বুধবার   ১১ ডিসেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ২৭ ১৪৩১

‘বৈধ-অবৈধ মিলাইয়াই আমগো দেশ’

যুগের চিন্তা রিপোর্ট :

প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২৪  

প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত জেলা নারায়াণগঞ্জ। সুন্দর এই জেলাটির সড়কে থাকে যানজট, ফুটপাথে থাকে মানবজট। যা সৃষ্টি করার পিছনে রয়েছে অবৈধ হকার শ্রেণি এবং অবৈধ অটো-মিশুক চালকদের হাত। ফুটপাত দখলের পাশাপাশি হকাররা ভ্যান বা ছোট গাড়ি নিয়ে সড়কও দখল করছে। এভাবে চলতে থাকলে জ্যামজট নিরসনের চেষ্টা বৃথা যাবে। সকল জেলার মত এই জেলাতেও যানবাহন চলাচলের জন্য সড়ক এবং তার পাশে পথিকদের যাতায়াতের জন্য ফুটপাত বিদ্যমান। কিন্তু জীবিকা নির্বাহের ছুতায় হকাররা অবৈধভাবে দখল করে রাখছে ফুটপাথ। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা-রাত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সড়ক, নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা সড়কে আসলেই দেখা মিলে হকারদের অবৈধ স্থাপনার, যা উপচে পড়ে খানিকটা সড়কেও চলে এসেছে। 

 

এতে করে সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়ানক যানজট। হাঁটতে গিয়ে অনেকেই প্রয়োজনীয় খুটি-নাটি ক্রয় করতে জমে দাড়ান ফুটপাথে থাকা অবৈধ এই হকারদের সাজানো পসরায়। এই জমে দাড়ানোর ফলে সৃষ্টি হয় চলাচলের প্রতিবন্ধকতার। তার পিছনে বাধ্য হয়ে জমে দাড়ায় লম্বা মানবের লাইন। ফলে সৃষ্টি হয় ফুটপাথে মানবজটের। ৫ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে ৩০ মিনিট বা তার চেয়েও অধিক সময়ের দরকার পরে। ফুটপাথ জুড়ে রয়েছে হরেক রকমের রং-বেরংয়ের হকারদের অদ্ভুত সমারহ। সরকার যদিও রাস্তার পাশের ফুটপাত কে জনসাধারণের হাটাচলার কাজে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে বানিয়েছেন। 

 

বড় শপিংমল-গুলোর বড় দাম দর থেকে বাঁচতে মানুষ ভীড় জমায় ফুটপাথে থাকা সহজলভ্য পন্য ক্রয় করতে। ফলে গোটা ফুটপাথ জুড়ে থাকে মানবজট। এসকল হকাররা অধিকাংশই বিভিন্ন হামলা মামলার সময় উপস্থিত আসামী। জেল জরিমানার পর শেষ ঠাই হিসেবে ভাইদের হাতে পায়ে ধরে ক্ষুদ্র পরিসরে মালামাল এনে ফুটপাতে বসেন। তারা কাস্টোমারদের কে মিথ্যা নাটকে চোর বানান। পিটান এবং মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়াও মহিলারা সহ্য করেন অবাঞ্চিত, অশালীন, অকথ্য ভাষা যার প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের শুনতে হয় আরো অকথ্য ভাষার ব্যবহার। দুই নম্বর পণ্য, আরেক জনের গায়ে পড়ে ঝগড়া সহ বিভিন্ন ভয়ানক অবৈধ উপায়ে করেন ব্যবসা। অসহ্যকর ভোগান্তিতে ভুগতে হয় আমজনতার। এছাড়াও চোর -ছিনতাইকারীদের আনাগোনাও বেশি থাকে এই মানবজটে। তারা তাদের শিকারের সন্ধান পায় এই মানবজটে। পথচারীর মূল্যবান বস্তু মুক্ত হাতে ছোঁ মেরে ভোঁ দৌড় দেয় শিকারীরা। পথচারী অপলক দৃষ্টি-তে তাকিয়ে থেকে চিৎকার দেয়। যা বাতাসে মিলিয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই পরিস্থিতি ঠান্ডা।

 

 

ফুটপাত দখলে কে বা কারা এই হকারদের স্বাধীনভাবে অবৈধ ব্যবসা করার সুযোগ দিচ্ছে?  এমন প্রশ্নে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হকার বলেন, এখন ভাই কাউরে কিছু দেয়া লাগে না। আমরা স্বাধীন। স্বাধীনভাবে ব্যবসা করি। বিএনপির কিছু নামকরা নেতা চান্দা চাইতে আসে। তারা বলেন তোরা টাকা দে দোকান কেডায় উঠায় ওইটা আমরা দেখমুনে। কয়েকজন দেয় হয়তো, কিন্তু আমরা দেই না। এই কারণে তারা হয়তো একটু রাগ আমাদের উপর। কিন্তু আমার কথা হইলো এহনো যদি টাকা দিয়ে ব্যবসা করা লাগে তাহলে তো আর স্বাধীন হইতে পারলাম না।

 


আপনাদের এই দোকানগুলোর জন্য পথচারীদের হাঁটতে অসুবিধা হয় তারা আপনাদের কারণে ফুটপাতে সৃষ্ট মানবজটকে এড়িয়ে চলার জন্য সড়কে চলে যান তাতে সড়কেও সৃষ্ট হয় যানজটের! এককথায় বলতে গেলে আপনাদের এই দোকানগুলোর জন্য আমজনতার  ভোগান্তি যে চরমে পৌছিয়েছে এটা কি বুঝেন আপনারা? ফুটপাথে আপনাদের এই দোকানগুলো যে অবৈধ সেই ব্যাপারে জানেন আপনারা? হ্যাঁ জানি! জানলেও কিছু করার নাই দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত এই হকারি করেই সংসার করছি। আমাদের উচ্ছেদ করার অভিযান কয়েকমাস আগেও হয়েছে। তখন সেলিম ওসমান আমাদের কাছে ভোটার আইডি কার্ড চেয়েছিলেন। অনেকেই দিতে পারে নি কারণ তারা এই জেলার না। অধিকাংশই বাহিরের। তাদের জন্য আমারাও ব্যবসা করতে পারি না। 

 

 

৫-ই আগস্টের পরে এহন আর কোনো বৈষম্য নাই তাই আবারও সবাই ফুটপাথে দোকান দিয়েছে। আর ভাই পথচারীরা ক্রয় না করলেই তো আর আমগো দরকার পরে না। তারা আমাদের থেকে পণ্য ক্রয় করে বলেই আমরা দোকান দেই। যাগো পেটে আল্লাহ অন্যভাবে ভাত আসার সুযোগ করে দেয়। তারা আমাদের কষ্ট কখনো বুঝবে না। তারা আমগো অবৈধ বলুক বা বৈধ তা আমাদের দেখার সাবজেক্ট না। বৈধ অবৈধ মিলাইয়াই আমগো বাংলাদেশ। আমি আমার সাথে থাকা আরও কয়েকজন আছেন যার চান্দা দেই না। কিন্তু যারা হুমকি ধামকি ভয় পায় তারা এখনো চাঁন্দা দেয়, কিন্তু কারে দেয় এইটা বলতে পারমু না। ঝামেলা আছে।

 

ফুটপাত এ থাকা হকারদের জন্য কোনো সমস্যায় ভুগছেন কি? ফুটপাতে চলাচলকারী কয়েকজন পথিককে এমন প্রশ্ন করলে তারা বলেন, সমস্যা তো দেশের প্রত্যেকটা জায়গাতেই আছে। একটা সমাধান করলে আরেকটা বের হয়। তবে ফুটপাথের জন্য প্রতিদিন আমার দেড়-দুই ঘন্টা চাষাড়া থেকে ডিআইটি আসা যাওয়া করতেই নষ্ট হয়ে যায়। গত দুই সপ্তাহ আগে নূর মসজিদের সামনে থেকে আমার মানিব্যাগ উছাই হয়ে যায়, মানে গায়েব হয়ে যায়। আরেক জন বলেন তার মোবাইল নিয়ে যায় পিছনের পকেট ব্লেড দিয়ে কেটে। কারও খোয়া যায় কানের দুল তো কারও গলার চেইন। সবমিলিয়ে ফুটপাত কমদামে ব্র্যান্ডের কপি জিনিস বিক্রি করে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের আংশিক চাহিদা মেটাতে পারলেও মানবজটের ফলে আমজনতার ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও তারা ফুটপাত উপচে সড়কে চলে যাওয়ায় সেখানেও সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। ফলে সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।

এই বিভাগের আরো খবর