রোববার   ০৪ জুন ২০২৩   জ্যৈষ্ঠ ২০ ১৪৩০

বিসিকের হোল্ডিং ট্যাক্স ও লাইসেন্স ফি’র মোটা অংকের টাকা যায় কোথা?

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২৩  


# ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে বাদ দিয়ে নিজের লোক দিয়ে করানো হচ্ছে কেন?

# দুদক অথবা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তদন্ত করলে কিছু বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা
 

ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর অবস্থান হলো এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন এলাকায়। তাই এই শিল্পনগরী থেকে প্রতি মাসেই মোটা অংকের টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স এবং ট্রেড লাইসেন্স ফি বাবদ পেয়ে থাকে এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদ। কারন ট্রেড লাইসেন্স নিয়মিত ফি দিয়ে প্রতি বছরই নবায়ন করতে হয়, হোল্ডিং ট্যাক্সও তোলা হয় প্রতি বছরই।

 

 

কিন্তু এই টাকার একটি বড় অংশ লোপাট করে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিসিক থেকে যে টাকা আসে সেই টাকার বড় অংশই সরকারী ফান্ডে জমা হয় না। জানা গেছে, কবির নামক এক ব্যাক্তির মাধ্যমে চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান এই টাকা সংগ্রহ করে থাকেন। যদিও এই কাজটি করার কথা ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের।

 

 

কিন্তু সূত্র জানায়, সচিবের মাধ্যমে এই টাকা সংগ্রহ না করে কবিরের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন চেয়ারম্যান। কবির ইউনিয়ন পরিষদের কম্পিউটারে কাজ করেন। পরিস্কার কথা হলো বিসিক থেকে যে মোটা অংকের টাকা আসে এই টাকা কোথায় যায়?, সেটা বলতে পারবেন একমাত্র চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান।

 

 

তাই এ বিষয়ে একটি জরুরী তদন্ত হওয়া দরকার বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট সূত্র। সূত্রটির দাবি বিসিক থেকে আদায়কৃত টাকা কি চেয়ারম্যান আত্নসাৎ করেন না অন্য কিছু করেন সেটা বলতে পারবেন চেয়ারম্যান নিজেই।

 

 

এ বিষয়ে মেম্বাররা তেমন কিছু জানেন না বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, আত্মসাত করার সম্ভাবনাই বেশি। তাই এ ব্যাপারে দুদক বা স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের অন্য কেউ এ ব্যাপারে একটি সঠিক তদন্ত করলে সত্য বেরিয়ে আসবে বলে সূত্রটির দাবি। 

 

 

এদিকে ইউনিয়নবাসী অনেকে মনে করেন চেয়ারম্যানের অলসতার কারনে এই ইউনিয়নে কোনো পরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে না। প্রতি বছর সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে যে পরিমান টাকা আসে সেই টাকা যদি ঠিক মতো কাজে লাগতো তাহলে একেবারে পাল্টে যেতো  গোটা এলাকার চেহারা। তবে নয়টি ওয়ার্ডের মাঝে একমাত্র চেয়ারম্যানের নিজের ওয়ার্ডে বেশ ভালোই উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। 

 

 

এদিকে বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ইউনিয়ন পরিষদের কোনো মনিটরিংও নেই। তাই ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডেই চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। কোনো মনিটরিং না থাকার কারণে পাড়া মহল্লার রাস্তা গুলির একটি অংশ মুদি দোকানদার এবং চায়ের দোকানদাররা দখল করে পন্য রেখে দোকানদারী করায় জনগণের চলাচলের বেজায় সমস্যা হচ্ছে। 

 

 

এছাড়া ভ্যান গাড়ি দিয়ে এবং রাস্তায় টং দোকান বসিয়ে অনেকেই জনগনের চলাচলের ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। এ ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান কখনোই কোনো ব্যাবস্থা নেন নাই এবং মেম্বারদেরও কোনো দিকনির্দেশনা দেন নাই। 

 

 

