মা ও ভাই হারানো মাহিমের কান্নার যেন শেষ নেই

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২২, ০৭:৪২ পিএম

অসুস্থ শ্বশুর আব্দুল রবকে (৫৫) নারায়ণগঞ্জ শহরে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছিলেন মুন্সিগঞ্জ জেলার রমজানবেগ এলাকার আরিফা আক্তার (২৫)। সঙ্গে ছিল দেড় বছরের শিশু ছেলে সাফায়েত। চিকিৎসা শেষে দুপুরের দিকে তাদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, তাদের আর বাড়ি ফেরা হয়নি।
রবিবার (২০ মার্চ) দুপুর ২টায় সদর উপজেলার আল-আমিন নগর এলাকায় সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন এমভি রূপসী-৯ নামে একটি পণ্যবাহী কার্গোর ধাক্কায় অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহীসহ মুন্সিগঞ্জগামী এম এম আফছারউদ্দিন নামে লঞ্চডুবির ঘটনায় মৃত্যু হয় আরিফা ও শিশু সাফায়েতের। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান আব্দুল রব। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
বিকেল থেকে শীতলক্ষ্যা নদীর এপাড়-ওপাড় করে পাগলের মত প্রিয়জনদের খুঁজে বেড়িয়েছেন আরিফার স্বামী দ্বীন ইসলাম। অবশেষে সন্ধ্যায় প্রিয়তমা স্ত্রী ও দেড় বছরের ছেলের খোঁজ পেয়েছেন তিনি। তবে তারা আর জীবিত নেই। প্রিয়মুখগুলোর নিথর দেহ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন দিনমজুর দ্বীন ইসলাম। ছুটে যান শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পাশে অপেক্ষারত তার ছেলে মাহিম (১২) ও মা রাশিয়া বেগমের কাছে।
এ সংবাদে কান্নার বাঁধ ভাঙ্গে তাদেরও। ছোট মাহিমের এ কান্না যেন শেষ হবার নয়। ছেলের কান্নায় আরও কাতর হয়ে পরেন দিন ইসলাম। শেষ সম্বল ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে অঝরে কাঁদেন তিনি। আর্তনাদ করে বলেন, 'বাপ তুই কান্দিস না, আমি আছি তো। বাপ তুই কান্দিস না। আর কাইন্দা কি হইবো তোর মায়, তোর ভাইয়ে তো আর ফিরা আইবো না। তুই আর কান্দিস না।'
ষষ্ঠ শ্রেণীর মাহিম কাঁদতে কাঁদতে বলে, 'আমার ভাইরে মাদ্রাসায় পড়ামু কইছিলাম। ভাই, ভাই তুই কই গেলি। কে আমারে আদর করবো ভাই! মা, ওমা। আমারে রাইখা কই গেলা মা?' উল্লেখ্য, লঞ্চডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।