
যুগের চিন্তা রিপোর্ট : বন্দরের নারী ইয়াসমিন আক্তার। জীবিকার তাগিদে চার বছর পূর্বে গৃহকর্মী হিসেবে পাড়ি জমান সৌদি আরব। মাথায় ছিল পরিবারের স্বচ্ছলতা ও সন্তানদের কথা চিন্তা। পরিবার পরিজন ছেড়ে শত কষ্ট হলেও কেবল ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় দূর দেশে যান তিনি। কিন্তু সৌদিতে গৃহকর্তার নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি।
ইয়াসমিন আক্তার জানান, ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবের তাবুক শহরে যান। গৃহকর্তা (মালিক) আব্দুল হাদিস আল আমরি স্থানীয় প্রশাসনের প্রভাবশালী এক কর্মকর্তা। প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন, কেড়ে নেন মোবাইলটিও।
ইয়াসমিন আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে অভিযোগ করে বলেন, ‘দীর্ঘ আড়াই বছর দেশে কথা বলতে দেয়নি, কথা বলতে চাইলে বৈদ্যুতিক শক দিতো। বেতন চাইলে গরম ইস্ত্রিরি দিয়ে ছ্যাঁকা দিতো, নিয়মিত খেতে দিতো না। নির্যাতনে আমার বাম হাতটি ভেঙ্গে গেছে, ঠিক মতো চিকিৎসা পর্যন্ত করায়নি। ভয়ে শত নির্যাতন সহ্য করে কাজ করেছি আড়াই বছর। কিন্তু এই আড়াই বছর একটি বেতনও দেয়নি। বেতন চাইলে গরম ইস্ত্রিরি দিয়ে ছ্যাঁকা দিতো। এমনকি গলা কেটে মরুভূমির মধ্যে পুতে রাখারও হুমকি দিতো।’
দীর্ঘ আড়াই বছর যোগাযোগ রাখতে না পারায় বাংলাদেশে পরিবারের লোকজন ভেবেছিল- মেরে ফেলা হয়েছে ইয়াসমিন আক্তারকে। তার সন্ধান চেয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সৌদি দূতাবাসে আবেদন করে মেয়েরা। এদিকে খবর পেয়ে ইয়াসমিনের উপর বেড়ে যায় নির্যাতনের মাত্রা।
এমন পাশবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায়ে পালিয়ে যান ইয়াসমিন। বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল জেদ্দার সেভ হোমে আশ্রয় নেন। দূতাবাসের লোকজনের সহায়তায় জেদ্দা থেকে থেকে রিয়াদ। বকেয়া বেতন আদায় ও দেশে ফেরার ব্যবস্থাও করছে দূতাবাস।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ উইং মেহেদী হাসান বলেন, ‘গৃহকর্মী ইয়াসমিনের উপর নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় স্থানীয় শ্রম আদালতে মামলা করা হয়। আদালত ইয়াসমিনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। তার বকেয়া ৪২ মাসের বেতন ৪২ হাজার সৌদি রিয়েল, প্রায় ৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আদায় করে ইয়াসমিনকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তাকে খুব শীঘ্রই দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘কোন নারী গৃহকর্মী যেন সৌদি আরবে এসে আমার মতো নির্যাতনের শিকার না হয়। নারী গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে আসার আগে তারা যেন ভেবে চিন্তে কাজ করে।