এদিকে এনায়েতনগর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মতে ,কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে পর পর দুইবার নির্বাচিত এই চেয়ারম্যান এক সময় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ওই সময় তিনি ছিলেন কথিত কিংমেকার মোহাম্মদ আলীর কাছের লোক। আর এখন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের কাছের লোক হিসাবে পরিচিত আসাদুজ্জামান।

 

 

তিনি যখন প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তখন ওই নির্বাচনে তার বিপরিতে আরো তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। বিএনপি, জাতীয় পার্টি এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা ওই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের দিন ভোট শুরু হওয়ার আগেই সব কয়টি ভোট কেন্দ্র দখল করে নেন আসাদুজ্জমানের দলের ক্যাডাররা।

 

 

বেলা বারোটার আগেই ওই তিন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছিলেন এবং সংবাদ সম্মেলন করে কেন্দ্র দখল ও ব্যাপক কারচুপির অভেযোগ করেছিলেন। তারা অভিযোগ করেছিলেন আসাদুজ্জামানের পক্ষে সন্ত্রাসীরা এনায়েতনগর ইউনিয়নের সব কয়টি ভোট কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে। মূলত এভাবেই তিনি একটি কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

 

 

তারপর বিগত নির্বাচনেও একই ভাবে তিনি বৈতরণী পার হন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এ কারনেই ইউনিয়ন পরিষদের কাজে তার কখনোই তেমন কোনো আগ্রহ ছিলোনা। এখনো নেই। এনায়েতনগর ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানিয়েছেন চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান প্রতি দিন ঘুম থেকেই উঠেন সকাল এগারোটার পর বা দুপুরে। 

 

 

ততোক্ষনে নানা কাজের জন্য আসা চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ প্রার্থীরা অপেক্ষা করতে থাকেন। ভিড় জমে যায় পরিষদ প্রাঙ্গণে। ফলে সাধারন মানুষের ভোগান্তির কোনো সীমা থাকে না। অনেক মানুষ চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ না পেয়ে ফিরে যান। এছাড়া এলাকার উন্নয়নেও তার তেমন কোনো আগ্রহ নেই। তিনি অনেক এলাকায়ই অনেক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন।

 

 

কিন্তু উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনোই প্রচেষ্টা নেই। ফলে গোটা এনায়েতনগর ইউনিয়ন জুড়ে একেবারে মুখ থুবড়ে পরেছে উন্নয়ন। শুধু তাই নয় এনায়েতনগরের বিভিন্ন এলাকার সাধারন মানুষ জানিয়েছে চেয়ারম্যান জানেনও না কোন এলাকায় কি সমস্যা রয়েছে। এলাকাবাসী আরো মনে করেন চেয়ারম্যান হয়তো মনে করেন ভোট যদি অবাধ ও সুষ্ঠু হয় তাহলে তিনি জয়ী হতে পারবেন না।

 

 

কারণ দুই বারই তিনি চেয়ারম্যান হয়েছেন স্থানীয় এমপি একেএম শামীম ওসমানের দয়ায়। জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান হননি তিনি। তাই ওসমান পরিবারকে হাতে রাখলেই চলবে। জনগণের জন্য কিছুই করতে হবে না বলে তিনি হয়তো মনে করেন। আর এটা জানেন বলেই বেশ আয়েশী ভঙ্গিতে ইউনিয়ন পরিষদ চালাচ্ছেন তিনি।

 

 

প্রায় দুপুর পর্যন্ত ঘুমিয়ে মনে চাইলে পরিষদে আসেন, না চাইলে না আসেন। কারো কাছে কোনো রকম জবাবদিহিতা নেই। পরিষদে না আসলে পরিষদের কর্মচারীরা বলে দেন চেয়ারম্যান অসুস্থ্য। তাই আসাদ চেয়ারম্যানের আচরণে একেবারে হতাশ হয়ে পড়েছেন এনায়েতনগর ইউনিয়নের সাধারন মানুষ। 

এই বিভাগের আরো খবর