মেয়রের পদ থেকে সরানো হলো সেলিনা হায়াৎ আইভীকে

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৩০ পিএম

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করা হয়েছে। তাদের জায়গায় বসানো হচ্ছে প্রশাসক, তারাই দায়িত্ব পালন ও দেখভাল করবেন সিটি করপোরেশনগুলোর। সোমবার (১৯ আগস্ট) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে প্রাশসক হিসেবে (অতিরিক্ত সচিব) জনাব এ.এইচ এম কামরুজ্জামানকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এর আওতায় তাদের অপসারণ করা হয়েছে। এরআগে দেশের সব (৪৯৩টি) উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ৩২৩ পৌরসভার চেয়ারম্যান ও ৬০ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করে সরকার।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা
, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুন, কুমিল্লা সিটির মেয়র তাহসীন বাহারকে অপসারণ করা হয়েছে। একই দিনে বিকালে অশ্রুসিক্ত চোখে মেয়র আইভীকে বিদায় জানায় সিটি কর্পোরশেনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
এর আগে গত শুক্রবার ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ ’, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ ’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন করে অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। পরে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়।
ওই সংশোধনীর ফলে বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে সরকার জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে। একইভাবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করতে পারবে। একই সঙ্গে এগুলোতে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে সরকার।
ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের অধিকাংশই আত্মগোপনে চলে গেছেন। জেলা ও উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু করে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার প্রায় সব শীর্ষ পদই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দখলে ছিল।
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। পরে বিকল্প ব্যবস্থা করে সরকার। যেমন উপজেলা চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকলে দায়িত্ব পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। এখন অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন সংশোধন করে মেয়র-চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ তৈরি করছে সরকার।
প্রসঙ্গত: ২০১১ সালের ৫ মে বন্দরের কদমরসুল, সিদ্ধিরগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। ওই বছরের ৩০ অক্টোবরের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে আওয়ামীলীগ নেত্রী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির সাখাওয়াত হোসেন খানকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন ডা. সেলিনা হায়াত আইভী।
২০২২ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত তৈমুর আল খন্দকারকে পরাজিত করে তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন আইভী। আওয়ামীলীগের ব্যানারে মেয়র নির্বাচিত হলেও আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে জোরালো ভুমিকায় তাকে দেখা যায়নি গত ১৫ বছরে।
তবে ২২ সালের নির্বাচনের আগে তিনি তার এক বক্তব্যে বলেন ‘জয়বালা স্লোগান দিয়ে মরতে চাই। এ নিয়ে দলের ভেতর ও প্রতিপক্ষ শিবিরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। সবশেষ ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর ১৫ আগস্ট শহরের দুই নং রেল গেট এলাকায় গুটিকয়েক নেতাকর্মী নিয়ে শেখ মজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মেয়র আইভী। ক’ঘন্টা পর ওই প্রতিকৃতি ভেঙ্গে ফেলে র্দুবৃত্তরা।