Logo
Logo
×

খেলাধূলা

বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে মজার কথা !

Icon

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০১:৪৯ পিএম

বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে মজার কথা !
Swapno

ডেস্ক রিপোর্ট  (যুগের চিন্তা ২৪) : ‘দ্য ওয়ার্লডস বিগেস্ট শো’ নামে খ্যাত বিশ্বকাপ ফুটবল ঘিরে যেন মানুষের উন্মাদনার শেষ নেই। এই ট্রফিটি যে দেশ জিতে, সে দেশই বয়ে নিয়ে বেড়ায় পরবর্তী চার বছরের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের গৌরব। মনে প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক যে, কী আছে এই ট্রফিতে? কেন এর এতো মূল্য? কেনই-বা প্রত্যেকটি দেশ এটি হাতে নেয়ার জন্য লড়াইয়ের শেষটুকুও বাকি রাখে না!


প্রথমেই জেনে রাখা ভালো এখন ফিফা বিশ্বকাপে যে ডিজাইনটি রয়েছে সেটি কিন্তু শুরুথেকে ছিল না। ১৯৩০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়নদের পুরস্কার হিসেবে দেয়ার জন্য বানানো হয়েছিল অন্য এক ধরনের ট্রফি যার নাম ছিল ভিক্টরি ট্রফি। এই ট্রফির ডিজাইনারের নাম ছিল নাইকি। আর গ্রিসের বিজয়ের দেবীর নাম ছিল নাইকি, এবং তারই চেহারার আকারে বানানো হয়েছিলো এই ট্রফিটি। ১৯৩০ সালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে উরুগুয়েই প্রথম জিতে নেয় এই ভিক্টরি ট্রফি।

 

এই ট্রফির সাথে একটি মজার ঘটনা আছে। ১৯৩৮ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবার সুবাদে ভিক্টরি ট্রফিটি ছিল ইতালির কাছে। কিন্তু তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল তাই তখনকার ফিফা প্রেসিডেন্ট ইতালির নাগরিক অতরনিও বারাসসি খুব সাবধানে এবং গোপনে ট্রফিটি রোম থেকে নিয়ে আসেন। ট্রফিটি একটি জুতার বাক্সে করে নিজের শোবার ঘরের বিছানার নিচে ছোট একটি গর্ত করে সেখানে লুকিয়ে রাখেন, যাতে করে অ্যাডলফ হিটলার কিংবা নাৎসি বাহিনীর কেউ ট্রফিটিকে আত্মসাৎ না করতে পারে। এই ভিক্টরি ট্রফিকেই ১৯৪৬ সালে তখনকার ফিফার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জুলস রিমেটের প্রতি সম্মান রেখে নামকরণ হয় জুলেরিমে ট্রফি নামে। 


১৯৬৬ সালের ২০শে মার্চ ওয়েস্ট মিনিস্টারের সেন্ট্রাল হলে একটি প্রদর্শনী থেকে এই জুলেরিমে ট্রফিটি কাকতালীয়ভাবে চুরি হয়ে যায়। অথচ তখন আর মাত্র চার মাস পরেই বিশ্বকাপ শুরুহবে হবে এমনই একটি আমেজ তৈরি হয়েছিল সারা ফুটবলবিশ্বে। তবে সৌভাগ্যবশত চুরি হওয়ার ৭ দিন পরেই দক্ষিণ লন্ডনের একটি সাভারবান গার্ডেন থেকে কাগজে মোড়ানো অবস্থায় এই ট্রফিটি উদ্ধার করে পিকলস নামের একটি কুকুর। পরবর্তীতে জানা যায় স্টিভ ক্রুক তার কিছু সহচর নিয়ে ট্রফিটি চুরি করেছিল।


