Logo
Logo
×

পরিবেশ ও জলবায়ু

মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে মিথেন গ্যাস

Icon

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২১, ০৫:৩৯ পিএম

মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে মিথেন গ্যাস
Swapno

বাংলাদেশে শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের অন্যতম প্রধান হটস্পট হয়ে উঠেছে রাজধানীর মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল। সেখান থেকে প্রতি ঘণ্টায় চার হাজার কেজি মিথেন নির্গত হচ্ছে বলে জানিয়েছে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান জিএইচজিস্যাট। সম্প্রতি প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে উদ্বেগজনক এসব তথ্য।


গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী গ্যাস মিথেন। এটি গত দুই দশকে কার্বন ডাই অক্সাইডের (যাকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়) চেয়েও ৮৪ গুণ বেশি ক্ষতি করেছে বায়ুমণ্ডলের। ঘ্রাণহীন বর্ণহীন এই গ্যাস পৃথিবীতে আসা সূর্যের তাপ ধরে রাখতে বড় ভূমিকা পালন করে, যা বৈশ্বিক তাপমাত্রা আরও দ্রুত বাড়িয়ে দিচ্ছে।


মন্ট্রিল-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান জিএইচজিস্যাটের প্রেসিডেন্ট স্টিফেন জার্মেইন জানিয়েছেন, গত ১৭ এপ্রিল তাদের হুগো স্যাটেলাইটে দেখা গেছে বাংলাদেশের মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল থেকে বিপুল পরিমাণ মিথেন নিঃসরণ হচ্ছে। তাদের ধারণা, এর পরিমাণ হতে পারে ঘণ্টায় প্রায় চার হাজার কেজি।
বলা হচ্ছে, প্রতি ঘণ্টায় ১ লাখ ৯০ হাজার গাড়ি যে পরিমাণ বায়ুদূষণ ঘটায়, তার সমান দূষণ ছড়াচ্ছে মাতুয়াইলের বিশাল এই ময়লার ভাগাড় থেকে।


ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল্লাহ সিদ্দিক ভুঁইয়া ব্লুমবার্গকে জানান, ১৮১ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিলে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার টন বর্জ্য ফেলা হয়। তরল বর্জ্য ও গ্রিনহাউস গ্যাস ব্যবস্থাপনায় এটি জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থ সাহায্য পেয়েছে। তবে সেখানে ঠিক কী পরিমাণ মিথেন গ্যাস তৈরি হচ্ছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
চলতি বছর বিশ্বের মধ্যে মিথেন নিঃসরণের অন্যতম হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশ। প্যারিস-ভিত্তিক বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কায়রস এসএস চলতি মাসের শুরুর দিকে জানিয়েছিল, বিশ্বের শীর্ষ ১২টি মিথেন নিঃসরণের হার শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশের আকাশে।

 

জিএইচএসস্যাটের মতে, এগুলো তাদের দেখা এযাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী নিঃসরণ। বাংলাদেশের আকাশে ঘনীভূত মিথেনের চিত্র ধরা পড়েছে ব্লুফিল্ড টেকনোলজিস নামে আরেক পর্যবেক্ষকের নজরেও। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ইয়োতাম এরিয়েল ব্লুমবার্গকে বলেছিলেন, তাদের বিশ্লেষণে বিশ্বের সর্বোচ্চ মিথেন নিঃসরণের কয়েকটি ঘটনা বাংলাদেশে ঘটছে, যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সহজেই শনাক্ত করা যায়। বাংলাদেশে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের উৎস শনাক্তে অনেকদিন ধরেই কাজ করছে জিএইচজিস্যাট। তাদের সেই প্রচেষ্টায় অবশেষে কিছুটা সাফল্য দেখা দিয়েছে।


প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনও নির্দিষ্ট উৎস থেকে [গ্রিনহাউস গ্যাস] নিঃসরণ চিহ্নিত করতে পেরেছি। এটি (মাতুয়াইল) বড় উৎস ঠিকই, তবে তা [ঢাকা] শহরের ওপর শনাক্ত বৃহৎ, স্থায়ী এবং বিস্তৃত নিঃসরণকে ব্যাখ্যা করার জন্য যথেষ্ট নয়। সেখানকার পরিস্থিতি এখনও রহস্যাবৃত এবং আমরা এই অঞ্চল পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখব।


মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল থেকে ব্যাপক হারে মিথেন নিঃসরণের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছিল ব্লুমবার্গ। মন্ত্রণালয় এর জবাবে বলেছে, তারা এ বিষয়ে অবগত এবং এই সমস্যা নিরুপণে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক ইমেইলে পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলেছে, মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল থেকে মিথেন নির্গমন মূল্যায়ন ও তা প্রশমন ব্যবস্থার পরামর্শ দিতে ওই কমিটিকে নিযুক্ত করা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যেই তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা।


মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ২০১৩ সালের স্বল্পকালীন জলবায়ু দূষণ-হ্রাস পরিকল্পনায় গৃহীত পদক্ষেপে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মিথেন নিঃসরণ ১৭ থেকে ২৪ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ২৫ থেকে ৩৬ শতাংশ কমতে পারে। এছাড়া, গ্যাস পাইপলাইন নেটওয়ার্ক থেকে লিকের মাধ্যমে নিঃসরণ কমাতে বাংলাদেশ ড্যানিশদের সহায়তাও নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।


গ্লোবাল মিথেন ইনিশিয়েটিভের তথ্যমতে, গৃহপালিত পশু, তেল-গ্যাস শিল্প থেকে লিক হওয়া, ময়লার ভাঁগাড় ও কয়লার খনি হচ্ছে মিথেন নিঃসরণের মনুষ্যসৃষ্ট কয়েকটি স্বাভাবিক মাধ্যম। এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ডের হিসাবে, বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অন্তত এক-চতুর্থাংশের জন্য মানবসৃষ্ট মিথেন নিঃসরণ দায়ী।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন