা মেনে নেবে না এবং এ ধরণের নির্বাচন তারা হতেও দেবে না। এ লক্ষ্যেই সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে তারা।

 


দলের সূত্রগুলো বলছে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলমান আন্দোলনের কর্মসূচিগুলো অব্যাহত থাকবে। তবে এরপর থেকেই কর্মসূচির ঢেউ বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে।

 


অর্থাৎ রাজধানী ঢাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, নির্বাচন কমিশন কিংবা সচিবালয় কেন্দ্রিক কর্মসূচিগুলো ওই সময়ে ঘোষণা করা যায় কি-না তা নিয়ে নানা ধরনের পর্যালোচনা হচ্ছে।

 


দলের নেতারা মনে করছেন আন্তর্জাতিক নানা চাপের কারণে কিছুটা নমনীয় থাকা সরকার এসব কর্মসূচিকে ঘিরে সহিংস আচরণ করলে একদিকে বিশ্ব স¤প্রদায়ের চাপ বাড়বে সরকারের উপর, অন্যদিকে বিএনপি কর্মী সমর্থকরাও রাজপথে নেমে আসবেন।

 


“আমরা তো ৯৬ সালের আন্দোলন ভুলিনি। আর এখনকার পরিস্থিতিতে আমরা কর্মী সমর্থকরাও জানি যে আর পিছু হটার সুযোগ নেই। তাই আঘাত আসলে মুখ বুজে তো সহ্য করবো না। সরকার তীব্রতা বাড়ালে সমুচিত জবাব পাবে,” বলছিলেন দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম।

 


মি. আহমেদ দলীয় পরিমন্ডলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।


একের পর এক কর্মসূচি আসতে পারে বিএনপির পক্ষ থেকে।


দলের গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলো জানিয়েছে আগামী দুমাসে দলের সব কার্যক্রমে ফোকাস থাকবে তিনটি বিষয়ের উপর।

 


এগুলো হলো যত বেশি সম্ভব রাজনৈতিক দলকে নিজেদের দিকে নিয়ে আসা, আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় বিশেষ করে বৈশ্বিকভাবে প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন প্রশ্নে বর্তমান মনোভাবকে বহাল রাখা আর মাঠের কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা।

 


অর্থাৎ নির্বাচনের তফসিল একতরফাভাবে ঘোষণা হলে যাতে করে যত বেশি সংখ্যক দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত রাখা যায় সেই চেষ্টাই করবে দলটি।

 


কারণ দলের নেতারা অনেকেই মনে করেন যে একবার নির্বাচন সরকার একতরফা ভাবে করে ফেললে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে উঠবে। তাই তারা চান ‘পরিস্থিতি যাই হোক তফসিল ঘোষণার আগেই’ সরকারি দলের বাইরে সব দলকে এক জায়গায় নিয়ে এসে ‘দাবি আদায় করা যাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করার’' মতো অবস্থা তৈরি করা।

 


পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান- এমন বিষয়গুলো যাতে অব্যাহত থাকে সে চেষ্টাও থাকবে দলের পক্ষ থেকে।

 


যুক্তরাষ্ট্র আগেই ভিসা নীতি ঘোষণা করে বলেছে যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে অন্তরায় যারাই হবে তারাই ওই নীতির আওতায় পড়বেন।

 


মূলত এ ভিসা নীতি ঘোষণার পরই ‘সরকার বেকায়দায় পড়ে’ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।   এন.হুসেইন রনী /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর