Logo
Logo
×

জনদুর্ভোগ

মশা আছে, মশা কামড়াবেই

Icon

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০১৯, ০৮:৪১ পিএম

মশা আছে, মশা কামড়াবেই
Swapno

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) :  কম আলোয় বিশেষ করে সূর্য ডোবার পর নগরীর যেকোনো খোলা স্থানে দাঁড়ালেই মাথার ওপর ঝাঁক বেঁধে উড়তে থাকে মশা। সন্ধ্যার পর আরো ভয়ানক রূপ নেয় মশার মিছিল। দিনেও খুব কম থাকে না মশার উৎপাত। ঘরে, বাইরে, কর্মস্থলে সবখানেই মশায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য অর্থ ও জনবল আছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের। নগরবাসীর মুক্তি মিলছে না মশার যন্ত্রণা থেকে। সবচেয়ে  বেশি উদ্বেগ মশাবাহিত রোগ নিয়ে। ডেঙ্গু জ্বর, চিকুনগুনিয়াসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। এদিকে নাসিকের কাউন্সিলরদের কেউ কেউ মশা না মারতে পেরে উল্টো দুষছেন নগরবাসীকেই। 

বেশ কিছু এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের এমন কোনো জায়গা নেই যেটিকে মশকমুক্ত এলাকা বলা যায়। বেশির ভাগ এলাকায়ই ডোবা, নালা ও নির্মাণাধীন ভবনের রিজার্ভারে দেখা যায় ঝাঁকে ঝাঁকে মশা উড়তে। বহুতল ভবনগুলোর মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় আর বিভিন্ন স্থানে আবর্জনার স্তুপে মশার বংশ বৃদ্ধির চিত্র স্পষ্ট। সংশ্লিষ্ট সব এলাকার বাসিন্দারা জানায়, সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ও উদ্যোগের কথা বিভিন্ন সময় শোনা গেলেও বাস্তবে কর্মীদেও দেখা মেলে না। অনেক স্থানেই দেখা গেছে মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। 

নগরীরর দেওভোগের বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের  লোকজন কয়েক দিন আগে মশা মারার ওষুধ দিবে বলে শুনেছি। গত এক সপ্তাহ যাবত দিনেও মশারি টানিয়ে রাখতে হচ্ছে বাসায়। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীসহ কয়েকজন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তাই বাচ্চাদের নিয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে।’

সিদ্ধিরগঞ্জের আঁটি এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী রফিক আহমেদ বলেন, ‘বদ্ধ জলাশয়সহ মশা জন্মানোর আদর্শ অনেক জায়গা রয়েছে এলাকায়। সেগুলোর দিকে নজর দিচ্ছে না সিটি করপোরেশন। মশক নিধন অভিযান কবে  কোথায় তারা করে সেটি বোঝা দায়।’

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কিসমত আলী বলেন, ‘ঋণের সুদের মতো মশার বিস্তার ঘটছে চক্রবৃদ্ধি হারে। সে ক্ষেত্রে অল্পস্বল্প ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এখন কর্মস্থল থেকে শুরু করে চলন্ত গাড়িতেও মশার কামড় বাড়ছে। আর বাসাবাড়িতে তো অস্থির অবস্থা। মশারি, কয়েল কিংবা ইলেকট্রিক ব্যাট দিয়েও মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।’

মশার উপদ্রব নগরবাসীকে অতিষ্ট করে তুলছে এমন অভিযোগ শুনে অনেক কাউন্সিলররা দায়সারা উত্তর দিয়েছেন। মশা উপদ্রব থেকে নগরবাসীকে বাঁচাতে নাসিকের কাউন্সিলরদের সাথে কথা হয় যুগের চিন্তা ২৪’র। 

সেখানে ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুক বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে দুদিন আগেও মশার ঔষুধ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় সামনের সপ্তাহে দেয়া হবে।’

২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আমার এলাকায় মশার ঔষুধ দেয়া হয়েছে।  এ ঔষুধে কাজ হচ্ছে না। আসলে এ এলাকায় ডোবা-নালা বেশি হওয়াতে  মশার পরিমাণ বেশি।  মশার ঔষুধ  দেয়ার জন্য বড় বাজেটের প্রয়োজন।’

৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।’

প্যানেল মেয়র-২ ও ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান বলেন, ‘মশার উৎপাত অনেক বেশি। শুধু আমার এলাকায় নয় সব এলাকাতেই।  এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশন মশা নিধনের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তাই আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগেই  মশার ঔষুধ দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।’

৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলি হোসেন মোল্লা বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে মশার ঔষুধ দেয়া হচ্ছে।’

৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লা বলেন, ‘মশাও অসচেতন, মানুষও অসেচতন। মানুষ যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে। নোংরা ময়লা পরিবেশেই  মশার সৃষ্টি হয়। মশা নিধনে আমাদের কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের রুটিন অনুযায়ী মশার ঔষুধ দেয়া হচ্ছে।

৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর  ইস্রাফিল প্রধান বলেন, ‘মশা নিধনে ঔষুধ দেয়া হচ্ছে।’

১০, ১১, ১২ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত  কাউন্সিলর মিনোয়ারা বেগম বলেন,  ‘মশার ঔষুধ দেয়া হচ্ছে। এখন আরো কয়েক দফা দেয়া হবে।’

১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খোরশেদ বলেন,  ‘শুধু এলাকাবাসী না, আমিও একজন ভুক্তভোগী। এ সময়টাতে মশার উৎপাতটা একটু বেশিই। আগামী সপ্তাহ থেকে কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।’

১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দীন শফি বলেন, ‘মশা আছে, মশা কামড়াবেই। এটার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেই।’

১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর  অসিত বরন বিশ্বাস বলেন,  ‘সিটি করপোরেশনের রুটিন অনুযায়ী  মশা নিধনে ঔষুধ দেয়া হচ্ছে। ড্রেন পরিস্কার করা হচ্ছে। তবুও মশার উপদ্রব রয়েই যাচ্ছে। আমরা সিটি করপোরেশনে বিষয়টি অবগত করবো।’

১৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল আলম বলেন, ‘মশা শুধু আমার এলাকায় না, সব এলাকাতেই আছে।’

১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু বলেন,  ‘মশার ওষুধ পর্যাপ্ত দেয়া হচ্ছে  না। মশার অনুপাতে ওষুধের পরিমাণ অল্প হওয়ায় মশা নিধন সম্ভব হয়ে উঠছে না।’

১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবির হোসাইন বলেন,  ‘সিটি করপোরেশন  থেকে পর্যায়ক্রমে  মশার ওষুধ দেয়া হচ্ছে।’ 

নগরবাসীর বিভিন্ন সমাধানে কাজ করে নাসিকের জনপ্রতিনিধিরা। মশার যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পেতে চায় নগরবাসী। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপ দেখতে চাচ্ছেন তারা। কাউকে দোষারোপ নয়, অতিদ্রুত মশার হাত থেকে নিস্তার পেতে চান নগরবাসী। 
 

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন