
# নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর উপজেলা আ.লীগ নেতাদেরও নির্বাচনী কাজ নেই
নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনে নৌকা দেয়ার যে দাবি জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের নেতারা তুলেছিল গত এক দশক ধরে তা এবার দ্বাদশ নির্বাচনেও পূর্ণ হলোনা। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের কারণে নারায়ণগঞ্জ-৫(সদর-বন্দর) ও নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসন দুটি গত দুই নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয়। তবে দ্বাদশ নির্বাচনের ৭ জানুয়ারির ভোটের জন্য আওয়ামী লীগ নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য আসনে মনোনয়ন দিলেও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়নি।
মূলকথা এই আসনে আওয়ামীলীগ নেতাদের কথা কানেই তোলেনি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। যার ফলে হতাশ নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ। তাছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমান থাকায় এই আসন অধ্যুষিত এলাকায় আওয়ামীলীগ নেতারা এবারের নির্বাচনে অলস সময় কাটাবেন। এবারের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টি জোটে থাকলেও আলাদা ভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০২২ সালে জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি পুনর্বহাল রাখা হয়। যদিও এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। জেলা কমিটির দুই নেতাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেন। যদিও নারায়ণগঞ্জ-১ আসনেও মনোনয়নপত্র কেনেনে আবদুল হাই। তবে সাফল্য পাননি।
এর আগের কমিটির এক ঝাঁক নেতার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সদর ও বন্দর এলাকায়। তাছাড়া জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ কার্যালয়টিও নারায়ণগঞ্জ শহরে। অথচ এই আসনে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী তো নেই উল্টো জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে প্রচ্ছন্নভাবে সুবিধা দেয়া হয়েছে। নৌকার প্রার্থী না থাকায় নারায়ণঞ্জ সদর থানা আওয়ামী লীগ ও এমএ রশীদ-কাজিমউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বেকার সময় পার করবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আরজু রহমান ভূঁইয়া, আবদুল কাদির, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, সাবেক সদস্য ও সাবেক এমপি হোসনে আরা বাবলীসহ এক ঝাঁক নেতা গতবার নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়নপত্র কিনলেও এবার নীরবতা পালন করেছেন। যার ফলে তাদেরকেও নিঃশ্চুপ থাকতে হবে এবারের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে।
আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপুও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশা করলেও আপাতত এই আসনে জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত থাকতে হবে। জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতৃবৃন্দ নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন বাদ দিয়ে অন্যান্য আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের নিয়ে মাঠে ব্যস্ত থাকতে দেখা যেতে পারে।
এক্ষেত্রে মহানগর আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের পরিসর আরো ছোট হয়ে এসেছে এবারের নির্বাচনে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবার নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকার শক্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চেয়েছিলেন কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। গতবার মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা। এবার বিরত থেকেছেন। তাদের নেতৃত্বাধীন মহানগর আওয়ামীলীগের কমিটির মেয়াদ ফুরিয়েছে অনেক আগে, কিন্তু ঠিকঠাক মতো হয়নি ওয়ার্ড কমিটিগুলোও।
যার ফলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে তাদের কমিটির শৃঙ্খলা কম। এবারের নির্বাচনে মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত মনোনয়নপত্র কিনলেও হালে পানি পাননি। মহানগরের সকল নেতৃবৃন্দের এবারের নির্বাচনে কাজ করার গন্ডি অনেক ছোট পরিসরে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জের ১০টি, সদরের ৮টি ও বন্দরের ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে মহানগর আওয়ামীলীগ।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী না থাকায় এবার মহানগর আওয়ামী লীগের সকল নেতৃবৃন্দ কাজ করার সুযোগ পাবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী শামীম ওসমানের পক্ষে। তাও আবার সিদ্ধিরগঞ্জের ১০টি ওয়ার্ডে। যদিও ওই ১০টি ওয়ার্ডে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মিয়ার নিয়ন্ত্রানাধীন। শামীম ওসমান ও সিদ্ধিরগঞ্জের ওই দুই নেতার হস্তক্ষেপে একটি ওয়ার্ডেও কমিটি করার ব্যাপারে হাত দেয়ার সুযোগ পায়নি মহানগর আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা।
শুধু যে মহানগর আওয়ামীলীগ তা নয়, মহানগর যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সবাই ছুটবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সিদ্ধিরগঞ্জ অংশে। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা উজ্জ্বল। কিন্তু মনোনয়ন পাননি, এই আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী না থাকায় তাকেও ছুটতে হবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রার্থী শামীম ওসমানকে সিদ্ধিরগঞ্জ জয়ী করার ব্যাপারে কাজ করতে।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী না দেয়ার বিষয়টি সারাদেশে আলোচনা তৈরি করে। আলোচনা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের চা দোকান, কফি শপগুলোতেও। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে অনেকে বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগসহ মহানগরের আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দর্শক হয়ে থাকতে হবে। তাছাড়া অনেক নেতাই আশা করেছিলেন নির্বাচন উপলক্ষে শহরের দুই নম্বর গেট এলাকায় অবস্থিত আওয়ামীলীগ কার্যালটি নেতাকর্মীদের ব্যস্ততায় প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে।
কিন্তু তা আর হলো কই, বোস কেবিন কিংবা শহরের সর্বত্র চা দোকানগুলোতেই জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের অধিকাংশ নেতার এবারের নির্বাচনে দর্শক হয়ে থাকার গল্পটাই প্রাধান্য পাচ্ছে। আর বেকার যারা থাকতে চাইবে না তার দ্বারস্থ হবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম ওসমানকে সহযোগিতা করার জন্য। আর সেটি করতে অনেক নেতাই ব্যথিত বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র। এস.এ/জেসি