এরপর থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রদর্শনীতে প্রদর্শন করে রাখার প্রয়োজনে জুলে রিমে ট্রফির হুবহু নকল একটি ট্রফি তৈরি করে ফুটবল এসোসিয়েশন। নকল ট্রফিটি এখন ম্যানচেস্টারের একটি ফুটবল মিউজিয়ামে রয়েছে। এবং জুলেরিমে ট্রফি একেবারে নিজেদের করে নেয়ার একটি নিয়ম করে দেয়া হয়েছিল সেই সময়। যদি কোনো দেশ তিনবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় তাহলে সেই ট্রফিটি তারা একেবারে নিজেদের করে নিতে পারবে। ১৯৭০ সালের মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ফুটবলের জাদুকর কালো মানিক পেলের অসাধারণ নৈপুণ্যে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে তৃতীয় বারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে জুলেরিমে ট্রফিটি স্থায়ীভাবে নিজেদের করে নেয় ব্রাজিল।


পরবর্তীতে ট্রফিটি ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওর ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের একটি কাঠের বাক্সে প্রদর্শনী হিসেবে রাখা হয়। যার ডিসপ্লে ছিল বুলেট প্রুফ গ্লাসের তৈরি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ১৯৮৩ সালের ১৯ শে ডিসেম্বরে আবারো ট্রফিটি চুরি হয়ে যায়। ধারণা করা হয় ট্রফিটি চারজন মিলে চুরি করেছিল এবং শাবল দিয়ে এর গ্লাস ভেঙেছিল। পরবর্তীতে এ ট্রফিটি আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। 


অনেকের মতে ট্রফিটি তাপ দিয়ে গলিয়ে ফেলা হয়েছিল এবং গলিয়ে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে ট্রফিটির ছোট্ট এক টুকরো অংশ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তীতে এ ট্রফিটিতে ১.৮ কেজি পরিমাণ সোনা ব্যবহার করে অরিজিনাল ট্রফিটির অবিকল নকল করে বানানো হয়েছিল। সেটি ব্রাজিলিয়ান বিদায়ী প্রেসিডেন্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জুলে রিমে ট্রফিটি ২০১৪ সালে একটি ডকুমেন্টারিতে ব্যবহার করা হয়েছিল, যেটির নাম ছিল ট্রেস অফ দ্য রিমেট ট্রফি।


এখন ঐতিহাসিক সেই জুলে রিমে ট্রফিটি আর নেই। ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপের জন্য সেইসময়কার জুলেরিমে ট্রফির বদলে অন্য আরেকটি ডিজাইনের ট্রফি চ্যাম্পিয়নদের দেয়ার সম্মতি প্রকাশ করা হয়েছিল ফিফা থেকে। যার ফলে ভিন্ন ভিন্ন সাতটি দেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন নিয়েছিল ফিফা। সবশেষে ইতালিয়ান শিল্পী সিলভিও গাজ্জানিকার ডিজাইনটিকে সর্বসম্মতিক্রমে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের ট্রফি হিসেবে বেছে নেয়।


এই ট্রফিটিকে ইতালির স্টাবিলিমেন্টো আর্টিস্টিকো বেরটোনি কোম্পানিতে তৈরি করা হয়েছিল। এই ট্রফিটিতে দেখতে পাওয়া যায় দুজন মানুষ পৃথিবীকে উঠিয়ে ধরে আছে। এটির উচ্চতা হলো ৩৬.৮ সেমি এবং ওজন ৬.১ কিলোগ্রাম। ট্রফিটির নিচের দিকে ১৯৭৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যতগুলো দেশ বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হযয়ছিল তাদের নাম খোদাই করা আছে। সবারই মনে প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক যে এমন একটি ট্রফির মূল্য কত হতে পারে !

 

এই ট্রফিটিতে ব্যবহার করা হযয়েছে ১৮ ক্যারেট সোনা যার বর্তমান মূল্য প্রায় ১ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার মার্কিন ডলার এবং এর নিচে রয়েছে ম্যালাকাইটের দুটি প্রলেপ। সব মিলিয়ে যদি এর মুল্য নির্ধারণ করা হয় তাহলে এই ট্রফিটির বর্তমান মূল্য হবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। ফিফার কিছু নির্দিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা ছাড়া এই ট্রফি ছুঁয়ে দেখার ক্ষমতা অন্য কারো নেই।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন