রোববার   ০৬ অক্টোবর ২০২৪   আশ্বিন ২১ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে

এন. হুসেইন রনী

প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২২  

 


 
'যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বাংলাদেশের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের নাগরিকের হৃদয়ে তাঁদের অবদান থাকবে অমলিন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যোগ্য সম্মানের জায়গায় আসীন করেছেন জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা”, যুগের চিন্তা’র আয়োজনে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালী মাহমুদ খান।

 

 

এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, নিরস্ত্র বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তি ছিল জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণ - 'তোমাদের যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো'। এরপর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানগণ, নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে পাকিস্তানী বর্বর হানাদার ও এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করি।' তিনি বলেন, “আমি ভারতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অধীনে স্পেশাল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। আমার গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন, নুরু মিয়া বাচ্চু এবং মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে আাম সোনারগাঁ’র মোগড়াপাড়া থেকে সহযোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি।

 

 

আমরা মুজিব বাহিনী (বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সেস সংক্ষেপে বিএলএফ নামে পরিচিত) এর যোদ্ধা। আমরা কখনো পদ-পদবীর জন্য যুদ্ধ করিনি। আমরা যুদ্ধ করেছি স্বাধীনতার বিজয় ছিনিয়ে আনার জন্য, দেশ মাতৃ’কে রক্ষার জন্য, একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য। আমাদের একটাই পরিচয়, আমরা মুজিব বাহিনী।

 

 

তিনি বলেন, আমার গ্রুপ কমান্ডার মরহুম নুরু মিয়া বাচ্চু এবং মোবারক হোসেনের নির্দেশে সফলভাবে ভাটের চর ব্রীজ এবং লাঙ্গলবন্দ ব্রীজ ধ্বংস করতে সক্ষম হই। এই ব্রীজ দু‘টি ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট। আমদের টিম ব্রীজ দু’টি ধ্বংস করে দেয়ায়, সেসময় হানাদার বাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে এবং তাদেরর সদ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। এই আক্রমণ ছাড়াও মুজিব বাহিনীর আরো কিছু উল্লেখযোগ্য সফল অপারেশনের ফলে সেসময় হানাদার এবং তাদের দোসররা সর্বদা মুজিব বাহিনীর ভয়ে তটস্থ থাকতো।

 

 

এসময় তিনি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন ৯নং বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীর প্রতীক গিয়াস উদ্দিন আহমেদকে। তিনি বলেন, বীর প্রতীক গিয়াস উদ্দিন কমান্ডার নারায়ণগঞ্জ জেলার একজন গর্বিত সূর্য সন্তান ছিলেন। এছাড়াও তিনি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন রণাঙ্গনের বীর সেনানী, জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী’র প্রতি। তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী সুখে-দু:খে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে ছিলেন, আছেন, আশা করি সর্বদা থাকবেন।  

 

 

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে আমি ও আমরা সকল মুক্তিযোদ্ধরা কৃতজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি এবং সফলভাবে দেশ শক্রমুক্ত করি। আজ আমরা স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের নাগরিক, তাই একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি গর্বিত।

 

 

এছাড়াও আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর নিকট চিরকৃতজ্ঞ, তিনি আমাদের জন্য সম্মানী ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং সম্মানের স্থানে আসীন করেছেন। আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা’র  সদা সর্বদা সুস্থতা কামনা করছি।

 

 

পরিশেষে রণাঙ্গনের এই বীর সেনানী বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি এ দেশের কৃতজ্ঞতার শেষ নাই। নব উদ্যোমে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি লালন ও ধারণ করতে হবে। ১৯৭১ সালে লাখো শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধারা দেশ স্বাধীন না করলে আমরা কেউই আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক হতে পারতাম না, তোমরা যারা বড় বড় পদে আছো; তারা আজ এই পদে থাকতে পারতে না।” হ্যাঁ আমি মনে করি, “এত বড় জয়ের পরও মুক্তিযোদ্ধাদের কর্তব্য শেষ হয়ে যায়নি। আমাদের দায়িত্ব এখন নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে ২০৪১ সালের মাঝে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার নেতৃত্ব দেয়া। মনে রাখবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ যতদিন থাকবে ততদিন এ দেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না”।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর